ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইউএসএ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

বোস্টনে ভোট ক্যাম্পেইনের এক উপভোগ্য সন্ধ্যা

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
বোস্টনে ভোট ক্যাম্পেইনের এক উপভোগ্য সন্ধ্যা

বোস্টন (ম্যাসাচুসেটস) থেকে: বোস্টনের রিভিয়ার কাউন্টির একটি সড়ক মোড়ে জনা বিশেক ট্রাম্প সমর্থক হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে। ‘ট্রাম্প-পেন্স মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’।

যুক্তরাষ্ট্র সফরের চত‍ুর্থ দিনে এসে এমন একটি দৃশ্য প্রথম চোখে পড়লো। এরআগে নিউইয়র্কের এখানে-ওখানে ঘুরে তিনদিনে একটি বারের জন্যও এমন দৃশ্য মেলেনি।

অনেকেই বলছিলেন, আরে এরা যেখানে-সেখানে পোস্টার-প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়ায় নাকি? যুক্তরাষ্ট্রে ভোট আসলে মিডিয়াতে ছাড়া টের পাওয়ার উপায় নেই। কিন্ত তাদের সেই বক্তব্যকে ভুল প্রমাণিত করে বোস্টনের রিভিয়ার কাউন্টির বিচ পার্কওয়ের কাছের এই দৃশ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করলো বৈকি।

পাশের সিটে গাড়ি চালাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের এক সময়ের সম্ভাবনাময় ফটো সাংবাদিক জুবায়ের। সংবাদকর্মীকে বলতে হলো না, নিজেই দ্রুত গাড়ি থামালেন। বললেন, ‘আপনারা এগিয়ে যান, আমি গাড়ি পার্ক করে আসি। ’ সঙ্গে ছিলেন একুশে টেলিভিশনের চট্টগ্রামের রেসিডেন্ট এডিটর রফিকুল বাহার।

আমরা দুজন এগিয়ে যেতেই শুনতে পেলাম, কেবল যে প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, তা নয়, লোকগুলো স্লোগানও দিচ্ছিলেন। সে দলে তরুণ-যুবক যেমন ছিলেন, মধ্যবয়ষ্ক থেকে বেশ বয়োবৃদ্ধ মানুষও দেখা গেলো। তারা সবাই মিলে বিচ পার্কওয়ের এই গোল চক্করটিকে ভোটময় করে তুলেছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো জায়গাটি জমে উঠলো।

বাংলাদেশের সাংবাদিক পৃথিবীর অপর প্রান্ত থেকে ছুটে গেছেন তাদের দেশের নির্বাচনের খবর কাভার করতে, সে কথা শুনে বেশ বিস্মিত হলেন এই ভোটকর্মীরা। জন ডার্থি নামের একজন আগ্রহ ভরে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তোমাদের দেশের মানুষেরও আগ্রহ আছে?’

বললাম, আছে। ঐতিহাসিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের রাজনীতির মধ্যে একটা অম্ল-মধুর সম্পর্ক রয়েছে। আর তোমাদের দেশে কোন দল থেকে প্রেসিডেন্ট হচ্ছে রিপাবলিকান না কি ডেমোক্র্যাট, তা গভীর আগ্রহের সঙ্গেই বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণ করে। কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও রাজনীতি এবং অর্থনীতির বিষয় জড়িত।

এবার একটু যেন সম্পর্কটি ধরতে পারলেন এই শেতাঙ্গ আমেরিকান। বললেন, অর্থনীতি একটা বড় বিষয়। এসব কথা যখন চলছিলো ততক্ষণে কিন্ত গোল চক্করের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা এই জনা-বিশেক ভোট কর্মীই পুরো এলাকাটি জমিয়ে তুলেছন।

রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে যারা ট্রাম্প সমর্থক ছ‍ুটছিলেন, তারা কনকনে ঠান্ডায়ও গ্লাস খুলে আঙুল বাড়িয়ে থামস আপ দেখাচ্ছিলেন। দুই একজন ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ বলে স্লোগানও দিচ্ছিলেন গাড়ির ভেতর থেকে।

কেউ-কেউ যাচ্ছিলেন হিলারির পক্ষের সমর্থক। তারা গাড়ির কাচ নামিয়ে 'হিলারি..হিলারি..' করতে-করতে ছুটছিলেন। আর এখানে প্লাকার্ডধারীদের দুই-একজন তাদের ধুয়ো দিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না, খিস্তি-খেউড়ও করছিলেন, স্বভাব-সুলভ আমেরিকান স্টাইলে।

ডার্থির সঙ্গে কথা এগুচ্ছিলো। তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন কেন ট্রাম্পেরই হওয়া উচিত এবারের প্রেসিডেন্ট। তার খাড়া আর কড়া যুক্তি, ‘হিলারি মিথ্য‍ুক, তাই কোনো মিথ্যুকের প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত নয়। ’

আর ট্রাম্প যে এতো আজেবাজে কথা, আর কাজ করে যাচ্ছেন, তার কি উচিত প্রেসিডেন্ট হওয়া? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই যুবক বললেন, ‘আরে আমার দাদার বয়স ৭০ বছর, ওকেও তো মেয়েদের নিয়ে কত কথা বলতে শুনি। আসলে বুড়ো বয়সে মেয়েদের নিয়ে এমন দু'চার কথা কে না বলে, এতে কিছু এসে যায় না। ’

অদ্ভুত কট্টর যুক্তি। তবে এখানেই শেষ নয়, এই ট্রাম্প সমর্থক এও মনে করেন, ‘হিলারি ক্ষমতায় এলে এক বছরের মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ লাগিয়ে দেবেন। আর তার সূত্র ধরে বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাবে। আর ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে আমেরিকা আবারও মহান হবে।

এই কথা বলতে-বলতে অন্যদের 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' স্লোগানে সামিল হলেন ডার্থিও। বুধবারের (২৬ অক্টোবর) এই ভোট ক্যাম্পেইনের সন্ধ্যাটি উপভোগ্য হলো বটে।

আরও পড়ুন..

** বোস্টনে মিললো ভোটের বিলবোর্ড
*** হিলারির জন্য প্রচারে আমেরিকান মুসলিমদের র‌্যালি রোববার
*** জ্যাকসন হাইটসের আড্ডায় ট্রাম্প আতঙ্ক​
***বহু জাতির দেশে বহুমুখী ভোট, বহু তার সমীকরণ
*** আবহাওয়া ঠাণ্ডা, ভোটের হাওয়া কী গরম!​
***অদ্ভুত এক নির্বাচনের দেশে!
***
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাভার করতে বাংলানিউজ’র মেনন যুক্তরাষ্ট্রে

বাংলাদেশ সময় ১৫০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এমএমকে/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।