চুয়াডাঙ্গা: শীতের সবজি মাঠ থেকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে বেশ কদিন আগে থেকেই। বাহারি সব সবজিতে সেজে উঠছে গ্রাম থেকে শহরের হাট-বাজার।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর-কলাবাড়ি গ্রামের সবজির মাঠ ঘুরে দেখা যায়, পূর্ব আকাশে ভোরের আলো ভেদ করেছে মাত্র। কুয়াশা মোড়ানো চারপাশে কৃষকদের চরম ব্যস্ততা। পরম যত্নে দুই হাতে ফলানো শীতের সবজি মাঠ থেকে তুলছেন তারা। মাঠের সবজিতে ভর্তি হচ্ছে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। তার আগেই মাঠের সব সবজি একটি নির্ধারিত দামে কিনে নেন ফড়িয়ারা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেসব সবজি চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এছাড়া চাষিরাও নিজেদের ফলানো সবজি নিজেরাই তোলেন স্থানীয় হাটে। সেখানে দামদরে হাত বদল হয় সবজির।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক মণ ফুলকপি ক্ষেত থেকেই পাইকারি বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকায়। সেই হিসাবে এক কেজির দাম পড়ে সাড়ে ৬ টাকা থেকে সাড়ে ৭ টাকা। মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে স্থানীয় পাইকার বাজারে সে ফুলকপির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২০-২২ টাকা কেজিতে। এবার ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ওই ফুলকপি বিক্রি হয় ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে।
টানা পরিশ্রম ও উৎপাদন খরচকে সঙ্গী করে লাভের আশায় শীতকালীন সবজি চাষে নামেন প্রান্তিক চাষিরা। কিন্তু ফলন ওঠার পর ভেঙে যায় সে আশা। মাঠ থেকে হাটে উঠলে চোখের পলকেই বদলে যায় সবজির দাম। চাষিরা বলছেন, শীতের সময়কে টার্গেট করে বিঘার পর বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষ করা হয়। জমিতে বেড তৈরির পর দুই বেলা হাড়ভাঙা পরিশ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত এসব সবজি মাঠ থেকেই কিনে নেন ব্যাপারি ও ফড়িয়ারা। তারপর সে সবজি চলে যায় বিভিন্ন স্থানে।
কলাবাড়ি গ্রামের সবজি চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, এত খেটেও দাম পাই না আমরা। বাধ্য হয়েই মাঠের সবজি ব্যাপারি হাতে তুলে দিতে হয়। আমরা চাষি মানুষ, কিভাবে এসব সবজি গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠাবো তাই জানি না। দাম কম হলেও যাতে সবজি ক্ষেতে নষ্ট না হয় সেজন্য বিক্রি করে দেই।
কৃষক রমজান আলী জানান, এত কষ্ট করে ফসল ফলিয়েও দাম পাওয়া যায় না। লাভের অংশ ভোগ করে অন্যরা। যত খরচ পরিশ্রম চাষিদের। এক বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদ করতে খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। আর তা বিক্রি হয় মাত্র ১২-১৪ হাজার টাকায়। এতে শুধু খরচটাই ওঠে, লাভ হয় না একটুও।
ঢাকার কাওরান বাজার থেকে আসা ব্যাপারি শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার বাঁধা কপিতে পোকার আক্রমণ হওয়ায় উৎপাদন কম হয়েছে। তাই কেজিতে ৫-৭ টাকা কমবেশী হচ্ছে। কিন্তু ফুলকপির হিসেবে তেমন কমবেশী হচ্ছে না। তবে এখান থেকে যে দামে কেনা হয় তা দূরের বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে গেলে যানবহন খরচ অনেক পড়ে যায়। এজন্য দামের তারতম্য দেখা যায়।
স্থানীয় ভালাইপুরে বাজারের আরেক ব্যাপারী আব্দুস সামাদ জানান, মণপ্রতি কেনার পর ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, শিম, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাবে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যায়। তাই দুরে সবজি পাঠানোর পর দামও বেড়ে যায়।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম জানান, চুয়াডাঙ্গার সবজিতে বিশেষ খ্যাতি থাকায় এসব সবজি জেলার বাইরে পাঠানো হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৩০ শতাংশ সবজি দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তাই এসব সবজি চলে যায় বিভিন্ন প্রান্তে। এতে করে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে অনেকটাই। কোটি কোটি টাকার সবজি বেচাকেনা হয় এ জেলায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, চুয়াডাঙ্গার মাটি ও আবহাওয়া শীতকালীন সবজি চাষে উপযোগী। এজন্য শীতকালীন সবজি উৎপাদনে তেমন কোন ক্ষতি হয় না। উৎপাদনও ভালো হয় এবং তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২২
এসএম