ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ধানের চেয়ে লাভজনক ‘ভুট্টা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
ধানের চেয়ে লাভজনক ‘ভুট্টা’ মৌলভীবাজারে দিগন্তবিস্তৃত ভুট্টার ক্ষেত। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: ভুট্টা এক প্রকারের উৎকৃষ্ট খাদ্যশস্য। তবে অপ্রচলিত।

তেমন একটা জনপ্রিয় নয়। কৃষি বিশেষজ্ঞ বলছেন, ধান থেকে তুলনামূলক লাভজনক ভুট্টা। কিন্তু এই তথ্যটি সাধারণ কৃষকদের মাঝে তেমন প্রভাবিত নয়। ফলে সাধারণ কৃষকরা ভুট্টার চেয়ে ধানকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
 
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার দিগন্তজোড়া মাঠ ভুট্টার সবুজ পাতায় পাতায় ছেয়ে গেছে। জমিতে জমিতে শীতের হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে ভুট্টার সবুজ পাতা। জমির মাটি উর্বর ও চাষ উপযোগী হওয়ার পাশাপশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে ভালো ফলন হয়েছে।

ভুট্টা গাছ গরুর খাদ্য হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে সাইলেস। তবে অনেকেই ভুট্টা মাড়াই নিয়ে রয়েছেন শঙ্কায়।  

জানা গেছে, পশু খাদ্য তৈরিতে ভুট্টার ব্যবহার বাড়ে যাওয়ায় বছরজুড়ে ভুট্টার ভালো চাহিদা থাকে। ফলে কৃষকেরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ ও শ্রম কম দিতে হয়, তুলনামূলক লাভ হয় বেশি।

আর এ কারণে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়লেও ভুট্টা মাড়াই নিয়ে অনেকেই শঙ্কায় রয়েছেন। কারণ জুড়ী উপজেলায় ভুট্টার চাষ ভালো হলেও মাড়াইয়ের নেই কোনো যন্ত্র। যারাই চাষ করছেন, তারা কঠোর পরিশ্রমে হাতে মাড়াইয়ের কাজ করতে হয়। ফলে জুড়ীতে ভুট্টা চাষের সম্ভাবনা ও কৃষকের আগ্রহ থাকলেও আবাদ বাড়ছে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যম সিলেট অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ভুট্টা মাড়াইয়ের মেশিন আনা হবে। তবে মেশিন কবে আনা হবে, এ ব্যাপরে কৃষিবিদরা নির্দিষ্ট কোনো সময় বলতে পারছেন না।

কৃষি উদ্যোক্তা মো. আলমগীর বলেন, শিল্পপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠুর অর্থায়নে এ বছর হাকালুকি হাওরে ২শ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। সময়মতো কাজের লোক না পাওয়ায় মেশিন দিয়ে বীজ বপন করতে হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে ভুট্টা কাটা শুরু হয়েছে। কর্তনকৃত ভুট্টা মেশিন দিয়ে কেটে গরুর খাবারের জন্য সাইলেস তৈরি করা হচ্ছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো সার, কীটনাশক ও সেচ দেওয়ার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। ৫০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন। আলমগীরের চাষ পদ্ধতি দেখে আরও অনেকেই এ বছর ভুট্টা চাষ করছেন।  

চাষিরা জানান, অন্যান্য চাষাবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ ও শ্রম কম দিতে হয়, লাভও বেশি হয়।

মাড়াইয়ের মেশিন না থাকায় হাতে মাড়াই দিতে হয়। ভুট্টা হাতে মাড়াই দেওয়া খুবই কষ্টদায়ক।  

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবহাওয়ার অনুকূলে থাকায় ২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখন ভুট্টা ব্যবহার বাড়ছে। এই ভুট্টা মূলত ফিড হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। যেমন- মাছের ফিড, মুরগির ফিড এবং গবাদিপশুর ফিড প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। জুড়ীতে ভুট্টা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। ভুট্টা চাষে কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে মাড়াই মেশিন এলে চাষিরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে। আমারা মাড়াই মেশিনের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন বিভাগে যোগাযোগ করেছি। ’

ভুট্টা খাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খাওয়ার জন্য আমরা বলি অর্ধেক ভুট্টা আর অর্ধেক গম মিশ্রণ করে রুটি হিসেবে খাওয়া যায়। অর্ধেক গম মিশ্রণ না করা হলে রুটি বানাতে গেলে রুটিটা ফেটে যায়। এখানে পুষ্টিও বেশি পাওয়া যায়। আর কিছু আছে ভুট্টা গাছটা কেটে গবাদিপশু গরুকে খাওয়ানো হয়। ভুট্টা কচি অবস্থায় একটু সিদ্ধ করে খাওয়া যায়। কেউ কেউ আবার পুড়িয়েও খেয়ে থাকেন। ’
 
‘ভুট্টা পরিপূর্ণ হতে প্রায় চার বা সাড়ে চার মাস সময় লেগে যায়। তবে গবাদিপুশদের খাওয়া হলে ভুট্টা সময় কম লাগে। গাছটা কিছু বড় হলেই তা কেটে গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও রয়েছে। নানান জাতের খাবারের সাথে ভুট্টা গাছের খাবারও তালিকাভুক্ত রয়েছে’ বলে জানান এ কর্মকর্তা।
 
‘ধান থেকে লাভজনক ভুট্টা’ শীর্ষক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলার শুধু জুড়ীতেই না, কমবেশি সব উপজেলাতেই ভুট্টা চাষ হচ্ছে। আমাদের জুড়ী উপজেলার ২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে ভালোভাবে ধৈর্য নিয়ে যত্ন নিয়ে করলে ১ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৯ থেকে ১০ টন ভুট্টা উৎপাদন করা সম্ভব। গড়ে ২০ টাকা ভুট্টার কেজি হলে ১ টন জমি থেকেই আসবে প্রায় ২০ হাজার টাকার ভুট্টা। ধান থেকে অনেকটা লাভজনক ভুট্টা। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।