ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

পানির অভাবে বোরো হয় না, পানির ভয়ে হয় না রবিশস্য

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
পানির অভাবে বোরো হয় না, পানির ভয়ে হয় না রবিশস্য

লক্ষ্মীপুর: খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে দেশের সব আবাদযোগ্য জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

কিন্তু লক্ষ্মীপুরের একটি অঞ্চলে আবাদযোগ্য প্রায় এক হাজার একর জমি পতিত পড়ে আছে।

শুধুমাত্র পানির কারণে কৃষকরা এ জমিতে শস্য আবাদ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশাল এ জমির দিকে নজর দিচ্ছে না। ফলে ওই এলাকায় বাড়ানো যাচ্ছে না খাদ্যশস্য উৎপাদন।  

আবাদযোগ্য এসব জমির অবস্থান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের পঅশ্চিম কাঁঠালী এবং উত্তর চিলাদী গ্রামে।  

কৃষকরা জানান, এ দুই গ্রামের চার থেকে পাঁচটি ক্ষেতে অন্তত এক হাজার একরের বেশি আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এসব জমিতে শুধুমাত্র আমন ধানের আবাদ হয়। বাকি দুই মৌসুমে কোনো ফসল আবাদ করা যাচ্ছে না।  

গ্রাম দুটিতে গিয়ে দেখা যায়, কুশাখালীর পশ্চিম কাঁঠালী গ্রামের পশ্চিমে প্রায় ৫০০ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে সামান্য কিছু জমিতে সয়াবিন বা ডাল জাতীয় শস্য আবাদ করা হয়েছে। তবে সিংহভাগ জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আবাদ না হওয়ায় জমির মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়।  

এখানকার ক্ষেতের সয়াবিন চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, এ জমিগুলোতে পানি সেচ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার বৃষ্টি হলে পানি নামারও ব্যবস্থা থাকে না। তাই বেশিরভাগ জমি আবাদ করা হয়নি।  

তিনি বলেন, এ ক্ষেতে আমার তিন একর জমি রয়েছে। কিছু জমিতে সয়াবিনের চাষ করেছি। তবে ভয়ে আছি, অসময়ে বৃষ্টি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ক্ষেতের পূর্ব পাশ দিয়ে একটি খাল আছে, সেখানে পর্যাপ্ত পানি নেই। তবে কোনো কোনো কৃষক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেচ দিয়ে খালপাড়ের কিছু জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন।  

একই এলাকার কৃষক নুর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার বিস্তীর্ণ জমি চলতি মৌসুমে অনাবাদি পড়ে আছে। জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি, এসব জমিতে এক মৌসুমে ফসল হয়। বাকি মৌসুমে আবাদ হয় না। এক দিকে জমিগুলোতে পানি সেচ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার বৃষ্টি হলে পানি আটকে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে অনেক ক্ষেত মালিক জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দেন। এতে কিছু জমি উঁচু থাকে, আবার কিছু জমি নিচু হয়ে যায়। আমার ৭৫ শতাংশ কৃষিজমি আছে। গেল মৌসুমে আমি সয়াবিনের আবাদ করেছি, অসময়ের বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এবার সয়াবিনের আবাদ করিনি। সামান্য কিছু জমিতে ডালের আবাদ করেছি। তবে ফলন ঘরে তোলা নিয়ে ভয় আছে। আমার মতো সব কৃষক ফসলহানির আশঙ্কায় থাকেন।  

তিনি জানান, দিঘলী থেকে কাঁঠালী পোলের গোড়া পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশ দিয়ে 'গবি উল্যা' খাল রয়েছে। এটি ওয়াপদা খালের সংযোগ খাল। খালটি দীর্ঘ সময় ধরে খনন না করার কারণে বড়খাল থেকে পানি আসতে পারে না। আবার বর্ষা মৌসুমে খাল দিয়ে সহজে পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না। এ খালটি আমাদের এলাকার ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।  

সেচ প্রকল্প স্থাপনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের কারণে আমাদের সরকার শস্য উৎপাদনের জন্য সব জমি আবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমরা জমিতে ধান বা রবিশস্য চাষাবাদ করতে পারছি না। তিন থেকে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি খনন করে সরকারিভাবে এখানে সেচ প্রকল্প স্থাপন করলে এক থেকে দেড় হাজার একর জমি বোরো আবাদের আওতায় আসবে। সরকার যাতে এ জমিগুলোর দিকে নজর দেয়, আমি সে দাবি জানাচ্ছি।  

একই কথা জানালেন স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় একশ একর কৃষি জমি আছে। এতে শুধুমাত্র আমন ধানের চাষ হয়। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের প্রায় সবখানে আমন ধানের পর সবজি, সয়াবিন, ডাল বা বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এলাকার জমিগুলোতে পানির অভাবে বোরো ধানের আবাদ করা যাচ্ছে না। আবার বৃষ্টি হলে পানি না নামার কারণে অসময়ে ক্ষেতে পানি জমে থাকে। এ কারণে সয়াবিন বা রবিশস্যের আবাদও করা যাচ্ছে না। বিএডিসি এবং কৃষি বিভাগ বিস্তীর্ণ এ জমিগুলোর দিকে নজর দিলে এ এলাকার কৃষকেরা সোনালী ফসল উৎপাদন করতে পারবেন।  

একই এলাকার কৃষক নুর আলম বাংলানিউজকে বলেন, বেশিভাগ জমি অনাবাদি পড়ে আছে। মোট জমির ১০ থেকে ২০ ভাগ জমিতে সয়াবিন বা ডালের আবাদ করা হলেও বিস্তীর্ণ জমি খালি পড়ে আছে। আবার ফাঁকা জমিতে গরু-ছাগল চরানোর সময় সেগুলো আশপাশের ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে ফেলে। তাই রবি মৌসুমে কৃষকরা শস্য আবাদে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন।  

অনাবাদি জমির বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) লক্ষ্মীপুরের (সদর-রামগঞ্জ ইউনিট) উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, যে এলাকার কৃষকরা সেচ প্রকল্প নিতে আগ্রহী হন, সেসব এলাকায় বিএডিসির পক্ষ থেকে খাল খনন এবং সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তবে কুশাখালীর ওই অঞ্চল থেকে কোনো কৃষক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এলাকা দুটি পরিদর্শন করে আগামী বোরো মৌসুমে অগ্রধিকার ভিত্তিতে সেখানে সেচ প্রকল্প দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।  

জেলার একটি এলাকায় বিস্তীর্ণ আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি থাকার বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।