ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

ধান কাটতে অন্য জেলায় যাচ্ছেন নীলফামারীর শ্রমিকরা 

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
ধান কাটতে অন্য জেলায় যাচ্ছেন নীলফামারীর শ্রমিকরা 

নীলফামারী: ধানকাটা শ্রমিকের সর্দার রমিজ আলম (৫৬)। তার সঙ্গে আরও ১০/১২ জন ধানকাটা শ্রমিক।

তারা যাচ্ছেন ধান কাটার জন্য জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলস্টেশনে সবাই অপেক্ষা করছেন খুলনা মেইল ট্রেন ধরার জন্য।  

দলনেতা রমিজ আলম জানান, প্রতিবছর আগাম ধান কাটার জন্য দলবেধে সেখানে যান তারা। এবারও সেখানকার পরিচিত কৃষকরা মোবাইল ফোনে কল দিয়েছেন,  তাই দলবেধে যাচ্ছেন।  

তিনি বলেন, আক্কেলপুরের কয়েকজন কৃষক বিকাশে অগ্রিম টাকাও পাঠিয়েছেন। সেই টাকা বাড়িতে খাওয়া খরচ ও কিস্তি পরিশোধের জন্য রেখে যাচ্ছি। সঙ্গে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে রওয়ানা হচ্ছি গন্তব্যে।  

চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মূলত কৃষি শ্রমিকের হাতে কাজ থাকে না। নীলফামারী জেলাসহ আশেপাশের জেলায় কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকে বেকার হয়ে পড়েন। অনেকে দাদনে (সুদে) টাকা নেন। কেউ বা ধার-দেনা করে বাইরের জেলায় যান আগাম ধান কাটার জন্য। সেখানে কয়েকদিন ধান কাটা-মাড়াই করে টাকা আয় করে ১০/১৫ দিনের মাথায় বাড়িতে ফেরেন। বাড়িতে এসে নিজ এলাকার ধান কাটা-মাড়াই করেন। এভাবে এসব ধানকাটা শ্রমিক সংসার নামের চাকাটা চালিয়ে নেন।  

সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বাসে বগুড়া যাচ্ছেন একদল ধানকাটা শ্রমিক। চটের ব্যাগে কাপড়, কাস্তে, দড়ি ও ভার বহনের বাংকুয়া (এক টুকরো বাঁশ, যা কাঁধে রেখে  দুই পাশের আগায় মালপত্র বেঁধে বহন করা হয়) ঘাড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ধান কাটতে। এ দলে আছেন ১০ জনের মতো।  

দলনেতা আফাজ উদ্দিন (৫০) জানান, তারা এসেছেন পার্শ্ববর্তী রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়ন থেকে। ধান কাটতে যাচ্ছেন বগুড়া জেলার আদমদীঘিতে। সেখানকার পরিচিত জমির মালিকরা বার বার ফোন করে জানিয়েছেন, ধান পেকে জমিতে পড়ে যাচ্ছে। তাই তারা সেখানে ধান কাটতে যাচ্ছেন।  

শ্রমিকদের এলাকার অবস্থা এমন হয়েছে যে প্রায় সব কৃষি শ্রমিক ঋণের জালে আটকা পড়েছেন। একেকজন তিন-চারটি এনজিওর সদস্য। সেসব এনজিও থেকে ঋণ করেছেন। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হচ্ছে এখন। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে ধানকাটা শ্রমিকরা দক্ষিণের জেলাগুলোতে যাচ্ছেন।
 
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা পাইলট জানান, প্রতি বছর এসময়ে এ ইউনিয়ন থেকে কয়েক হাজার ধানকাটা শ্রমিক বাড়ি ছাড়েন। পরিবারের মায়া ত্যাগ করে তারা আগাম ধান কাটতে যান বাইরের জেলায়। এক সময় তারা কাজে গেলেও কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে তারা মোবাইল ফোন হাতে কাজে যাচ্ছেন। ফলে প্রতিদিনই বাড়ির খবর নিতে পারেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad