গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের ঐতিহাসিক চান্দার বিলের প্রায় এক হাজার একর জলাশয় অবৈধভাবে দখল করে বাঁশের পাটা ও নেট দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে।
আর এ কারণেই জলাশয়ে মাছ শিকার করে এবং শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করা এলাকার মৎস্যজীবী ও সাধারণ মানুষ বিলে নামতেই পারছেন না।
আর দৈনন্দিন জীবিকা বন্ধ হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে চান্দার বিল সংলগ্ন সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দাদের।
চান্দার বিল গোপালগঞ্জ জেলার একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় এলাকা। বলা চলে, দেশীয় প্রজাতির মাছের ভাণ্ডার এ চান্দার বিল। সদর উপজেলা, মুকুসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে চান্দার বিলের অবস্থান। এ বিল এলাকার বাসিন্দারা বেশিরভাগই অতিদরিদ্র। বিলে মাছ শিকার করে, শাপলা তুলে, শামুক কুড়িয়ে বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। কিন্তু সাতপাড় ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের প্রভাশালী কুশল বৈরাগী, শান্ত মজুমদার, সুষেন বৈরাগী, উশল বৈরাগী, উত্তম বৈরাগী ও গোবিন্দ বৈরাগী গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে বিলের প্রায় এক হাজার একর ফসলি জমি জুড়ে মালিকদের অনুমতি ছাড়াই বাঁশ ও নেট দিয়ে ঘিরে জোর করে মাছ চাষ করছেন। এলাকার সাধারণ মৎস্যজীবী ও সাধারণ মানুষ কেউই বিলে নিজেদের জমিতেও মাছ শিকার করতে পারছেন না। এমন কি বিলের শাপলা তুলতে গেলেও তাদের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী মৎস্যজীবী মো. ইলিয়াস কাজী, দুলাল মণ্ডল, কালীপদ মণ্ডল, গৌর মণ্ডল, বঙ্কিম মণ্ডল, দুলু মণ্ডল বলছেন, বিলে তাদের কারো তিন বিঘা, কারো চার বিঘা আবার কারো পাঁচ বিঘা করে জমি রয়েছে। কিন্তু যারা অবৈধভাবে ঘিরে মাছ চাষ করছেন, তাদের কোনো জমি নেই। বিলের মধ্যে তিনটি পুকুর লিজ নিয়ে প্রায় হাজার একর এলাকা জুড়ে জমির মালিকদের না বলে একবারেই গায়ের জোরে মাছ চাষ করছেন তারা। আমরা মাছ ধরতে গেলে ও শাপলা তুলতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। জমিতে ধান লাগালে ও পাট জাগ দিলে, তা রাক্ষুসে মাছে খেয়ে ফেলছে। প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ এখনো কিছু হয়নি, জলাশয় উন্মুক্ত হয়নি। আমরা আয় রোজগার করতে পারছি না, অতি কষ্টে চলছে আমাদের সংসার।
স্থানীয় সাতপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রণব বিশ্বাস বাপ্পী বলেছেন, রাধানগর গ্রামের ভুক্তভোগী লোকজন আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দিকনির্দেশনা মোতাবেক উভয় পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছি। বাঁশ ও নেট তুলে জেলেদের জমি উন্মুক্ত করে দিতে বলেছি। কিন্তু মাছ চাষকারী পক্ষ আমার সিদ্ধান্ত মানেনি। এসব বিষয় আমি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি নির্যাতিত ও দরিদ্র মানুষের পক্ষে। হাজার হাজার মানুষের ক্ষতি করে, তাদের পেটে লাথি দিয়ে অবৈধ সুবিধা ভোগ করবে, তা আমার ইউনিয়নে আমি হতে দেব না। ইউএনও স্যারও তা চান না।
এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য মাছচাষকারী দলনেতা কুশল বিশ্বাসের ফোনে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ইউএনও মো. মহসিন উদ্দিন বলেন, আমি বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য সাতপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তা মাছ চাষিরা মানেননি। বিষয়টি চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন। আমি সরেজমিন তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
এসআই