বরগুনা: অনাবৃষ্টি ও ভারী বৃষ্টিতে বরগুনায় এ বছর আউশ ধানের ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বরগুনায় আউশ ধানের বাম্পার ফলন হলেও এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ কম হয়েছে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ৪৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৭ হাজার হেক্টর জমি। চাষের শুরুতে অনাবৃষ্টি এবং ধান বের হওয়ার সময় ভারী বৃষ্টির কারণে আউশের উৎপাদন কম হয়েছে। গত বছর হেক্টর প্রতি চার টন আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে। সেখানে এ বছর উৎপাদন হয়েছে তিন টন।
কৃষকরা জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আউশ ধান রোপণ করা হয়। এ বছর কৃষকরা বিরি-৪৮ ও বিরি-২৭ দুই জাতের ধান রোপণ করেছে। হেক্টর প্রতি চার থেকে সাড়ে চার টন ধান উৎপাদন হতো। সেখানে এ বছর হেক্টর প্রতি তিন টনের কম উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে।
বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান ৮০০ থেকে ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি পড়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।
সদর, বেতাগী, আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটা উৎসব চলছে, কেউ আবার কাটা ধান মাড়াই করতে ব্যস্ত।
বরগুনা সদর উপজেলার খাজুরতলা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক নজরুল ইসলাম ২৮ শতাংশ জমিতে আউশ আবাদ করেছিলেন। বীজতলা থেকে শুরু করে আবাদ পর্যন্ত সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ছয় হাজার ৩৫০ টাকা।
তিনি বলেন, নানা কারণে এ বছর আউশ ধানের ফলন খারাপ হয়েছে। যে টাকা খরচ হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও আসেনি। এছাড়া বাজারে ধানের দাম গত বছরের চেয়ে কম।
নিজাম হাওলাদার নামে আরেক কৃষক বলেন, ১০০ শতাংশ জমিতে আউশ আবাদ করেছিলাম। ২০ হাজার টাকা খরচ করে ২১ মণ ধান পেয়েছি, বাজারে ৮২০ টাকা মণ ধরে ১৭ হাজার ২২০ টাকায় বিক্রি করেছি। এবার আমার তিন হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছরের চেয়ে তুলনামূলক এ বছর আউশ ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। চাষের শুরুতে অনাবৃষ্টি এবং ধান বের হওয়ার সময় ভারী বৃষ্টির কারণে আউশ উৎপাদন কম হয়েছে।
আমতলীর চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের কৃষক জিয়া উদ্দিন জুয়েল বলেন, তিন বছর ধরে জমি আবাদ করিনি। এ বছর ভালো লাভের আশায় আউশ ধান আবাদ করেছিলাম। কিন্তু তেমন ধান হয়নি। ১২০ শতাংশ জমিতে মাত্র ৩০ মন ধান পেয়েছি। তাতে ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সোহেল রানা বলেন, ৩২ হাজার টাকা খরচ করে দুই একর জমিতে আউশ ধান আবাদ করেছিলাম। কিন্তু তেমন ধান হয়নি। ৮৪০ টাকা মণ দরে মাত্র ২৪ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় এ বছর খরচও উঠেনি।
আমতলীর ধান ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ফলন কম হওয়ায় এ বছর বাজারে কম ধান এসেছে। বাজারে ধানের দামও কম। প্রতি মণ ধান জায়গাভেদে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩
এসআইএ