ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

নোনা পানিতে ঝলসে গেছে ফসল

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৪
নোনা পানিতে ঝলসে গেছে ফসল নোনা পানিতে ঝলসে গেছে সয়াবিন গাছ।

লক্ষ্মীপুর: মেঘনার নদীর বুকে জেগে উঠা একটি দুর্গম চরে ফসল চাষাবাদ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। রবি মৌসুমে দলবদ্ধ হয়ে তারা প্রায় দুইশ একর জমিতে সয়াবিন এবং গমের চাষাবাদ করেছেন।

বেশিরভাগ জমিতে চাষাবাদ হয়েছে সয়াবিনের। কিন্তু কৃষকদের চাষাবাদকৃত সয়াবিন এবং গমের ক্ষেতে নোনা পানিতে ঝলসে গেছে।  

চরটির অবস্থান লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পশ্চিমে মেঘনার বুকে। যা ‘চর কাঁকড়া’ নামে পরিচিত।

চরের কৃষক নুরুল হক, কামাল হোসেন ও মো. কিরণ বাংলানিউজকে বলেন, চরের চারপাশেই নদী। জোয়ারের সময় নদীর পানি চরে উঠে পড়ে। নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকলে ওই পানিতে ফসল ঝলসে যায়।

কৃষকরা বলেন, বিগত এক বছর ধরে চরে আবাদ শুরু করেছি। শুরুতে আমন ধানের আবাদ করি। তখন ফলন ভালো হয়েছে। সেই সময় নদীর জোয়ারের পানি ফসলে আঘাত হানতে পারেনি। আমন ধান উঠে গেলে রবি মৌসুমে প্রায় আড়াইশ কৃষক দলবদ্ধ হয়ে পুরো চরে সয়াবিন ও গমসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করি। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষভাগে নদীর জোয়ারের লবণ পানি চরে উঠে পড়ে। এর ফলে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফলে আশানুরূপ ফলন না হওয়ার শঙ্কা করছি।



তারা বলেন, চরের মাটি সয়াবিনের জন্য উর্বর। চরের যেসব জমিতে নোনা পানি ঢুকতে পারেনি, সেসব জমির সয়াবিনের কোনো ক্ষতি হয়নি। সেগুলোতে ভালো ফলন হবে। কিন্তু যেসব জমিতে লবণ পানি ঢুকেছে, সেগুলোর সয়াবিন গাছ ঝলসে মরে গেছে।  

কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, আমরা ২০ জন কৃষক দলবদ্ধ হয়ে আট একর জমিতে সয়াবিনের আবাদ করেছি। গাছে সয়াবিন ধরেছে, এখনো অপরিপক্ব। কিন্তু জোয়ারের সঙ্গে লবণাক্ত পানি ঢুকে গাছ নষ্ট করে দিয়েছে। যেসব গাছের গোড়ায় নোনা পানি স্পর্শ করেছে, সেসব গাছ ঝলসে গেছে। পানিতে লবণের তীব্রতা বেশি ছিল।  

চাষি মোক্তার হোসেন বলেন, ক্ষেতে সয়াবিন এখনো তোলার সময় হয়নি। নদীতে এখন বিপদ সংকেতের সময়। সংকেত দেখা দিলে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায়। তখন সাগরের লবণাক্ত পানি চরে উঠে পড়ে। এতে ফসল নিয়ে শঙ্কায় আছি।  

কৃষক ছিদ্দিক উল্যাহ বলেন, কিছু জমিতে গমের আবাদ করেছি। শুরুতে ফলনের অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু জোয়ারের পানি ঢুকে অপরিপক্ব গমের গাছ ঝলসে গেছে। তাই ফলন ভালো হবে না।



স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সানা উল্যাহ বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাধারণত জোয়ারের পানিতে চর ডুবে যায়। ওই সময়টাতে নদীতে পানিতে লবণাক্ততা থাকে না। বৃষ্টির কারণে নদীতে মিঠা পানির পরিমাণ বেশি থাকে। শীত মৌসুমে জোয়ারের পানি চরে উঠতে পারে না। তবে শীতের শেষে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানি চরে উঠে পড়েছে। এসময়ে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে জোয়ারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের লবণ পানি নদীতে চলে আসে। আর ওই পানি নদী সংলগ্ন ফসলি মাঠে ঢুকে পড়লে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।  

কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহীন রানা বাংলানিউজকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে মেঘনা নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেশি থাকে। যা ফসলের জন্য ক্ষতিকর। চর কাঁকড়াতে আমনের আবাদ ভালো হয়েছে। তখন জোয়ারের পানিতে লবণাক্ততা কম ছিল। দেশি জাতের সয়াবিনের গাছ অধিক লবণাক্ততায় টিকতে পারে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।