মানিকগঞ্জ: অতিবৃষ্টির ফলে বীজতলা নষ্ট ও সেই ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেলার চাষিরা আগাম শীতকালীন সবজি আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানের মতো আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলেও দাবি এসব চাষিদের।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে এ অঞ্চলের সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কম খরচে অধিক লাভ হওয়াতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের চাষিরা ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার সাতটি উপজেলায় কমবেশি সবজির আবাদ হয় তবে সিংগাইর, সাটুরিয়া ও সদর উপজেলার অংশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয়। গত রবি মৌসুমে জেলায় নয় হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করেছিল কৃষকরা। এ বছর সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে নয় হাজার ৩৮২ হেক্টর জমি। গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে সবজির আবাদ কমেছে ১০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে কৃষক তার জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মূলা, করলা, পটল, লাল ও পালং শাক, শসা আবাদ করেছেন। এ সব সবজি শোভা পাচ্ছে মাঠের পর মাঠ এবং ওই সবজিগুলো পরিচর্যার জন্য চাষিরা কাজ করছেন। স্থানীয় চাষিদের জমিতে থাকা বীজতলা অতি বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। জমিতে কোনো ধরনের পোকা যাতে আক্রমণ করতে না পারে সে জন্য কীটনাশক দিচ্ছেন। বাঁধাকপি, ফুলকপি ও বেগুনসহ অন্যান্য সবজির বাগানের লাইন সোজা করার জন্য মাটি তুলছেন।
বর্তমান সময়ের এক বিঘা জমিতে সবজি আবাদের জন্য কৃষককে গুনতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ আগাম সবজি চাষের আশানুরূপ ফলন হলে এবং ভালো বাজার মূল্য ধরতে পারলে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
সাটুরিয়া উপজেলার রাইল্লা এলাকার চাষি রেহাজ উদ্দিন বলেন, গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে বেগুনের আবাদ কিছু বেশি করেছি। তবে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে আমার বেশ কিছু জমিতে থাকা বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। শীতের আগাম বাজার ধরতে উঁচু জমিতে সবজির আবাদ করছি, কপাল যদি ভালো থাকে তবে সব ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। উপজেলার কামতা এলাকার আবুল হোসেন নামে আরেক এক চাষি বলেন, এবারের বৃষ্টিতে আমাদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবজির বাগানের। তবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ করেছি। বর্তমানে যে আবহাওয়া আছে এরকম আবহাওয়া থাকলে আমার জমিতে থাকা ফুলকপির বাম্পার ফলনের আশা রয়েছে। এবার ১৫ বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করছি, বাজার দর যদি ভালো পাওয়া যায়, তবে শীত মৌসুমে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রি করতে পারব।
সদর উপজেলার মেঘশিমুল এলাকার চাষি হানিফ বেপারী বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে সবজি চাষ করি, এ বছরও আট বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, সিম ও বেগুনের আবাদ করেছি। এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে জমিতে তবে বাজার ভালো পেলে সব খরচ বাদে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা লাভ হবে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক ড. বরীআহ নূর আহমেদ বলেন, সবজি চাষে খ্যাতি অর্জন করেছে মানিকগঞ্জ, সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও শীতকালে সবজি আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এরই মধ্যে আবার কিছু কিছু সবজি বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে চাষিদের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এতে তাদের বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আগাম শীতকালীন সবজির বাজার দর যদি ভালো পাওয়া যায় তবে কৃষক তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৪
আরআইএস