ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম

ফ্রুট ব্যাগিং: আমে কাঙ্ক্ষিত রং, উল্লসিত চাষি

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৬
ফ্রুট ব্যাগিং: আমে কাঙ্ক্ষিত রং, উল্লসিত চাষি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফিরে: পোকার আক্রমণ ও রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করতে গত বছর থেকে শুরু হয়েছে আমে ফ্রুট ব্যাগিং। সে বছর সীমিত আকারে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও এবার দেশের আটটি জেলায় বেশ জোরেসোরেই আমে ফ্রুট ব্যাগিং শুরু হয়েছে।

এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শুধু বিষমুক্ত নয়, আমের কাঙ্খিত রংও পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাগিং করা আমের বাজার মূল্যও দ্বিগুণ। তাই উল্লসিত আমচাষিরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, কানসাট, ভোলাহাট ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর ব্যাপক হারে আমে ব্যাগ পরানো হয়েছে।

ব্যাগটি নিয়ে গবেষণা ও বাংলাদেশে এর সফল প্রয়োগকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এবার এখন পর্যন্ত শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জেই ১০ লাখ আমে ব্যাগ পরানো হয়েছে। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত তা ২৫ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শরফ উদ্দিন আরও বলেন, গত ২/৩ বছরে কীটনাশক আর ফরমালিনের ভয়ে মানুষ মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। চাষিরা চরম আতঙ্কিত, হতাশা আর ক্ষতির মুখে পড়ে গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি চীনে আম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগদান করে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন। তখন চীনের এক বিজ্ঞানী আমে ব্যাগিংয়ের পরামর্শ দেন। এক বছর পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর গত বছর চীন থেকে ব্যাগ আমদানি করে আমে ব্যাগিং করা হয়। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুরের চাঁপাই অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এ ব্যাগ তৈরি করছে।

আগে ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের হাত থেকে আমকে রক্ষা করতে ও কাঙ্খিত রং পেতে প্রজাতি ভেদে ১৫ থেকে ৬২ বার কীটনাশক ও বালাইনাশক স্প্রে করা হতো। সেখানে তিনবার স্প্রে করে ব্যাগ পরানো হলে কাঙ্খিত ফলন ও রং পাওয়া যায়।

তিনি যোগ করেন, প্রজাতি ভেদে ৪২ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত আমে ব্যাগ পরিয়ে রাখতে হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের আমচাষি আব্দুল মতিন ব্যাগিং করা প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাগের দাম একটু বেশি মনে হলেও যেহেতু এক মৌসুমে দুই বার ও ব্যাগটি ছিড়ে না যাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী মৌসুমেও ব্যবহার করা যাবে, তাই খরচটি গায়ে লাগবে না। আর এতে কীটনাশক ও বালাইনাশকের ব্যবহার অনেক কম হওয়ায় আম উৎপাদনের খরচ কমে আসবে।

শিবগঞ্জ এলাকার আমচাষি শামিম খান ২৫ দিন ব্যাগিং করা আমের রং যখন বাংলানিউজকে দেখাচ্ছিলেন, তখন তার চোখ চিক চিক করছিল আর খুশিতে মুখ ভরে উঠছিল। তিনি বলেন, ‘দেখছেন, ২৫ দিনেই কি কালার ধরেছে। ৪০ দিন এ ব্যাগ পরিয়ে রাখলে কেমন কালার হবে কল্পনা করতে পারছেন! গত বছর এ সাইজের আম ১ হাজার ৬শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। এবার এক ব্যাপারির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, ব্যাগিং করা আম ২ হাজার ৮শ’ টাকা দাম দেবেন তিনি’।

শুধু মতিন আর শামিমই নন, সব ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়া প্রায় একই ধরনের। কীটনাশক, বালাইনাশক আর ফরমালিন আতঙ্কের মাঝে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি পেয়ে উল্লসিত চাষিরা। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৬
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।