ঢাকা: কৃষি বীজ আমদানি বা রফতানিতে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। বীজ আমদানি-রফতানিতে অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমতি নিয়ে বীজ আমদানি বা রফতানি করা যেতো। আর তাতে আর্থিক দুর্নীতি ছাড়াও বিদেশি খারাপ বীজ আমদানি বা দেশি ভালো জাতের বীজ রফতানি করে ফায়দা লুটতেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে জাতীয় বীজ বোর্ড নামে আলাদা প্রতিষ্ঠান করছে সরকার।
এ লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালের বীজ অধ্যাদেশ রহিত করে ‘বীজ আইন, ২০১৬’ খসড়া প্রস্তুত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত আইনে জাতীয় বীজ বোর্ড গঠন করা হবে। এ বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রকার বীজ আমদানি বা রফতানি করা যাবে না।
এ আইনের আওতায় বীজ বলতে খাদ্যশস্য, ডাল, তৈলবীজ, ফলমূল ও শাক-সবজির বীজ, আঁশ জাতীয় ফসলের বীজ, পুষ্পদায়ক বা শোভাবর্ধক উদ্ভিদের বীজ, পত্রযুক্ত উদ্ভিদের বীজ উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া কোনো চারা, কান্দাল, বাল্ব, রাইজোম, রুট কাটিংসহ সব ধরনের কলম এবং উদ্ভিদের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে ছড়ানো কোনো জিনিস এর আওতায় পড়বে।
প্রধান বীজতত্ত্ববিদ মো. আজিম উদ্দিন জানান, খসড়া প্রস্তুত করে মতামতের জন্য তা প্রকাশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামত আগামী ৭ জুনের মধ্যে পাওয়া গেলে তা চূড়ান্ত হবে। খসড়া চূড়ান্ত হলে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, খসড়াটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হলে আইন আকারে পাসের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। জাতীয় সংসদে পাস হলে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপনের আইন প্রয়োগ হবে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়, জাতীয় বীজ বোর্ডের প্রধান থাকবেন চেয়ারম্যান। কৃষি সচিব চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হবেন। সদস্য সচিব থাকবেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক।
চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব ছাড়াও কৃষি মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ ও বিভিন্ন উইংয়ের প্রধান এবং মনোনীত প্রতিনিধিসহ আরও ১৭ জন বোর্ডের সদস্য থাকবেন। এছাড়া এ আইনের আওতায় একটি বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি থাকবে। এজন্য সরকার প্রত্যয়ন এজেন্সি নামে একটি প্রত্যয়ন সংস্থা গঠন করতে পারবে।
প্রস্তাবিত আইনের আওতায় একটি বীজ পরীক্ষাগার স্থাপন বা যেকোনো বীজ পরীক্ষাগারকে গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারি বীজ পরীক্ষাগার ঘোষণা করা যাবে। এ আইনের আওতায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে নতুন জাত উদ্ভাবন করা হলে তা বীজ বোর্ডের মাধ্যমে অনুমোদিত ও নিবন্ধিত হতে হবে।
যেকোনো ধরনের ফসল বা জাতের বীজের অঙ্কুরোদগমন, বিশুদ্ধতার হার, বীজের আর্দ্রতা এবং অন্যান্য উপাদানের মান নির্ধারণ, মানের নিশ্চয়তার জন্য মার্ক বা লেবেলে সব কিছু উল্লেখ থাকতে হবে।
আমদানির ক্ষেত্রে বীজের মোড়কে বীজের আইডেন্টিফিকেশন থাকতে হবে। বীজের নাম, জাত, লট নম্বর, ব্যাচ নম্বর, বীজের ভৌত বিশুদ্ধতা, ন্যূনতম অঙ্কুরোদগমন ক্ষমতার হার, বীজের ওজন বা সংখ্যা, বীজ পরীক্ষার তারিখ, বীজ প্যাকেজিংয়ের তারিখ, বীজের আমদানিকারক, উৎপাদনকারী ও প্যকেটজাতকারী কোম্পানির নাম-ঠিকানা থাকতে হবে।
তবে, বীজ আমদানির ক্ষেত্রে আগে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির মাধ্যমে তা প্রত্যয়ন করে জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে তা আমদানি করা যাবে। এছাড়া নোটিফায়েড বীজের বিক্রি, বিক্রির জন্য সংরক্ষণ, রফতানি বা অন্য কোনোভাবে সরবরাহের ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৬
এসএমএ/পিসি/এএসআর