কেউ কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। কেউ কেউ ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠানে।
খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় দেখা গেছে মাঠ জুড়ে সোনালি ধান। আমন ধানের সোদা গন্ধে ভরে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটার মহাউৎসব। কৃষকের আঙিনায় শুধু ধান আর ধান। কৃষক-কৃষাণীরা সোনালি ধান কাটছেন, টানছেন, মাড়াই করছেন, আবার কেউবা ঝাড়ছেন। সারাদিন রোদে পুড়ে ধান কাটেন। আর রাতভর সেই ধান মাড়াই করে গৃহস্থের গোলা ভর্তি করেন। গৃহিণীরাও কৃষকের কাজে সহযোগিতা করার জন্য পুরোদমে মাঠে ধান কাটছেন।
এদিকে ফলন ভালো হওয়ায় আর দাম ভালো থাকায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
অনেক জমির মালিক জানান, মাঠ থেকে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলতলা গ্রামের ধান ক্ষেতের মালিক প্রণয় সরকার বুধবার (২৮ নভেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামের মাঠে মাঠে চলছে আমন ধান কাটার উৎসব। জলসহিষ্ণু ব্রি ধান ৫২ জাতের আমন ধান এ উপজেলার কৃষকরা বেশি চাষ করেছেন।
তিনি জানান, ধান কাটা শুরু হলেও শ্রমিক পাওয়া না যাওয়ায় অনেক জমির মালিককে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
একই উপজেলার গংঙ্গারামপুর ইউনিয়নের বয়ার ভাঙ্গা গ্রামের কৃষক কাঁকন মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাগে গ্রামে ধানে কাস্তে লাগানো শুরু অইছে পুরোদমে। ফলন ভালো অওয়ায় (হওয়ায়) কৃষকের মনে এহন আনন্দের বন্যা বইছে। ’
একাধিক জমির মালিক ও কৃষক জানান, সরকার আমন ধানের দাম আগেভাগে নির্ধারণ করে দিলে কৃষক ভালো দাম পাবেন। গত কয়েক বছর তারা আমনের ন্যায্যমূল্য পাননি। আশা করছেন এবার ন্যায্যমূল্য পাবেন।
ডুমুরিয়া উপজেলার ৫ নম্বর আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর কুলবাড়ীয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, শস্য ভাণ্ডারখ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলাজুড়ে হেমন্তের সোনালি ধানের মিষ্টি গন্ধ বিরাজ করছে। মাঠে মাঠে এখন রোপা আমন ধান কাটা ও মাড়াই পুরোদমে শুরু হয়েছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় নির্বিঘ্নে ধান কাটা-মাড়াই কাজ করছেন তারা।
কৃষি অধিদফতর খুলনা সূত্রে জানা গেছে, এবার খুলনা জেলায় রোপা-আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০ হাজার ১৯২ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৯২ হাজার ৪২৫ হেক্টর।
এরইমধ্যে খুলনা মেট্রোর দৌলতপুরে ৭০ হেক্টরের বিপরীতে ৭৫ হেক্টর ও লবণচরায় ২০০ হেক্টরের বিপরীতে ২০০ হেক্টর, রূপসা উপজেলায় ৩ হাজার ২৮০ হেক্টরের বিপরীতে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ১৫ হাজার ৯১২ হেক্টরের বিপরীতে ১৫ হাজার ৭০০ হেক্টর, কয়রায় ১৫ হাজার ৫২৫ হেক্টরের বিপরীতে ১৫ হাজার ৭৭০ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ১ হাজার ৬৪৮ হেক্টরের বিপরীতে ১ হাজার ৭৪০ হেক্টর, তেরখাদায় ৫২০ হেক্টরের বিপরীতে ৫৫০ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ১ হাজার ৭৭০ হেক্টরে বিপরীতে ১ হাজার ৭৭০ হেক্টর, পাইকগাছায় ১৭ হাজার ২০ হেক্টরের বিপরীতে ১৭ হাজার ১০০ হেক্টর, দাকোপে ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টরের বিপরীতে ১৮ হাজার ৯০০ হেক্টর, ফুলতলায় ১ হাজার ১৫ হেক্টরের বিপরীতে ১ হাজার ২৬০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনার মাঠে মাঠে এখন পাকা ধানের সোনালি হাসি। আমন ফসল ভালো হওয়ায় কৃষকেরাও ভীষণ খুশি। নবান্ন উৎসব থেকেই ঘরে ঘরে নতুন ধান তোলা হচ্ছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত জেলার কৃষকেরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৮
এমআরএম/আরআর