ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

মৌ চাষে মোয়াজ্জেমের সুদিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
মৌ চাষে মোয়াজ্জেমের সুদিন

ধামরাই (ঢাকা): ছোটো বেলা থেকে পড়াশোনায় ভালো করলেও চাকরির প্রতি কোনো ইচ্ছা ছিল না মোয়াজ্জেমের। তিনি ভাবতেন নিজেই একজন উদ্যোক্তা হবেন। কারো চাকরি করবেন না। তাই মাধ্যমিকে পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করবেন বলে ভাবতেন তরুণ মোয়াজ্জেম।

২০১২ সালে বিবিএ শেষ করার পর চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটেই মৌমাছি চাষ শুরু করেন মোয়াজ্জেম। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়ায় মৌ চাষিদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রথমে দু’টি ও পরে ছয়টি মৌ-বক্স কিনে এনে মৌ চাষ শুরু করেন।

কিন্তু প্রশিক্ষণ ছাড়া মৌ চাষ করা সম্ভব নয় বিধায় ২০১৫ সালের মধ্যে তার সব মৌমাছির মৃত্যু হওয়ায় ভেঙে পড়েন তিনি।

হতাশ হয়ে তিনি ভেবেই নিয়েছিলেন আর মৌ চাষ করবেন না। কিন্ত না, কয়েক মাস পর সাতক্ষীরার এক মৌ চাষি আব্দুল আজিজের কাছে যান তিনি। সেখানে গিয়ে বিনা বেতনে শুধু প্রশিক্ষণের জন্য চার মাস মৌমাছির পরিচর্যার কাজ করেন। চারমাস পর বাড়ি ফেরার সময় আব্দুল আজিজ খুশি হয়ে মোয়াজ্জেমকে ছয়টি বক্স দেন।

সেই ছয়টি বক্স থেকে বেড়ে ২০১৭-১৮ বছরে ২১টি বক্স হয়। পরে ২০১৯ সালে এসে এখন মৌমাছিসহ ৫৩টি বক্স রয়েছে মোয়াজ্জেমের। প্রতিটি বক্সে প্রায় ৫০ হাজার মৌমাছি রয়েছে। ৫৩টি বক্সে ৫৩টি রানী মৌমাছি রয়েছে। মৌমাছিগুলো পরিচর্যার জন্য আনোয়ারা নামে এক তরুণকে তার সঙ্গে রেখেছেন। সকাল-সন্ধ্যা দুই জনে মৌমাছিগুলোর পরিচর্যা করেন।

মোয়াজ্জেমের বাড়ি ঢাকার সাভার থানার পাশে হলেও তিনি তার মৌমাছিদের নিয়ে ঘুড়ে বেড়াই দেশের বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে তিনি ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের ফোটনগরের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছিদের নিয়ে অবস্থান করছেন।

মোয়াজ্জেমের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে প্রথমেই মনে পড়ে গেলো নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’ কবিতার চারটি লাইন ‘মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি, নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময়তো নাই’।

মৌ চাষি মোয়াজ্জেম।  ছবি: সাগর ফরাজী

কথা হয় মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমদিকে প্রচুর হতাশা কাজ করতো। কিন্তু প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার এক বছরের মধ্যই ঘুরে দাঁড়ায় জীবন চলার পথ। সেই পথের বাহন এখন মৌমাছির মতো ক্ষুদে একটি প্রাণী। এ পেশায় আমি খুশি ও স্বাবলম্বী।

তিনি বলেন, পড়াশোনা শেষে করে হতাশায় পড়ে গিয়েছিলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। দুই দুই বার মৌমাছি পালন করেও ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিলাম। পরিবার থেকেও আর চাচ্ছিলো না এসব করি। পরে ভেবে নিলাম কারো দাসত্ব হয়ে কাজ করতে পারবো না। তাই প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার নেমে পরলাম মৌ চাষে। ঘুরে দাঁড়ালো আমার সংসার। এখন আমি প্রতি বক্স থেকে সপ্তাহে ৪-৮ কেজি করে মধু সংগ্রহ কররি। প্রতি কেজি মধু ৩৫০-৪০০ টাকা পাইকারী ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে এখানে মধু চাষ দেখতে আসা দর্শনার্থীরাও ২ কেজি কিংবা ৩ কেজি করে মধু খুচরা দাম ৫০০ টাকায় কিনছেন।

সফল এই মধু চাষি আরও বলেন, অল্প সময়ে ফলনশীল সরিষা শীতকালে লাভের আশায় কৃষকরা চাষ করে। মৌমাছি থাকলে এই সরিষার ফলন বাড়ে পরাগায়নের মাধ্যমে। আমরা সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখি মৌমাছিসহ মৌ চাষের বাক্স। এতে এক দিকে যেমন আমরা মধু পাচ্ছি। অন্যদিকে, সরিষা চাষিরা পাচ্ছে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বেশি ফলন। আমরা আর ১০-১২ দিন এখানে থাকবো পরে দক্ষিণ আঞ্চলের জেলাগুলোতে চলে যাবো।

ধামরাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ধামরাইয়ে এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। সরিষায় এক প্রকার পোলেন গ্রিন থাকে ওই পোলেন গ্রিন মৌমাছির পায়ে এবং বুকে লেগে পরাগায়নের সৃষ্টি হয়, ফলে সরিষার প্রায় ১৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পায়। এবার ধামরাইয়ে ছয়টি স্থানে ১০ হাজার বক্স নিয়ে মৌচাষিরা মধু চাষ করছেন। এবার মধুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২.৫০ টন। মৌ চাষিদের তেমন কোনো বড় ধরনের পুঁজি লাগে না। তাদের বড় পুঁজি হচ্ছে প্রশিক্ষণ যা আমরা বিভিন্নভাবে মৌ চাষিদের দিয়ে আসছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।