ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বাংলাদেশ পেয়ারা উৎপাদনে সপ্তম, বাড়ছে ড্রাগন চাষও

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
বাংলাদেশ পেয়ারা উৎপাদনে সপ্তম, বাড়ছে ড্রাগন চাষও

ঢাকা: পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে। এক বছর আগেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল অষ্টম। অন্যদিকে এক বছর আগে বাংলাদেশে ড্রাগন উৎপাদন সেইভাবে হিসাবের আওতায় ছিল না। বিদেশি এই ফলের উৎপাদনও বাংলাদেশে বেড়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষি সম্প্রসারণ উইং থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিবিএসের হিসাবে ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদিত হয়েছে।

আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮১ টন পেয়ারা উৎপাদন করে বিশ্বে সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আগে রয়েছে ভারত, মেক্সিকো, ব্রাজিল, পাকিস্তান, আমেরিকা ও  থাইল্যান্ড।
বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই পেয়ারা উৎপাদন করা হয়। তবে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য।  

বিবিএস সূত্র জানায়, ভালোভাবে যত্ন নিলে একটি পূর্ণবয়স্ক পেয়ারা গাছ থেকে গ্রীষ্মকালে ৬০ থেকে ৭০ কেজি এবং হেমন্তকালে ৫০ থেকে ৬০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। বরিশালে বিভাগে ফল দিয়ে থাকে এমন মোট পেয়ারা গাছ রয়েছে ২১ লাখ ৪৬ হাজার ৪২৩টি। এই বিভাগে মোট পেয়ারা উৎপাদিত হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৫৯ টন। বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরেই রয়েছে ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৯টি গাছ। এর পরেই পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ভোলা, বরিশাল ও বরগুনা পেয়ারা চাষের জন্য উল্লেখযোগ্য।

পেয়ারা উৎপাদনে পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম বিভাগও। এই বিভাগে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৬১ হাজার ৯৫০ টন। ফলন হয় এমন পেয়ারা গাছের সংখ্যা ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৫টি। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সব থেকে পেয়ারা গাছের সংখ্যা চট্টগ্রাম জেলাতেই সাড়ে ২১ লাখ। এর পরেই রাঙামাটি জেলায় প্রায় ৭২ হাজার পেয়ারা গাছ রয়েছে।

ঢাকা বিভাগে মোট পেয়ারা উৎপাদিত হয়েছে ২৯ হাজার ১২৬ মেট্রিক টন। ঢাকা বিভাগে মোট পেয়ারা গাছের সংখ্যা ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮৫টি। এর মধ্যে সব থেকে বেশি পেয়ারা গাছ গাজীপুরে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৫টি এর পরেই রয়েছে টাঙ্গাইল জেলায় ২ লাখ ৫০০টি।

খুলনা বিভাগে মোট পেয়ারা উৎপাদিত হয়েছে ৩২ হাজার ২৭৭  টন। বিভাগটিতে পেয়ারা উৎপাদিত হয় এমন মোট পেয়ারা গাছের সংখ্যা ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৭টি। খুলনা বিভাগে সব থেকে বেশি পেয়ারা গাছ রয়েছে নড়াইলে ৭২ হাজার ২৭১টি। এর পরেই রয়েছে সাতক্ষীরা, মেহেরপুর ও মাগুড়া জেলা।

ময়নসিংহ বিভাগে মোট পেয়ারা উৎপাদিত হয়েছে ১৪ হাজার ১২৭ টন। এই বিভাগে মোট পেয়ারা গাছের সংখ্যা ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪১২টি। ময়মনসিংহ বিভাগে শেরপুর, নেত্রকোনা  ও জামালপুরে বেশি পেয়ারা উৎপাদিত হয়ে থাকে। রাজশাহী বিভাগে মোট ৩২ হাজার ১১২  টন পেয়ারা উৎপাদিত হয়েছে। এই বিভাগে মোট পেয়ারা গাছের সংখ্যা ১০ লাখ ৮ হাজার। সব থেকে বেশি পেয়ারা গাছ রয়েছে পাবনা জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০০টি।

পেয়ারা উৎপাদনে পিছিয়ে সিলেট বিভাগ। এই বিভাগে মোট পেয়ারা উৎপাদিত হয়েছে ৭ হাজার ৫৭৪  টন। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে পেয়ার বেশি উৎপাদিত হয়ে থাকে।

পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি থাকলেও বাংলাদেশে পেয়ারার জনপ্রিয় জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাজী পেয়ারা, বারি পেয়ারা-২, বারি পেয়ারা-৩, বাউ পেয়ারা-১ (মিষ্টি), বাউ পেয়ারা-২ (রাংগা), বাউ পেয়ারা-৩ (চৌধুরী), বাউ পেয়ারা-৪ (আপেল), ইপসা পেয়ারা-১, ইপসা পেয়ারা-২, কাঞ্চন নগর, মুকুন্দপুরী, থাই পেয়ারা, পলি পেয়ারা, আঙ্গুর পেয়ারা প্রভৃতি।

পেয়ারা পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শুধুমাত্র স্বাদেই অতুলনীয় তা কিন্তু নয় এর অনেক গুণও রয়েছে। পেয়ারাতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ এতই যে একে ভিটামিন সি এর ব্যাংক বলা হয়। আমাদের দেশে ভীষণ জনপ্রিয় একটি ফল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা দানা ছাড়া পেয়ারার বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করছেন। দেশের সাতটি কোম্পানি বর্তমানে পেয়ারার জুস তৈরির জন্য প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ থেকে পেয়ারা ও পেয়ারার জুস রপ্তানিও হচ্ছে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কমবেশি ২৭ হাজার ৫৮১ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। সে হিসাবে দেশে পেয়ারার বাজার ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় উঠানামা করে।

বাড়ছে ড্রাগন চাষও
অনুকূল আবহাওয়া ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বাংলাদেশে বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ। পুষ্টিগুণ থাকায় বাড়ছে চাহিদাও। এ ফল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। দেশে নতুন ফল হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় জেলার অনেক স্থানেই ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাকটাস প্রজাতির এ ফলের চাষ। ড্রাগন ফলে প্রচুর আঁশ থাকায় হজম শক্তি বাড়াতে ও চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এ বছর ড্রাগন ফলের চাষ করে লাভবান হয়েছেন অনেক চাষী। বিনামূল্যে চারা, প্রাথমিক খরচ, উপকরণ ও পরামর্শ দিয়ে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।
বিবিএস সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের উৎপাদন ছিল না বলা চলে। অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ৩৫ টন ড্রাগন উৎপাদিত হয়েছে। দেশের সব বিভাগে এখনো ড্রাগন চাষ শুরু হয়নি। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে মূলত স্বল্প পরিসরে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের নীলফামারি জেলায় সব থেকে বেশি ড্রাগনের চাষ হয়ে থাকে। এই জেলায় উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৮ টন।  

এর পরেই পঞ্চগড়ে ৪ ও দিনাজপুরে ৩ টন ড্রাগন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হয়েছে। দেশের মেহেরপুর ও ফরিদপুর জেলায় ড্রাগন উৎপাদিত হয়ে থাকে স্বল্প পরিসরে। পূর্ণবয়ষ্ক একটি ড্রাগন গাছ ৫০ থেকে ১০০টি ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি ফল ২০০  গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে। দিনাজপুরে ১৪ হাজার ১০৫টি, নীলফামারিতে ১৮ হাজার ৫৮২টি ও পঞ্চগড়ে ১ হাজার ৪৩০টি ড্রাগনের গাছ রয়েছে।  

ড্রাগন ফলের জন্ম দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে। ১০০ বছর আগে এই ফলের বীজ ভিয়েতনামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই ড্রাগন ফলের চাষ বিস্তার লাভ করে। ড্রাগন ফলের চাষ সবচেয়ে বেশি হয় ভিয়েতনামে। এ ছাড়া তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরায়েল, অস্ট্রেলিয়াতেও ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে।  সর্বাধিক লাল, সাদা, গোলাপি, হলুদ এবং মাল্টি কালার এই পাঁচ রঙে ড্রাগন ফল উৎপাদন হচ্ছে।

পেয়ারা ও ড্রাগন চাষ প্রসঙ্গে বিবিএস এর কৃষি উইংয়ের যুগ্ম পরিচালক এস এম কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। ফল উৎপাদন নিয়ে আমরা একটা গবেষণা রিপোর্টও তৈরি করেছি। এতে দেখা গেছে বর্তমানে পেয়ারা উৎপাদনও বেড়ে চলেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন পেয়ারা উৎপাদনে সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে। কিছু দিন আগেও ড্রাগন বিদেশি ফল হিসেবে বিবেচিত ছিল। বর্তমানে সরকারের পৃষ্টপোষকতায় ড্রাগন উৎপাদন বাড়ছে। আশা করি পুরো দেশে এই ফলের বিস্তার ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
এমআইএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।