ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

করোনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কৃষি পদক পাওয়া আমির হোসেন

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২০
করোনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কৃষি পদক পাওয়া আমির হোসেন পরিবারের সঙ্গে কৃষক আমির হোসেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সপ্তাহে প্রায় ২৫ মণ টমেটোর ফলন পাচ্ছেন কৃষক আমির হোসেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্রেতা সংকটে শনিবার (১১ এপ্রিল) টমেটো বিক্রি করেছেন দেড় টাকা দরে, ফেলেও দিয়েছেন কিছু টমেটো। এখন মাঝে মাঝে ক্রেতা আসলে বেঁচে থাকার মতো দাম পেলেও সামনের দিনগুলোতে সবজির সরবরাহ ও বিক্রির নিশ্চয়তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পাওয়া এ সফল কৃষক।

বর্তমানে ২৮ শতক জমিতে টমেটো, ১৮ শতক জমিতে ধুন্দল, ৮৬ শতক জমিতে মাল্টা, ৭০ শতক জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন কৃষক আমির হোসেন। তবে প্রতিটি ফসলের জমির ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে কলা, কঁচু, আদা, পেঁয়াজ-রসুন, হলুদ, ঘাষের চাষও রয়েছে।

বাংলানিউজকে আমির হোসেন বলেন, ‘আমার সবজি চাষের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে আরও তিন প্রকার সবজির চাষ হচ্ছে। এতে এক ইঞ্চি জমিও খালি পড়ে নেই। তবে, করোনার প্রাদুর্ভাবে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় হাট-বাজার না বসার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় খুবই বিপদে আছি।

তিনি বলেন, গত হাটে তো ক্রেতা না পেয়ে টমেটো ফেলে দিয়ে এসেছি। এখন চিন্তা, আগামীর দিনগুলোতে কি হবে!

সফল এ কৃষক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের চাষাবাদে যথেষ্ঠ উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। কিন্তু সরবরাহ ও বেচাকেনা নিশ্চিত না করা গেলে ধ্বংস হবে কৃষক শ্রেণী। এতে লোকসান গুণতে হলে হাল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

আমির হোসেন জানান, গত বছর বন্যার কারণে তিনিসহ এ অঞ্চলের কৃষকেরা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। সেই ক্ষতির রেশ না কাটতেই আবারও ক্ষতির মুখে পড়লে ‘নিঃস্ব’ হবেন কৃষকেরা।

কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়ে সাবলম্বী হওয়ার পেছনের বড় কারণ কি ছিলো এমন এক প্রশ্নের উত্তরে এই আদর্শ কৃষক বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমি এক ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে আরও তিন রকম সবজির চাষ করেছি। জমির আইলে ঘাস চাষ করেছি। ওই ঘাস থেকে আমার ২৫টি ছাগল, দুই-তিনটি গরু পালন করছি। এছাড়াও জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বেশি করেছি। ’

কৃষিতে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে যখন কৃষি কাজে আসি তখন আমি জমির কাজ করতাম, স্ত্রী ‘পানি ছেঁচা ডোঙ্গা দিয়ে’ জমিতে পানি দিতেন। ওই সবজি আমি স্থানীয় ভরতখালীর হাটে বিক্রি করি।

আমির হোসেনের সঙ্গে কথার ফাঁকে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে অর্থাভাবে পড়াশুনা বন্ধ হওয়ায় ১৯৮৬ সালে এক টুকরো জমিতে চাষাবাদের হাতে খড়ি তার। শুরুতেই পেঁপে ক্ষেতের নিচে চাষ করেন আদা। এতে উভয় ফসলেই ভালো ফলন পেয়ে উৎসাহ বেড়ে যায় আমির হোসেনের। এরপর থেকে প্রতিটি ফসল চাষেই ‘সাথী ফসল’ হিসেবে আরও তিন রকম সবজি রাখেন। এভাবে আর পিছনে ফিরতে হয়নি কৃষক আমির হোসেনের। গত ৩০ বছরে সবজি বিক্রির টাকায় তিন একর জমি কেনেন, আরও এক একর জমি বর্গা নিয়ে হরেক রকম সবজি চাষাবাদ করছেন। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। এক ছেলে ও দুই মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। ছেলে একটি সরকারি চাকরিও পেয়েছেন, বিয়ে হয়েছে বড় মেয়ের, ছোট মেয়ে পড়ছেন বগুড়ার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সবকিছুই হয়েছে এই চাষের টাকায়।

স্থানীয় মুক্তিনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পরিমল কুমার বাংলানিউজকে বলেন, ‘কৃষক আমির হোসেন একজন আদর্শ কৃষক। তিনি কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে গোটা এলাকাকে অন্যভাবে তুলে ধরেছেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২০
ইউজি/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।