গত বছর এমন সময়ে যে কাঁকড়া চীন, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে এবার সে কাঁকড়া পানি থেকে এখনো আলোর মুখ দেখেনি। চাষিরা বলছেন, রপ্তানির আশায় কাঁকড়া চাষ করে চাহিদা না থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
জানা যায়, গত বছর স্ত্রী কাঁকড়া দুই হাজার ৯৫০ টাকা ও পুরুষ কাঁকড়া এক হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেই কাঁকড়া বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ৩০০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকেও ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা কেজিও বিক্রি করা হয়েছে।
পাথরঘাটার সবচেয়ে বড় কাঁকড়ার আড়তদার সমির চন্দ্র ব্যাপারি বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর চাষিদের কাছে ২৫০০ টাকা কেজিতে কিনেছি। সেই কাঁকড়া এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় পাইকাররা বলছে। বর্তমানে চীনে রপ্তানি না থাকায় চাষিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
স্থানীয় এক কাঁকড়া আড়তদার বলেন, ঢাকার পাইকাররা আমাদের জানিয়েছে, চীনে কাঁকড়া যায় না, তাই তারাও কিনছে না। এজন্য আমরাও চাষিদের থেকে কাঁকড়া কিনছি না। পেইচ প্রকল্পের সহকারী ভ্যালুচেইন ফ্যাসিলিটেটর গোলাম মোর্শেদ রাহাত বলেন, ‘পিকেএসএফ’র সহযোগিতায় স্থানীয় এনজিও সংগ্রামের মাধ্যমে পাথরঘাটা উপজেলার ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক উদ্যোক্তাদের কাঁকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করি। এতে তারা গত কয়েক বছরে অনেক লাভবান হয়েছে। তবে এ বছর কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় তাদের প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুণতে হবে।
পাথরঘাটা উপজেলা কাকড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি ও কাঁকড়া চাষি উত্তম মজুমদার এক একর জমিতে নির্মিত ঘেরে আড়াই হাজার টাকা কেজিতে কাঁকড়া চাষ করছেন। তিনি সেখানে প্রতি মাসে চার লাখ টাকার খাবার দিয়ে তিন মাস ধরে পরিচর্যা করে আসছেন।
উত্তম মজুমদার বলেন, সুন্দরবন এলাকা থেকে ২০ লাখ টাকার কাঁকড়া সংগ্রহ করে তিন মাস পরিচর্যা করে খরচ হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। অথচ এখন ৩০০ টাকা দরে মূল্য দাঁড়ায় শুন্যের কোটায়। তিনি বলেন, বর্তমানে কাঁকড়ার পেটে ডিম চলে এসেছে তাই বিক্রি না করলে সেগুলো মরে যাচ্ছে।
পাথরঘাটা কাঁকড়া চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোজ বেপারী বলেন, যেখানে কেজি বিক্রি করেছি ২৫০০ টাকা সেখানে এ বছর মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা কেজি বলছে পাইকাররা। এতে আমরা প্রচুর লোকসানে পড়তে যাচ্ছি। সঠিক সময় সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে না পারলে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবোনা।
একই এলাকার নারী উদ্যোক্তা পুতুল রানী ৩৩ শতাংশ জমিতে সাড়ে ৭০০ কেজি কাঁকড়ার চাষ করে লোকসানের মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে উপজেলার মনোজ ব্যাপারি, তপু, কিশোর, মহিন্দ্র, জোৎস্না রানী ও শিল্পী রানীসহ শতাধিক উদ্যোক্তা গোনট পূর্ণাঙ্গ কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন।
তবে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু চাষিদের একটু ধৈর্য ধরে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে এবং বাড়তি পরিচর্যা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বাজার খারাপ হওয়ার কারণে এর প্রভাব আমাদের দেশে পড়ছে। অতি শিগগিরই একটি সমাধান আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২০
এনটি