করোনা ভাইরাস ঠেকাতে জেলায় জেলায় লকডাউন ও গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় শ্রমিক সঙ্কটে পরেছে বগুড়ার কৃষকেরা। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে এখনও অনেকেই ধান ঘরে তুলতে পারেননি।
রোববার (১৭ মে) জেলার শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, শেরপুর, ধুনটসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
এদিকে রোববার দুপুর ২টার দিকে একদল শ্রমিকের দেখা মেলে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের বীরগ্রাম বাসস্টান্ড এলাকায়। ৯ জন শ্রমিকের এ দল কাস্তে, সিকা, ভাড় ও কাপড়ের পোটলা নিয়ে হেঁটে এগিয়ে চলছেন সদর উপজেলার দিকে। তাদের বাড়ি জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায়।
আনোয়ার হোসেন, মো. নজরুল ইসলাম, শেকুল প্রামানিক, সামাদ আলী, তোফাজ্জলসহ সঙ্গীয় দলটির দলনেতা এজাজ উদ্দিন। তারা শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়ন এলাকায় টানা পাঁচদিন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শেষে সদর উপজেলার শেখেরকোলা উইনিয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
শ্রমিকদের দলনেতা এজাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সদর উপজেলার শেখেরকোলা ইউনিয়নের হায়দার আলীর সঙ্গে ১৮ বিঘা জমির ধানকাটা-মাড়াইয়ের চুক্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, গত শনিবার ধানকাটা শ্রমিকের খোঁজে মোটরসাইকেলে করে শাজাহানপুর উপজেলায় ঘুরছিলেন কৃষক হায়দার আলী। সেখানে দেখা মেলে তাদের সঙ্গে। হায়দার আলী তার প্রতিবিঘা জমির ধানকাটা ও মাড়াইসহ আনুষঙ্গিক কাজে পারিশ্রমিক দেবেন ৩ হাজার টাকা। সঙ্গে তিনবেলা খাবার।
তিনি আরও বলেন, টানা পাঁচদিন তারা শাজাহানপুর উপজেলায় কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী এখন যাচ্ছন সদর উপজেলার শেখেরকোলা ইউনিয়েনের দিকে। পরিবহন বন্ধ থাকায় হেটেই রওনা দিয়েছেন।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে শ্রমিকের এমন সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে গত শনিবার রাতের বৃষ্টিতে দিশেহারা হয়ে পরেছেন অনেক কৃষক। কিন্তু ধানকাটা শ্রমিক মেলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক তানসেন, মোজাফ্ফর হোসেন, তায়েব আলী, সোনা মিয়াসহ একাধিক কৃষক জানান, বিগত বছরগুলোতে ধানকাটা ও মাড়াইয়ে শ্রমিকের সন্ধান পেতে এতো বেগ পেতে হয়নি। এবার করোনার কারণে শ্রমিক সঙ্কটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বগুড়ার কৃষকেরা।
তারা বলেন, এ বছর বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ধানকাটার জন্য শ্রমিক ঠিক করতে হয়েছে। পরিবহন বন্ধ থাকায় অন্যান্য জেলাগুলো থেকে মৌসুমি শ্রমিক আসতে না পারায় জেলার মধ্যেকার শ্রমিকের কদর বেড়েছে।
শেরপুর উপজেলার কৃষক মোন্তেজার ভূঞা জানান, চুক্তি অনুযায়ী জমির দূরত্ব বুঝে প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে ধানকাটা ও মাড়াইয়ে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে। সঙ্গে তিনবেলা খাবার।
বর্তমানে বাজারে ধানের দাম ভালো। শ্রমিক সঙ্কটে মজুরি বেশি হলেও অতি দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারলে ভালো দাম পাবে বলেও যোগ করেন কৃষকেরা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় এবার বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান ঘরে তুলতে কিছুটা ধীরগতি চলছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবে গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর জেলাগুলো থেকে শ্রমিক আসতে না পারায় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বিশেষ ব্যবস্থায় অন্য জেলা থেকে ৫২ থেকে ৫৩ হাজার শ্রমিক আনা হয়েছে। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলায় ধানকাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন। শেরপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ধানকাটা প্রায় শেষের দিকে। ওই শ্রমিকগুলো পরবর্তিতে জেলার অন্যান্য উপজেলায় যাবে। এছাড়া তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠন ও দলের মানুষ স্বেচ্ছায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধানকাটার কাজে সাহায্য করছে বলেও যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় মোট ৪৮ শতাংশ জমির ধানকাটা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সব স্থানেই খোঁজ রাখছি। কোনো কৃষকই ধানকাটা ও মাড়াই থেকে বঞ্চিত হবেন না। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২০
কেইউএ/ওএইচ/