ফেনী: ফেনীতে ভেজাল ধানের বীজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন থেকে কেনা চলতি আমন মৌসুমের ব্রি-৫১ জাতের ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি তাদের।
কৃষকদের অভিযোগ, বিএডিসির সরবরাহ করা ধানের বীজে বিভিন্ন ধানের মিশ্রণসহ নিম্নজাতের হওয়ায় কোনোটা পেকে গেছে আবার কোনোটার শীষ বের হয়ে গেছে রোপণের ১৫ দিন হতে না হতেই। ফলে এই মৌসুমে জমিতে আর্থিক বিনিয়োগ ও শারীরিকভাবে শ্রম দিয়েও ফসল যাচ্ছে না তোলা।
আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়লেও কৃষকদের ক্ষতির দায়ভার নিতে চাইছে না কৃষি সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগ। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন প্রান্তিক কৃষকের সঙ্গে। তারা জানান, তাদের ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা।
ফেনীর দাগনভূঞার জায়লস্কর ইউনিয়নের বারাহীগুণী এলাকার মাসুদুল হক চিশতী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে চাকরির চিন্তা বাদ দিয়ে নেমে পড়েন কৃষি কাজে। চলতি মৌসুমে ২০ একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু বিএডিসির বিআর-১১ ও ব্রি-৫১ জাতের বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মাসুদুল হক বলেন, বিএডিসি থেকে বলা হয়, এ জাতের ধান উচ্চ ফলনশীল। এ জাতের ধান গাছের জীবনকাল ১৪৫ দিনের মতো। কিন্তু রোপণের মাত্র ১৫ দিনেই ধানে শীষ চলে এসেছে। অপরিপক্ক এসব শীষে ধান নেই, আছে ভুসি।
তার মতো জেলার ৬ উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে দু শতাধিক একর জমিতে ধান চাষ করেছেন হাজারো কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, বিএডিসির সিল রয়েছে এমন বস্তার বীজে ছিল বিভিন্ন ধানের মিশ্রণ। যার কারণে স্বল্প সময়ে কোনোটা পেকে নষ্ট হচ্ছে আবার কোনোটার শীষ বের হয়ে গেছে। ফলে ফলন বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়ছে ফসল নির্ভর চাষিরা।
বাদশা মিয়া নামের বারাহীগুণী এলাকার আরেক কৃষক বলেন, তিনি ১শ ২০ শতক জমিতে বিআর-২২ জাতের ধান চাষ করেছেন। বীজ কিনেছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে।
তিনি বলেন, এক প্যাকেট ৩শ ১০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে উন্নত জাতের। আর রোপণ করার পর দেখা যায় নিম্ন মানের এবং মিশ্র জাতের ধান।
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আবদুর রহমি, দেলোয়ার হোসেন ও আবুল বাশারসহ ক্ষতিগ্রস্ত বহু কৃষক।
ফেনীর মহিপালস্থ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসির) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ব্রি-৫১ জাতের ১৮ টন বীজ বিক্রি হয়। যা দিয়ে চাষ করা হয় ১৮০ একর জমি।
মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ১শ ৮০ একর জমিতেই ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভেজাল বীজের কারণে এ বিশাল পরিমাণ জমিতে চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা।
কয়েকজন কৃষক জানান, সরকারি বিএডিসি থেকে বীজ কেনার রশিদ চাইলেও দিচ্ছে না তারা।
আর বিএডিসি বলছে, বিক্রয়ের সময় অবশ্যই রশিদ দেওয়া হচ্ছে। আর রশিদ ছাড়া কোনো অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। তবুও বিষয়টি এখন দেখার দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের।
এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর সহকারী পরিচালক (বীজ বিপণন) প্রণব আনন্দ ভৌমিকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, বীজগুলো আমাদের ল্যাবে প্রত্যায়িত হয়ে যায়। ৮০ শতাংশ বীজ গজালেই তা কৃষক পর্যায়ে যায়। এর চেয়ে কম গজালে সে বীজ বিক্রি হয় না। কৃষক পর্যায়ে বিক্রির পর ৮০ শতাংশ না গজালে আমরা মাঠ পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এছাড়া অন্য সমস্যা হলে তা দেখবে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস।
বীজ বিক্রির পর মেমো প্রদানের ব্যাপারে তিনি বলেন, মেমো ছাড়া কোনো ধরনের অভিযোগ গ্রহণ করা হবে না। বিএডিসি মেমো ছাড়া কোনো ধরনের বীজ বিক্রি করে না।
এদিকে কৃষি বিভাগ জানায়, ভেজাল ও মিশ্রণ বীজের কারণে প্রায় শতাধিক একর জমির ধানে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনকালে কথা হয় দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে এসে কৃষকের এসব ধানের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং উচ্চ পর্যায়ের নজরে আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
এসএইচডি/এইচএডি