ঠাকুরগাঁও: বৃষ্টি আর বন্যায় নষ্ট হওয়া আগাম জাতের শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত এখন ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকেরা। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনুদান বা প্রণোদনায় ফসলের ন্যায্যমূল্যের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মহামারি করোনায় শহরের কাজ-কাম বন্ধ হয়ে গেছে, তাই ঠিক তখনই আগাম সবজিচাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গ্রামের চাষিরা। শহরে কাজ-কাম বন্ধ হয়ে থাকলেও থেমে নেই গ্রামের চাষিরা। তাইতো ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা ও মহামারি করোনার মধ্যেও আগাম সবজিচাষে ব্যাপক খরচ হয়েছে বলেও জানান ঠাকুরগাঁওয়ের সবজিচাষিরা। নষ্ট ক্ষেত পরিচর্যা করে সবজি উৎপাদনে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। খরচ বেশি হওয়ায় সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সবজিচাষি মতিউর রহমান বলেন, ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার কারণে সবজিক্ষেতে পানি জমেছে। ফলে গাছ মারা যায় এবং আগাছা ভরপুর হয়ে যায়। আবার কিছু কিছু মরাগাছ তুলে ফেলে নতুন করে গাছ লাগাতে হয়। এবার সবজিক্ষেতে যে পরিমান খরচ হচ্ছে সেই তুলনায় সবজির দাম আমরা পাচ্ছি না।
প্রধানমন্ত্রী কৃষিপদকপ্রাপ্ত ঠাকুরগাঁওয়ের আহসান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, ঝড়-বৃষ্টি আর মহামারি করোনার কারণেই সবজি তেমন দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। এবার সবজিক্ষেতে চাষাবাদের খরচ বেশি, কিন্তু দাম কম হওয়ায় হতাশার প্রহর গুনছেন তারা। অনেক চাষির সঙ্গে আলোচনা করেছি , তাদের একটাই কথা, অনুদান নয় প্রণোদনায় সবজির ন্যায্যমূল্য চান তারা। তাইতো তাদের একটাই প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত কী হবে!
সবজিচাষে তৈমুর রহমান বলেন, এবারে ঝড়-বৃষ্টির কারণে সবজিচাষে অনেক খরচ হয়েছে করলা সবজিচাষে বিঘা প্রতি খরচ ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার। লাউয়ের বিঘাপতি খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এখন লাভের দাম প্রতি পিস ১২ থেকে ১৪ টাকা বিক্রি করেছি, যা আগের দাম ছিলো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এখন করলার মণ এক হাজার থেকে ১২শ টাকা, যা আগের দাম ছিলো দুই হাজার থেকে দুই হাজার তিনশ টাকা। সরকারের কাছে জোর দাবি, আমরা সরকারের কাছে প্রণোদনা বা অনুদান চাই না। সবজির ন্যায্যদাম চাই। এদিকে সবজিব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষক সবজির ন্যায্যদাম পাচ্ছেন না। কারণ কৃষকের হাত থেকে সবজি কিনে চার হাতবদল হয়। তাই কৃষকের কাছে সঠিক দামটা পৌঁছায় না।
সবজিবিক্রেতা মান্নান বলেন, কৃষক যখন সবজি বিক্রি করেন তখন ওই এলাকার স্থানীয় সবজিব্যবসায়ীরা ফরেয়ার মাধ্যমে (ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মাধ্যমে) সবজি বিক্রি করে। সেই সবজি আমরা স্থানীয় সবজিব্যবসায়ী ফরেয়ার মাধ্যমে কিনে ট্রাকলোড করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলা ও শহরে পাঠাই। তারপরে সেখানে আড়তদারের কাছে সবজি বিক্রি করে সেই আড়তদার আবার শহরের খুচরা-পাইকারি কাছে সবজি বিক্রি করে। এভাবেই চার হাতবদল হয়ে সবজি বিক্রি করা হয়। ফলে সবজির দাম বেড়ে যায়। তবে ন্যায্যদাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সবজিচাষিরা।
কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঠারগাঁওয়ে আগাম জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো সাড়ে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বন্যা-বৃষ্টির কারণে তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে কৃষিবিভাগ জানাচ্ছে, শীত মৌসুমে সবজি উৎপাদনের যথাযথ প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সবজির বাম্পার ফলন হবে। এই এলাকার মাটি অনেক উর্বর তাই ফলন বেশি। এ অঞ্চলের সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা কারিগরি সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
সবজি সংরক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করাসহ সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ অঞ্চলের কৃষকরা ভূমিকা রাখবে এমন প্রত্যাশা সবার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২০
এএটি