মেহেরপুর: পাকা ও তরকারি হিসেবে সবরি কলার জুড়ি নেই। এছাড়াও উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম বিদ্যমান থাকায় এটি একটি পুষ্টিকর খাবার।
অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি ফলন ও ভালো বাজার দর পাওয়ায় জেলার কৃষকরা দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে ঝুঁকছেন কলা চাষে। এলাকার শতাধিক কৃষক কলার চাষ করলেও, বাজারজাত, পরিবহন ও ফঁড়িয়া ব্যবসা জড়িয়ে জীবিকা নির্বাজ করছেন কয়েক হাজার মানুষ।
মেহেরপুরের চাষিরা জানিয়েছেন, কলা চাষে খরচ কম, অথচ, লাভ বেশি। কারণ, জমিতে একবার চারা রোপণ করলে দুই বছরে তিনবার ফল পাওয়া যায়। দামও ভালো।
গাংনীর হাড়াভাঙ্গা গ্রামের রাইহান আলীর ৭ বিঘা, সাইফুল ইসলাম ৬ বিঘা, শরীফুল ইসলামের ২ বিঘা, ইকবাল হোসেনের সাড়ে তিন বিঘা, রফিক হোসেনের তিন বিঘা, ভাষান আলীর দেড় বিঘা, নিমরাজ হোসেনের ২ বিঘা, আবুল বিশ্বাসের দেড় বিঘা, আলম হোসেনের ২ বিঘাসহ প্রায় শতাধিক কৃষক কলার চাষ করে আসছেন। স্থানীয়রা জানান, মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মাস্টার আশির দশকের প্রথম দিকে ভারত থেকে চারশ জয়েন্ট গভর্নর জাতের কলার চারা এনে এক বিঘা জমিতে চাষ করেন। সেই থেকে জেলায় ধীরে ধীরে কলার চাষ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে মেহেরপুর থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
ওই গ্রামের কলা চাষি আবু হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রতিবছর ৯ বিঘা জমিতে সবরি কলার চাষ করি। এবারও আমার ৯ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে সবরি কলা চাষ করতে খরচ ২৫ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি জমিতে সবরি কলার আড়াইশ এবং ইরি কলার ৪শ গাছ রোপণ করা যায়। আমাদের এলাকা কলা চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকে। কলার ফলন ভালো হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়। তবে এবার করোনার কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে। এবছর অতি বৃষ্টির কারণে কলার গাছ মরে গেছে। তবে এখনো যে পরিমান কলা গাছ অবশিষ্ট আছে কোনো ধরনের খরচ উঠে আসবে। এ বছর বাজার দর ভালো।
সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের কলা চাষি মোনাজাত আলী বলেন, চলতি মৌসুমে আমার আট বিঘা জমিতে সাগর কলার (রং কলা) আবাদ করেছি। গাছে রাসায়নিক সার দিয়ে নয় সম্পূর্ণ জৈব সার দিয়েছি। প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ বিঘা জমিতে কলার চাষ করি।
চাষি মোনাজাত আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে কলার চাষ করতে প্রথম বছরে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিবিঘা জমিতে প্রতিবার চারশ কাঁদি কলা পাওয়া যায়। যা ক্ষেত থেকে পাইকারি বিক্রি করলে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এভাবে ২ বছরে মোট ৩ বার কলা পাওয়া যাবে। পরের ২ বার সার, কীটনাশক ও পানি সেচ বাবদ সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করে খরচ হয়।
সদর উপজেলার রায়পুর গ্রামের সবুজ হোসেন ৪ বিঘা, জালাল উদ্দীন সাড়ে পাঁচ বিঘা ও জালাল উদ্দীন তিন বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। তারা জানান, এ এলাকার শতাধিক কৃষক কলার চাষ করে সফল হয়েছেন। এ এলাকা কৃষকরা সাধারণত সবরি কলার চাষ করেন। উপজেলার শিবপুর গ্রামের কলা চাষি আকছেদ আলী, রমজান আলী জানান, আমাদের এই এলাকা থেকে প্রতিদিনই ৪০/৫০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। বিভিন্ন জেলার ফঁড়িয়া ব্যবসায়ীরা এসে সরাসরি কৃষকদের জমি থেকে কলা কিনে নেন। কলা চাষে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কম ক্ষতি হয়। বছর শেষে খরচ বাদে প্রতি বিঘা জমি থেকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ করা যায়।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। অথচ, গত মৌসুমে জেলায় কলা চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা (ডিডি) স্বপন কুমার খাঁ বাংলানিউজকে বলেন, কলা চাষিদের সমস্যা সমাধানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন। তারা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। জেলায় জয়েন্ট গভর্নর, মেহেরসাগর, দুধসর, সবরি, চাপা, চিনিচাঁপাসহ বিভিন্ন ধরনের পাকা কলার চাষ হচ্ছে। এছাড়া তরকারি খাওয়ার জন্য উন্নত জাতের কাঁচকলা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে কৃষিবিভাগ। ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কলায় কার্বাইড ও বিষ স্প্রে না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মেহেরপুরের সবরি কলার সুখ্যাতি সারাদেশ ব্যাপী। মেহেরপুর থেকে ট্রাক লোড হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে সবরি কলা। সবরি কলা চাষ করে চাষিদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরাও লাভবান হচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২০
এমআইএস/এএটি