ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

জলাবদ্ধতায় সিরাজগঞ্জের ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ ব্যাহত

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২০
জলাবদ্ধতায় সিরাজগঞ্জের ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ ব্যাহত জলাবদ্ধতায় সরিষা চাষ ব্যাহত। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: পরিকল্পনাহীন যত্রতত্র পুকুর খনন করে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এর ওপর দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কৃষকের মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসব কারণে জেলার তিন হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে সরিষা চাষ ব্যাহত হয়েছে। শঙ্কায় রয়েছে আগামী ইরি মৌসুমের আবাদও।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শস্যভাণ্ডর খ্যাত চলনবিল অঞ্চলের উপজেলা তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জের শত শত একর আবাদি জমি কেটে খনন করা হয়েছে পুকুর। পুকুর খননের ফলে আশপাশের কৃষিজমিগুলো থেকে বন্যার পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর এ বছরে প্রায় পাঁচ মাসেরও বেশি সময় স্থায়ী বন্যার কারণে এখনও পর্যন্ত নিম্নভূমিগুলোতে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এসব কারণে সরিষা বা অন্য কোনো ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।
 
উল্লাপাড়া উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের পাশে ভেদুরিয়া বিল, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের দবিরগঞ্জ, উনুখাঁ, তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ, মহিষলুটি, মাধাইনগর, সোনাপাতিল, মাধবপুর, শ্রীকৃঞ্চপুর, মাগুড়া-বিনোদ, ঘরগ্রাম, মহিষলুটি এবং সলঙ্গা থানার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব অঞ্চলের জমিগুলোতে এখনো হাঁটু পানি। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় আগাছায় পূর্ণ হয়ে আছে জমিগুলো। অনেক জমিতেই কৃষককে বেশি খরচ করে আগাছা পরিষ্কার করতেও দেখা গেছে।

জলাবদ্ধতায় সরিষা চাষ ব্যাহত।  ছবি: বাংলানিউজ

কথা হয়, দবিরগঞ্জ এলাকার আবু সাঈদ আব্দুল করিমসহ একাধিক কৃষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাসড়কের দুই পাশে বড় বড় পুকুর হওয়ায় কোনোভাবেই জমি থেকে পানি বের হচ্ছে না। এ কারণে বছরে এক ফসলের বেশি আবাদ হয় না এখানে।
 
মহিষলুটি এলাকার আব্দুল মান্নান বলেন, সরিষা বোনার মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে এলো, তবুও জমির পানি নামছে না। তাই এ বছর সরিষার আবাদও সম্ভব হবে না। আগামী বোরো মৌসুমে আবাদ করতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
 
পুকুর কাটার কারণে মাগুড়া বিনোদ গ্রামের কৃষক শাহিনুরে প্রায় ৩০ বিঘা জলাবদ্ধ ছিল। আগাছায় পূর্ণ হওয়ার কারণে অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে তা পরিষ্কার করে অল্প কিছুদিন আগে সরিষা বুনেছেন। এতে তার দিগুণ খরচ হয়েছে বলেও জানান।

জলাবদ্ধতায় সরিষা চাষ ব্যাহত।  ছবি: বাংলানিউজ

চলনবিল অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, বছরের দু’টো মৌসুম তারা আবাদ করতে পারেন। শীতকালে সরিষা ও এর পরপরই বোরো ধান। এ দু’টি ফসলেই চলে তাদের সারা বছর। মূলত এখানকার কৃষকের বছরের বেশিরভাগ আয় আসে সরিষা থেকেই। কিন্তু এ বছর অনেক কৃষকের সরিষা চাষ করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন।
 
কৃষি বিভাগের সূত্র মতে এ বছর জেলায় তিন হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে সাত হাজার ৪০০ মেট্রিক টনেরও বেশি সরিষার উৎপাদন কমবে। শুধুমাত্র তাড়াশ উপজেলাতেই প্রায় এক হাজার ৭০০ টন সরিষার উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
 
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফন্নাহার লুনা বলেন, যত্রতত্র পুকুর খনন ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে তাড়াশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা এখনো রয়েছে। এতে এ বছর আশঙ্কাজনক হারে সরিষা আবাদ কমছে। তারপরও যেসব জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে, সেগুলোও আগাছা পরিষ্কারের জন্য দিগুণ ব্যয় হয়েছে কৃষকের।

জলাবদ্ধতায় সরিষা চাষ ব্যাহত।  ছবি: বাংলানিউজ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হানিফ বলেন, জেলায় মোট ৪৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা বীজ বোনা হয়েছে। গত বছর ৫২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা বোনা হয়েছিল। সে তুলনায় এবার তিন হাজার ১৩০ হেক্টর কম জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
 
তিনি বলেন, পুকুর খনন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যাসহ নানা কারণে জমিতে এ বছর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সরিষার আবাদও কম হচ্ছে। এতে সাড়ে সাত হাজার মেট্রিক টন সরিষার উৎপাদন কম হবে এবার।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।