বগুড়া: উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডার খ্যাত জেলা বগুড়া। রকমারি ফসল ফলানোর দিকে সারাদেশে এ জেলার কৃষকদের একটা আলাদা পরিচিত রয়েছে।
এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে প্রথম দফায় বন্যার পানি বাড়লেও প্রকৃতির কাছে হার মানেনি এ জেলার কৃষকরা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোদমে জমিতে ফসল ফলাতে নেমে পড়েন তারা।
হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে যান কৃষকরা। চোখের সামনেই তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে জমির ধান। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সবমিলিয়ে সোনারঙা ধানে কৃষকের চোখে-মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এখন সে ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) বগুড়া জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কেবলই সোনারঙা ধানের সমারোহ দৃশ্যমান। ধান গাছের ডগায় থোকায় থোকায় পুষ্ট ধান ঝুলছে। ধানের শীষে সোনারঙা ধারণ করেছে। অনেক ধান পুষ্ট হলেও এখনো কাঁচা রয়েছে। আর যেসব খেতের ধানে শীষ পরিপুষ্ট হচ্ছে তা পরিচর্যায় কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশক স্প্রে করছেন তারা। বলা চলে ধান নিয়ে গ্রামীণ জনপদগুলোতে কৃষকদের এক ধরনের কর্মযজ্ঞতা চলছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার চঞ্চল মিয়া, তন্ময় সাহা, জলিল মণ্ডলসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের ওপর দিয়ে কিছুটা ধকল গেছে। তবে গেল বছরের মতো তাদের ধকল পোহাতে হয়নি। এরপরও দমে যাননি তারা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই তারা জমিতে ফসল ফলাতে নেমে পড়েন।
তারা আরও জানান, ইতোমধ্যেই তারা রোপা-আমনে মৌসুমের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। এসব কাঁচা ধানই বাজারে প্রতি মণ ৯০০ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ধানের এমন দাম তাদের মতো কৃষকদের ব্যাপক আশাবাদী করে তুলেছে বলেও মন্তব্য করেন এসব কৃষকদের।
শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম এলাকার কৃষক সাজ্জাদ শেখ, সাদ্দাম শেখ বাংলানিউজকে জানান, তারা সম্পর্কে দুই ভাই। এবার আমন মৌসুমে তারা প্রায় ২২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। তাদের জমিতে গেল সপ্তাহ থেকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। গাইবান্ধা জেলার একদল শ্রমিক প্রতিবছর তার জমির ফসল কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে থাকেন। তাদের ১৩ সদস্যের দলটি ইতোমধ্যে কাজ করেছেন। মোট আবাদের নয় বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তারা।
তারা আরও জানান, প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াইয়ে খরচ হচ্ছে ২২শ’ থেকে ২৭শ’ টাকা পর্যন্ত। ফসলি মাঠের দুরত্বের ওপর ভিত্তি করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের চুক্তি হয় বলেও জানান তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। জমিতে চাষ করা ধানের মধ্যে রয়েছে মিনিকেট, স্বর্ণা, কাটারিভোগ, রঞ্জিত, ব্রি ধান-১১, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৮৭ এবং বিনা-৭ জাতের ধান অন্যতম।
তিনি জানান, চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত মোট চাষাবাদের ২৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।
এ জেলায় কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল সময়ের ব্যবধানে তরতর করে বেড়ে উঠেছে। যত্ম ও পরিচর্যায় কোনো ঘাটতি রাখেননি কৃষকরা। এ বছর রোগ বালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম ছিল। এখন ব্যাপক হারে ধানকাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। সবমিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি কৃষক। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাবে বলে আশা করছেন কৃষিবিদ ফরিদুর।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
কেইউএ/আরআইএস