ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কৃষিপণ্যকে সন্তানের মতো ভাবেন যিনি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
কৃষিপণ্যকে সন্তানের মতো ভাবেন যিনি নিরালাপুঞ্জির পানচাষি জনপল। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: নিজের হাতে লাগানো কৃষিপণ্যকে স্বীকৃতি দিয়েছেন নিজের সন্তানের মতো। গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এ কথা বুঝতে কিছুটা আবেগের ধাক্কা খেতে হলো।

সঙ্গে সঙ্গেই উপলব্ধি করা গেল না।  

‘নিজের পান গাছগুলো বাচ্চা মতো’ -দুর্গম পাহাড়ি এলাকার অশিক্ষিত এক যুবকের মুখে এ কথার শোনোর প্রস্তুত ছিলাম না। কথাটা সরল-সহজভাবে বললেও এর অর্থটা কিন্তু গভীরতাসম্পন্ন।  

ব্যতিক্রমী উঁচু মানসিকতা আর উন্নত উপলব্ধিসম্পন্ন এ ব্যক্তির নাম জনপল সুচিয়াং। বয়স ত্রিশ-পঁয়ত্রিশের কোঠায়। যে ব্যক্তি বোধবিবেচনার মানদণ্ডে একটি বাক্য দ্বারা নিজের শাশ্বত সরলতাকে মেলে ধরেছে প্রকাশ্যে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি জনপদ নিলারাপুঞ্জি।  এখানে বিশেষ ধরনের টিলাবাওয়া পুরনো মডেলের মিতসুবিসি গাড়ি ছাড়া যাওয়া যায় না। কিন্তু সেই গাড়িতে গেলেও শরীরের হাড়গুলো যে একটার পর একটা ঝাকুনিতে কথা বলে বলে উঠে!

সম্প্রতি জনপল সুচিয়াংদের পাহাড়ি পাড়ায় এসে দেখা গেল, তাদের বাড়িগুলো টিলার বাঁকে বাঁকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। এ পাড়াময় স্থান থেকে পাশে চোখ ফেরালেই দূর পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে এসে দারুণ এক মনোমুগ্ধতায় হারিয়ে যাবেন নিমেশেই।  

জনপল বাংলানিউজকে বলেন, এই নিরালাপুঞ্জিতে প্রায় আড়াইশ ঘর রয়েছে। এখানের সবাই খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী। এখানে সবারই প্রধান এবং কারো কারো একমাত্র পেশা পান চাষ। এই পানের নাম– খাসিয়াপান। এই পুঞ্জিতে গাড়ি ছাড়াও আসা যায় না। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এখানে আসতে প্রায় চল্লিশ/পঞ্চাশ মিনিট লেগে যায়।  

পানের পরিপূর্ণতা এবং প্রাপ্তিতা সম্পর্কে এই পাহাড়ি পানচাষি বলেন, চারা লাগানো প্রায় তিন বছর পর গাছে পান ধরে। এর আগে ধরে না। এর মাঝে প্রতিদিন একটু একটু যত্ন তো করতেই হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পানের জমিতে কাজ চলে। তিন জন শ্রমিক কাজ করে। তাদের আড়াইশ টাকা করে দিতে হয়।  বারোটা পানে এক ছলি। আট ছলিতে এক কান্তা। বিশ কান্তায় এক কুঁড়ি। এই এক কুঁড়ি পানের দাম বর্তমান বাজারে সাতশ টাকা থেকে আটশ টাকা। আনসিজনে (যখন মৌসুম নয়) এই দাম ডাবল হয়ে যায় বলে বিপণন প্রসঙ্গে জানান এই পাহাড়ি পানচাষি।  
 
স্ত্রীসহ মেরিন (৮) এবং দুই মেয়েকে নিয়ে টিলার ওপরের ছোট সংসার তার। ‘তিন টিলায় আমার প্রায় ছয় হাজার পানগাছ রয়েছে। সব খরচপাতি বাদ দিয়ে মাসে প্রায় আট/দশ হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে’ বলে খাসিয়া পানচাষি বলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।