১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
১০ম কিস্তির লিংক
কান ঝাঁঝানো সিঁটি বাজিয়ে চলছে টেলিস্ক্রিন। ত্রিশ সেকেন্ড ধরে একই স্বরে বাজলো সে শব্দ। সকাল সোয়া সাতটার সাইরেন, অফিস কর্মীদের ঘুমভাঙ্গার সময়। বিছানা ছাড়ল উইনস্টন। ন্যাংটো। আউটার পার্টির একজন সদস্য কাপড়ের জন্য বছরে ৩০০০ কুপন পায়, তার মধ্যে একটি পাজামায়ই খরচ হয়ে যায় ৬০০। হাত বাড়িয়ে চেয়ারের উপরে রাখা ময়লা গেঞ্জি আর শর্টস তুলে নিল। তিন মিনিটের মধ্যেই শুরু হবে শরীর চর্চা। এসময় তার উঠল কাশির দমক। ঘুম থেকে উঠলেই এমনটা হয় উইনস্টনের। এতে তার ফুঁসফুঁস পুরোই ফাঁকা হয়ে গেল। চিৎ হয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ হাঁপানোর পর স্বাভাবিক নিশ্বাস নিতে পারলো। কাশির দমকে তার শিরাগুলো ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম। ওদিকে আলসারের ব্যথাও চাগাড় দিয়ে উঠেছে।
‘ত্রিশ থেকে চল্লিশের গ্রুপ!’ কর্কশ নারী কণ্ঠ বেজে উঠল। ‘ত্রিশ থেকে চল্লিশের গ্রুপ! অনুগ্রহ করে জায়গায় দাঁড়ান। ত্রিশের থেকে চল্লিশের!...’
টেলিস্ক্রিনের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়ালো উইনস্টন। স্ক্রিনে ততক্ষণে লিকলিকে অথচ পেশীবহুল, জোব্বা গায়ে, শরীর চর্চার জুতো পায়ে তরুণীর মত দেখতে এক নারীর ছবি ভেসে উঠেছে।
‘হাত বাঁধো, হাত ছাড়ো!’ তারস্বরে বলল মেয়েটি। ‘আমার সঙ্গে সঙ্গে... এক, দুই, তিন চার! এক, দুই, তিন, চার! কাম অন কমরেডস, জীবনের কিছুটা সময় এখানে দাও! এক, দুই, তিন, চার! এক, দুই, তিন, চার!...’
কাশির দমকও উইনস্টনের মন থেকে স্বপ্নের জের পুরো কাটিয়ে দিতে পারেনি। এখন তালে তালে যে নড়াচড়া চলছে তাতে স্বপ্নের বিষয়গুলোই ফিরে এলো মন জুড়ে। যন্ত্রের মত হাত দুটো সামনে পেছনে ছুঁড়তে ছুঁড়তে, আর শরীর চর্চায় স্ক্রিনের সামনে যথার্থ মনে করা হয়—এমন একটি সন্তুষ্টির ভাব চেহারায় মেখে নিয়ে, ভাবনা জুড়ে ছেলেবেলার সেই অনুজ্জ্বল সময়টিকে নিয়ে আসার কসরত চালিয়ে গেল। অস্বাভাবিক কঠিন সময় ছিল তখন। পঞ্চাশের দশকের শেষভাগটা মনে আছে। এর আগের সব স্মৃতিই ঝাপসা। বাইরে কোনও রেকর্ড থাকত না যার কথা উল্লেখ করা যায়, এমনকি নিজের জীবনের বাহ্যিক রেখাগুলোও উহ্য হয়ে গেছে। অনেক কিছুই আপনার মনে পড়বে, যা খুব সম্ভবত ঘটেই নি, অনেক ঘটনার কথা আপনার মনে হবে, কিন্তু সেগুলোর আবহ ধরতে পারবেন না, আবার দীর্ঘ একটা সময় ছিল পুরো শূন্যতার, যখন আপনি আসলে কিছুই করতে পারেননি। তখন সবকিছুই ছিল ভিন্ন রকম। এমনকি দেশগুলোর নাম, মানচিত্রে সেগুলোর আকারও ছিল ভিন্ন।
এয়ারস্ট্রিপ ওয়ানের কথাই ধরুন না। তখন একে বলা হতো ইংল্যান্ড বা ব্রিটেন। তবে সে নিশ্চিত লন্ডনকে লন্ডনই বলা হতো।
তার দেশ যুদ্ধ করছে না, এমন কোনও সময়ের কথাই উইনস্টনের মনে আসে না, তবে তার শৈশবে একবার দীর্ঘ শান্তিবিরতির কথা মনে আসে। তার শৈশবের যত স্মৃতি তার অন্যতম একটি বিমান হামলা। একদিন সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে যে হামলা হয়েছিল। সম্ভবত কলচেস্টারে যখন আনবিক বোমা পড়েছিল, সেই সময়ের ঘটনা। ঠিক হামলার কথা তার মনে নেই, কিন্তু মনে আছে বাবা শক্তহাতে তার হাতটি ধরে আছেন আর ওরা সবাই মিলে দ্রুত নিচের দিকে নামছে মাটির গভীর সুরঙ্গ পথ ধরে ঘুর্ণায়মান একটি সিঁড়ি বেয়ে। পায়ের তলার সিঁড়ির ধপধপ শব্দ হচ্ছিল। আর সে এতই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল যে কান্না জুড়ে দেয়।
তারা কিছুক্ষণ থেমে জিরিয়েও নিয়েছিল। তার মা তার চিরাচরিত ধীর আর স্বাপ্নিক চলাচলের ভঙ্গিমায় তাদের চেয়ে অনেক পিছনে পড়ে এগুচ্ছিলেন। তার কোলে শিশু ছোটবোনটি—অথবা হতে পারে স্রেফ একটি কম্বলের বস্তা কাঁখে করেই তিনি নামছিলেন। তার নিশ্চিত মনে পড়ে না, সে সময় তার ছোট বোনের জন্ম হয়েছিল কি হয়নি। অবশেষে তারা একটি স্থানে গিয়ে পৌঁছালো, সেখানে ভীষণ শোরগোল আর হাজার মানুষের ভীড়। তার মনে পড়ে ওটি সম্ভবত একটি টিউব স্টেশন ছিল।
১২তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১১) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।