সৈয়দ ইকবাল। গত শতকের সত্তর দশকের লেখক।
গতকাল ২৪ ডিসেম্বর ‘বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’ অফিসে যে আড্ডা বসে, তাতে আর্টিস্টি হিসেবে তার হাতেখড়ি, লেখালেখি, চিত্রকলা নিয়ে ভাবনা ইত্যাদি ব্যক্তিগত নানা বিষয় উঠে আসে। উঠে আসে তার সময়ে চট্টগ্রামের কবি সাহিত্যিকদের কথাও। উঠে আসে তার সমসাময়িক লেখক ও শিল্পীদের নানা অনুষঙ্গ। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের কনসালটেন্ট এডিটর জুয়েল মাজহার, ফিচার এডিটর ফারুক আহমেদ ও সাহিত্য বিভাগীয় সম্পাদক তানিম কবির।
আর্টিস্ট হিসেবে শুরুর সময় সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ ইকবাল তার পারিবারিক প্রসঙ্গ টানেন। চট্টগ্রামের মুসলিম মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ইকবালকে মুখোমুখি হতে হয়েছে শিল্পে পারিবারিক বাধার সামনে। প্রতিবেশি এক গুজরাটি পরিবারে আঁকাআঁকি দেখে দেখে তিনিও শিল্পের এ মাধ্যমের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি মনে করেন, শিল্পী দুধরনের হয়। কেউ জন্মগতভাবে শিল্পীসত্তা নিয়ে আসেন। আবার কেউ চর্চা করতে করতে শিল্পী হয়ে ওঠেন। তবে সৈয়দ ইকবালের শুরুটা হয়েছিল দুষ্টুমির ছলে। প্রতিবেশির ফেলে দেয়া রঙের কৌটায় ম্যাচের কাঠিতে রঙ লাগিয়ে আঁকাআঁকি করতেন। এভাবে আঁকিবুকি করতে করতে একসময় ছোট্ট আঁকিয়ে হয়ে ওঠেন।
সৈয়দ ইকবালের ছবির ক্যানভাসে বিচিত্রভাবে উঠে এসেছে নারী প্রকৃতি। নারীর প্রতি তার মনোযোগ খুবই নিবিড়। তার শিল্পের প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে নারী। কিন্তু এই নারীপ্রীতি একবারে শৈশব থেকেই। শৈশবের সেই অপর্ণা চরন স্কুলের মেয়েদের সঙ্গে নিজের স্কুল পর্যন্ত আসা যাওয়ার মধ্য দিয়ে শিল্পীর এমন নারীপ্রেম ধীরে ধীরে পরিপক্ক হয়ে ওঠে শিল্প ও জীবনরসে।
এরপর চট্টগ্রামের বিভিন্ন ছোটকাগজের প্রচ্ছদ আঁকা থেকে শুরু করে আঞ্চলিক পত্রিকা ‘পূর্বকোণ’, ‘পূর্বদেশ’সহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ছবি আঁকেন সৈয়দ ইকবাল। সে সময় তিনি কবি ময়ূখ চৌধুরীর ‘অসভ্য সভ্য’ বইয়ের কভার করেন বলে জানান। শৈল্পিক দিক থেকে নারী বিষয়ক নগ্নতার বিষয় থাকায় বইটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। সৈয়দ ইকবাল জানান, তখনকার সময়ে ছবি আঁকার ব্যাপারটি নিয়ে ধর্মীয় আপত্তি ও মনস্তত্ত্ব প্রবল ছিল।
লেখালিখি-শিল্পের সূত্র ধরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য পান বলেও জানান সৈয়দ ইকবাল। কাজের টানে আসেন ঢাকার ওয়ারিতে। আব্দুল গাফফার চৌধুরী সম্পাদিত তৎকালীন দৈনিক জনপদেও ছবি আঁকেন, গল্প লিখেন। পত্রিকাটির তখন সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন আবুল ফজলের ভাই আবুল মনসুর। গল্প প্রকাশের সূত্র ধরে এসব বড় মাপের মানুষদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।
তার প্রথম গল্প প্রকাশ হয় আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ সম্পাদিত ‘কণ্ঠস্বর’-এ। কণ্ঠস্বরে গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ, নির্মলেন্দু গুণসহ অনেকের ছায়ায় আসায় তার সাহিত্যিক যাত্রায় নতুন পরিবর্তন আসে। প্রথম প্রকাশিত ‘কুলশ আর মৃত্যুবুড়ো’ গল্পে মান্নান সৈয়দের মুগ্ধতা অর্জন করেন সৈয়দ ইকবাল।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫