ঘোড়া
সে ভালোবাসত আস্তাবল, ঘোড়া আর ঘাসের ঘুঙুর। প্রান্তরের নিঃসীম আঁধারে
সে খুঁজে নিত হাহাকার, হ্রেষাধ্বনি আর অবলুপ্ত হাড়ের গোঙানি—চোয়ালে
ফেনার দাগে সে শুনে নিত মৃত্যুর তুমুল স্বর।
খড়ের গম্বুজ ধরে হেঁটে যেতে যেতে সে দুহাতে মেখে নিত জীবাশ্মের ধূলিচিত্র,
ভায়োলেটরঙা রোদ আর ভ্রমরের ডানা। মৃত ঘোড়াদের হাড়গোড় আর মমির
ভেতর সে খুঁজে পেত ভাঙা বেহালার ছড়।
তীর্থপথ ধরে সে ঠিকই পৌঁছে যেত তার প্রিয় আস্তাবলে—নিওলিথ অন্ধকারে।
সে ভালোবাসত ঘোড়ার সটান শিশ্ন, কিউপিডের ধনুক, প্রান্তরের হাওয়ায় হেঁটে
যেতে যেতে সে শুনে নিত ডাকাবুকো ডাকিনীর ডাক।
পৃথিবীর সব আশ্রয়ই সে খুঁজে পেত রাত্রির গহিন আস্তাবলে—ঘোড়া, ঘাস আর
ঘুমঘোর খড়ের গাদায়।
টিয়া
এ শীতে যাচ্ছে না কিছুতেই পাখিঘুম—
পেরিয়ে গাঙ্গেয় উপত্যকা
ওরা উড়ে আসে
পর্ণমোচী জঙ্গলের ঝোপে; আঙুর বনের কাছে—
শ্বেতধোঁয়া সরোবর পার হয়ে ওরা চলে আসে
এই কলাই খেতের ফুলে,
ছড়িয়ে সুরের স্বরলিপি
লেজ নাড়ে অই সবুজ সৈনিক ঝাঁক—
মহুয়ার মধু খেয়ে ঠোকরাতে থাকে
ঘুমঘোর চঞ্চুর ছুরিতে—
আকাশের রঙ যখন ছড়িয়ে দেয়
তার রক্তাভ কোরক—
শুকপাখি উড়ে আসে হীরের অঙ্গুরি ফেলে
অই ইস্পাতের বারান্দায়
পোষমানা ভৃত্যের মতন—
সিন্ধুর হরিৎ হাওয়ার স্মৃতি বুকে নিয়ে ঢুকে পড়ে
অই রক্তঘুম খাঁচার খোঁয়াড়ে!
জলডুমুর
জলের পয়ার খুলে পেয়ে যাই সেই হারানো ঘুঙুর। রক্তপাথরের ঘুম—যারা আজ
চেয়েছিল পেতে শঙ্খশাদা নরোম শয্যায়—দ্রবীভূত দ্রাক্ষারসে যারা খুঁজেছিল মদ, মোহ,
মেহ—পাপড়ি ও পালক খ’সে পড়া আরকসমুদ্রে যারা গেয়েছিল মন্দ্রিত সোনাটা—দ্যাখো
তাদের আস্তিনে আজও জড়ো হয় রতির রজত—জলডুমুরের গান আর জাফরান ঘুম!
পাপবিদ্ধ কুঠুরি ও কুঠার হেনে যারা গেয়েছিল কাম-কুহু-কেকা স্বর—দ্যাখো নোঙরের
নগ্ন বালুতটে গাঁথা আছে তাদের করুণ কান্না—কীটদষ্ট লগবুকে লেখা আছে তাদের
রোদনস্মৃতি!
তরণির ঘুমপথে দ্যাখো দাঁড়িয়ে রয়েছে রাতচেরা মেঘের মাস্তুল!
বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৫