১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
২১তম কিস্তির লিংক
___________________________________
অন্যদের জন্য এই বকবকানি—শোরগোল বা হাঁসের মতই প্যাঁক প্যাঁক ছাড়া আর কিছুই নয়। আর আপনি যখন শুনতেই পাবেন না লোকটি কী বলছে, তখন সেই কথা নিয়ে আপনার মনে কোনও সন্দেহও দানা বাঁধবে না। হতে পারে সে গোল্ডস্টেইনের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছে, আর চিন্তা অপরাধী ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরতর শাস্তির দাবি তুলছে, হতে পারে সে ইউরেশীয় সেনাদের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ফোঁসফাঁস করছে, নতুবা হতে পারে সে বিগ ব্রাদারের কিংবা মালাবার যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিকদের প্রশংসা করছে—এর কোনও কিছুতেই কিছু আসে যায় না।
যাই থাক-না থাক এই বকবকানিতে, মূল সূর একটাই তা হচ্ছে—খাঁটি গোঁড়ামি আর খাঁটি ইংসক। একটি চোখহীন মুখমণ্ডলের চোয়ালটি যখন অবিরত উপর-নিচ করে যাচ্ছিল, তা দেখে উইনস্টনের মধ্যে একটি কৌতূহলের অনুভূতি কাজ করল, তার মনে হলো লোকটি আসলে রক্ত-মাংসের মানুষ নয়, স্রেফ একটা কুশপুতুল। লোকটির মস্তিষ্ক থেকে এই কথা বেরিয়ে আসছে না, আসছে তার বাগযন্ত্র থেকে। তার ভেতর থেকে যা কিছু বেরিয়ে আসছে তা বাস্তবিক অর্থে কোনও কথা নয়, কেবলই শব্দের সমাহার; অসচেতনতায় উচ্চারিত হৈচৈ ধ্বনি, ঠিক যেন হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক।
এক মুহূর্তের জন্য থামল সাইম, চামচের হাতল ধরে স্ট্যুর মধ্যে নাড়ানাড়ি করছে। অন্য টেবিল থেকে প্যাঁকপ্যাকানি চলছেই, যা চারিদিকের শোরগোলের মধ্যেও সহজেই ঢুকে পড়ছে কর্ণকুহরে।
‘নিউস্পিকে একটা শব্দ আছে’—বলল সাইম, ‘তুমি জানো কিনা জানি না: ‘ডাকস্পিক, মানে হাঁসের মত প্যাঁক-প্যাঁকানো। এটি সেইসব মজার শব্দের একটি যা একই সঙ্গে দুটি পরস্পরবিরোধী অর্থ দেয়। তুমি তোমার প্রতিপক্ষের কারও সম্পর্কে কথাটি বললে তাকে হেয় করা হবে আর যদি তুমি তুষ্ট এমন কারও প্রসঙ্গে বলো, তাহলে সেটা হবে প্রশংসা। ’
প্রশ্নাতীতভাবেই সাইমকে বাষ্পায়িত করে দেওয়া হচ্ছে, আরও একবার ভাবল উইনস্টন। তার এই ভাবনার মধ্যে একধরনের দুঃখবোধও কাজ করছিল। যদিও সে ভালো করেই জানতো সাইম তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, কিছুটা অপছন্দ করে আর যদি একটিবারও তার কাছে মনে হয় সে চিন্তা অপরাধী তাহলে তাকে ফাঁসিয়ে দিতে এতটুকু পিছপা হবে না। বোকার মত কিছু একটা ভুল সাইম করে ফেলেছে। কিছু একটা অভাব ওর মধ্যে দেখা যাচ্ছে: অসাবধানতা, উদাসীনতা, বা নির্বোধের মত কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলেছে। ওকে তো ব্যত্যয়ীদের কেউ একজন বলা যাবে না। ইংসকের নীতিতে বিশ্বাসী, বিগ ব্রাদারের প্রতি বিশ্বস্ত, যে কোনও জয়ে আনন্দের সীমা থাকে না, উৎপথগামীদের ঘৃণা করে, আর তা যে কেবল অত্যন্ত আন্তরিকতায় করে তাই নয়, সীমাহীন উদ্দীপনার সাথেই করে।
পার্টির সব তাজা খবরই সে রাখে, যেসব খবর অন্য অনেক সদস্য গায়ে মাখে না তা নিয়েও সে থাকে সমান উদ্দীপ্ত। তারপরেও মৃদু একটা অশোভনতা ওকে যেন ঘিরে থাকে। ও এমন কিছু বলে, যা না বললেই বরং ভালো হতো, অনেক বই পড়ে, চিত্রকর আর গায়কদের দেখতে চেস্টনাট ট্রি ক্যাফেতেও তার নিয়মিত গতায়ত। চেস্টনাট ট্রি ক্যাফেতে যাওয়া যাবে না এমন কোনও আইন নেই। নেই কোনও অলিখিত বিধান। তারপরেও স্থানটিকে কেন জানি অশুভ বলেই জ্ঞান করা হয়। দলের পুরনো, অসম্মানিত নেতারা শেষ ধোলাই হওয়ার আগে এখানেই আড্ডা জমাতো। বলা হয়, দশক কয়েক আগে গোল্ডস্টেইনকেও বার কয়েক ওখানে দেখা গেছে। এই থেকে সাইমের কপাল-লিখন পড়ে ফেলা খুব কঠিন কিছু নয়। একথা ধ্রুব সত্য, সাইম যদি তিন সেকেন্ডের তরেও উইনস্টনের গোপন এই ধারণার কথা জানতে পারে, তার বিরুদ্ধে থট পুলিশকে নালিশ করে দিতে সে একদণ্ড সময়ও নেবে না। অন্য যে কেউই তাই করবে: কিন্তু সাইম এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। উদ্দীপনা দেখালেই তা যথেষ্ট নয়। গোঁড়ামি অবচেতনতারই নামান্তর।
মাথা তুলল সাইম। ‘এই ঢুকল পারসন্স’—বলল সে।
গলার স্বরে এমন একটা ভঙ্গি ছিল যেন সে বলতে চেয়েছিল, ‘ফালতু নির্বোধটা এলো’। ভিক্টরি ম্যানসন্সে উইনস্টনের প্রতিবেশি পারসন্স, ততক্ষণে রুমের ওপ্রান্তে যাওয়ার যুদ্ধে নেমেছে। মাঝারি উচ্চতার মোটাসোটা লোকটার মাথায় সাদা চুল, ব্যাঙমুখো চেহারা। পঁয়ত্রিশেই তার ঘাড়ে-গর্দানে আর ভুঁড়িতে দলা দলা চর্বি জমেছে। তবে তার হাঁটাচলায় একটা বালকসুলভ ভঙ্গিমা আছে। তার পুরো অবয়বে মনে হয়, ছোট একটা বালক, গায়ে-গতরে একটু বেশি বেড়ে গেছে। নীতি মেনে কাপড় পরেও এই ভাব সে কাটাতে পারে না।
২৩তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২২) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।