১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
২২তম কিস্তির লিংক
___________________________________
স্পাইজের নীল শর্টস, ধূসর শার্ট আর লাল গলবন্ধ ছাড়া পারসন্সকে দেখা যাবে এমনটা ভাবাও অসম্ভব। তাকে চোখে পড়া মাত্রই দেখা যাবে তার শর্টসের হাঁটুর অংশ আর শার্টের আস্তিন ভাঁজ খেয়ে উপরে উঠে হাত ও পায়ের থলথলে চর্বি তুলে ধরছে। তবে দলের যখন কোনও কর্মসূচি থাকে তখন এই পোশাক ছেড়ে অন্যকিছু পরতেও পারসন্সকে দেখা যায়। ‘হালো, হালো!’ বলে দুজনকেই শুভেচ্ছা জানিয়ে টেবিলে বসে পড়ল। আর সাথে সাথে নাকে এসে লাগল ঘামের ঘন গন্ধ। গোলাপি মুখমণ্ডলটা ভেজা ভেজা। তার ঘামের গন্ধের শক্তি অনন্যসাধারণ। কমিউনিটি সেন্টারে যে কেউ টেবিল টেনিস ব্যাটের হাতল ধরে বলে দিতে পারবে পারসন্স খেলে গেছে। সাইম এক পাতা কাগজ তুলে তার মধ্যে দীর্ঘ এক কলাম—গভীর মনোযোগে পড়তে শুরু করল। হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে একটি কালির কলম চেপে ধরে সেটি টেনে টেনে পড়ছিল।
‘দেখো ব্যাটাকে, লাঞ্চের সময়েও কাজ করছে’—উইনস্টনের গায়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল পারসন্স। ‘কি মনোযোগ, আহা! ওর মধ্যে তুমি এমন কী পাচ্ছো, বুড়ো বালক? আশা করব, আমার জন্য জ্ঞানের কিছু একটা হবে। স্মিথ, বুড়ো বালক, এবার বলছি কেন তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমাকে চাঁদা দেওয়ার কথা ভুলে গেছো বুঝি। ’
‘কিসের চাঁদা?’—টাকার ওপর দরদ থেকেই বলল উইনস্টন। প্রত্যেকের বেতনের চারভাগের একভাগই এই স্বেচ্ছাসেবীদের চাঁদার খাতে চলে যায়। আর এরা সংখ্যায় এত বেশি যে আপনি চাইলেও ওদের হিসাব কষে রাখতে পারবেন না।
‘ঘৃণা সপ্তাহের জন্য—তুমি জানো—ঘরে ঘরে আদায় হচ্ছে এই তহবিল। আমাদের ব্লকে আমিই কোষাধ্যক্ষ। উঠেপড়ে লেখেছি—একটা দারুণ কিছু দেখাতে চাই। আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, ভিক্টরি ম্যানসন্সের বাইরের ফ্ল্যাগগুলো হবে গোটা সড়কের মধ্যে সবচেয়ে বড়, টাকার অভাবে না পারলে পরে আমাকে দুষবে না, বলে দিচ্ছি। দুই ডলার দেবে বলে কথা দিয়েছিলে তুমি। ’
পকেট হাতড়িয়ে কুঁচকানো, নোংরা দুটি নোট বের করে এগিয়ে দিল উইনস্টন। পারসন্স ওদুটো নিজের ছোট নোটবুকে ঢুকিয়ে নিয়ে তার অশিক্ষিত সাবধানি হস্তাক্ষরে টুকে রাখল।
‘ওহ শোনো, বুড়ো বালক’—বলল সে। ‘শুনলাম আমার ছোট পাঁজিটা তোমার গায়ে গতকাল গুলতি ছুড়েছে। ব্যাটাকে কঠিন করে বকে দিয়েছি। আর বলেছি ফের যদি এমন কাজ করে আমি ওর গুলতিটাই নিয়ে নেব। ’
‘ফাঁসি দেখতে যেতে না পেরে ও মনে হয় একটু বিচলিত ছিল’—বলল উইনস্টন।
‘সেটা ভালো—আসলে আমি বলতে চাচ্ছি এমনটাই হওয়ার কথা, কি বলো? দুটোই পাঁজি ছোট বেয়াদব, কিন্তু ওদের অনুরাগের কথা ভাবো! ওদের চিন্তা জুড়েই আছে স্পাইজ, যুদ্ধ—এগুলো। তুমি কি জানো, গত শনিবার বার্কহ্যামেস্টেডে প্রচার অভিযানের সময় আমার ওই ছোট্ট মেয়েটি কী করেছে? আরও দুটি মেয়ে জুটিয়ে নিয়ে কর্মসূচি থেকে আস্তে করে সটকে পড়ে আর গোটা বিকেল ওরা এক আগন্তুকের পিছু নিতে থাকে। টানা দুই ঘণ্টা লেজে লেজে কাটিয়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যখন আমার্শ্যামে পৌঁছায় তখন টহলদারদের হাতে ব্যাটাকে ধরিয়ে দেয়। ’
‘ওরা কী জন্য এটা করল?’—একটু হতচকিত স্বরেই বলল উইনস্টন। আর পারসন্স তার খুশির গদগদ ভাবটা ধরে রেখেই বলে চলল:
‘মেয়ে আমার বুঝে ফেলেছিল লোকটি শক্রপক্ষের চর—ধরে নাও প্যারাসুটে চেপে এসেই নেমেছে। কিন্তু এখানেই কথা, হে বুড়ো বালক। কী ভাবছো ওকে নিশ্চয়ই তুমি সবার সেরা বলবে। সে কী করেছে, লক্ষ করেছে ব্যাটার জুতোয়। এক অদ্ভুত ধরনের জুতো পরেছিল সে—বলল এমন জুতো আর কাউকে কখনওই পরতে দেখেনি। সুতরাং ধরেই নেওয়া যায় সে বিদেশি। সাত বছরের এক দুধের শিশুর জন্য ভীষণ স্মার্ট একটা কাজ, কি বলো?’
‘লোকটির কী হলো?’—প্রশ্ন উইনস্টনের।
‘আরে, সেটা জানি না। তবে এ কথা শুনলে মোটেই বিস্মিত হবো না যদি—পারসন্স বন্দুক তাক করার একটি ভঙ্গি আর মুখে ‘ফটাস’ শব্দ করল।
২৪তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২৩) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।