ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বইপ্রেমীদের মিলন মেলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫
বইপ্রেমীদের মিলন মেলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ছবি: কাশেম হারুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আর একদিন পরই বইপ্রেমীদের মিলন মেলায় পরিণত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। নতুন বইগুলো যেন নিজেই নিজেদের মেলে ধরবে।


 
মাত্র এক দিন বাকি থাকায় দ্রুতগতিতে চলছে মেলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।  

২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘিরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হতো। তবে, গত বছর (২০১৪ সাল) থেকে মেলা বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এবারও উদ্যানের প্রায় ৭০-৭৫ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে মেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে স্টল নির্মাণ ও সাজসজ্জার কাজ। হাতুড়ি-পেরেক ঠোকাঠুকির শব্দ, রঙের গন্ধ, করাতের ঘর্ষণে মুখর হয়ে উঠেছে মেলাস্থল। কর্ক শিট (ফোম) কেটে তাতে নানান রকমের নকশায় সাজানো হচ্ছে স্টল। কারুকাজ করে লেখা হচ্ছে স্টলের নাম, সেগুলোতে রকমারি রঙের ছোঁয়া। মেলা প্রাঙ্গণে থাকা সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যেও চলছে রঙ দেওয়ার কাজ।


তবে বেশিরভাগ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন, শিশুতোষ বই এবং বিভিন্ন সরকারি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলো থাকছে বাংলা একাডেমি বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর মেলায় মোট ৩শ’ ৫১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে যাচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে মোট ৫শ’ ৬৫টি ইউনিট ও ১১টি প্যাভিলিয়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের খেলাধুলার জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্রেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মেলাকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার বর্গফুট জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে এবারের মেলা।

আর্ন্তজাতিক মানের বিদেশি লেখকরা থাকছেন মেলায়। এবার ১০টি দেশের মোট ৪২ জন বিদেশি লেখককে বইমেলায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।


প্রতিবারের মতো এবারও মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হবে আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সেই লক্ষ্যে চলছে মঞ্চ সাজসজ্জার কাজও। এবার মেলায় থাকছে দু’টি লেখক কুঞ্জ।

মেলার নিরাপত্তা:
বইমেলায় আসা মানুষের নিরাপত্তার জন্য পুরো মেলা প্রাঙ্গণে এবার থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তিনটি কন্ট্রোল রুম। এর মধ্যে দু’টি পুলিশ সদস্যদের জন্য ও একটি র‌্যাব সদস্যদের জন্য।

মেলা প্রাঙ্গণে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য রাখা হবে। ৫০ সদস্য বিশিষ্ট একটি আনসার টিমও মেলায় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। পুরো মেলায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থানে মোট ৭০টি সিসি ক্যামেরার লাগানো হয়েছে।  


হকার মুক্ত বইমেলা:
মেলা প্রাঙ্গণে যাতে কোনো হকার প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য থাকছে কড়া নজরদারি। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরো রাস্তাটি থাকবে সম্পূর্ণ হকার মুক্ত। সেই সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে পাইরেটেড বই বিক্রি রোধ করতে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে থাকছে একটি টাস্কফোর্স টিম।

‘আগামী’ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি বাংলনিউজকে বলেন, এবার মেলার সাজসজ্জা ভালো হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ প্রসারিত হয়েছে। এবার মেলা প্রাঙ্গণের জায়গা বেশি থাকায় বইপ্রেমীরা পছন্দের বই স্বচ্ছন্দে দেখে কিনতে পারবেন।


তিনি বলেন, তবে মেলা চলাকালে হরতাল-অবরোধ থাকলে মানুষ মেলায় আসতে পারবে না। এতে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, দেশের অর্থনীতিরও অনেক ক্ষতি হবে।  

দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বইমেলা কোনো রাজনৈতিক মেলা নয়। মেলা চলাকালে কোনো হরতাল-অবরোধ দেবেন না।  

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণের বটতলা থেকেই অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু। চিত্তরঞ্জন সাহা এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বসেছিলেন এ বটতলায়।

এ ৩২টি বই ছিলো চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা। এসব বই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অবদান হিসেবে বিবেচিত।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এভাবে বইমেলা চালিয়ে যান তিনি। এরপর ১৯৭৬ সালে অন্যান্য প্রকাশনাও বইমেলাকে কেন্দ্র করে অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠে। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন।

১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এ সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।