বৃষ্টি হোক
সারাদিন বৃষ্টি হোক। সারারাত্রিদিন।
কে চায় সূর্যের মুখ—বেহায়া, বেদীন?
আলোলিপ্সু উন্মাদ পাখিরা,
রৌদ্রের চাকুরে, ওরা কারা?
সারারাত্রি বৃষ্টি হোক। সারারাত্রিদিন।
অনেক কাতর ময়লা, ইতর চেহারা
জ’মে জ’মে ভ’রে গেছে মন;
ভ’রে গেছে সব্জে দাগে কাঁসার বাসন—
বৃষ্টিধারা করুক মার্জনা!
বৃষ্টিধারা ধুয়ে দিক সময়াস্তরণ।
সারাদিন বৃষ্টি হোক। সারারাত্রিদিন।
কে চায় রৌদ্রের রঙ, বর্ণ-প্রতারণা?
কেন সূর্য, কীসের তাড়না,
ভেদ করে যামিনীর জেদি জাগরণ?
আজীবন শ্রাবণ, আষাঢ়;
আমরণ বর্ষণে অসাড়—
বৃষ্টির বিস্তীর্ণ স্বেচ্ছাচার
উলটে-পালটে কচলে দিক আলগা আস্ফালন।
সারারাত্রি সারাদিন বৃষ্টি হোক,
বৃষ্টি হোক সমস্ত জীবন।
কয়েকটা ইমেজ মাত্র
নানির উঠানে সন্ধ্যা জোড়া-জুঁই-গাছের মাঝখান দিয়ে
হেঁটে গেল আরও অন্ধকারে।
সিঁড়ির তৃতীয় ধাপে ব’সে আছে নওগাঁর মেয়েটা,
পিছে বারান্দার আলো, বদনামের ভয়;
সামনে দাঁড়ানো একটা গাধা!
একটা খুব ফুটফুটে কিশোর এসে, খড়ির চুলার পাশে,
হাসতে-হাসতে মেরে দিল বোমা:
‘আপনারা কী জাত মামা, গরু খান, জুম্মাবারও মসজিদে যান না?’
বহু উত্তরের এক শীত-লাগা ঝাপসা-ঝাপসা লাজুক স্টেশনে
কে বলল, বালিকা-গলা, ‘আপনারা কি ভাই নাকি,
আপনি ছোট, গোঁফ রেখে বড়-বড় ভাব?’
একটা কুমিরের গায়ে নিরঙ্কুশ লেপ্টে
শ্রীমতি অলিভঅয়েল,
সাবধানে পরখ করছে দাঁতের সামর্থ্য;
‘তুমি না এমন করো, আসো!’
উথলে-ওঠা অশ্রুরাশি কান্না, না প্রেরণা—
বোঝার আগেই ছবি শেষ।
কয়েকটা ইমেজ মাত্র, তা-ও ভাঙা, পোকা-খাওয়া;
এ-দিয়ে চলবে থাকা, খাওয়া?।
আজ কেন ঝলসানো মুখে
আলো ক’মে আসছে, আলো নিভে যাচ্ছে প্রায়;
একেকটা সন্ধ্যার সাথে ময়লা হ’য়ে আসে উচ্চাশাও।
এমন স্থাপত্যকলা আছে দুনিয়ায়,
এমন গগনচুম্বী—যার বারান্দায়
উচ্চতার অনুভূতি হবে, কিন্তু ভীতি জন্মাবে না;
এমনকি চাহিবামাত্র আকাশ ছলনা করবে,
মনে হবে খুব কাছে, মনে হবে চেনা,
মনে হবে মানবিক দূরত্ব উধাও!
সে-বিদ্যা শেখোনি যদি, সে-পারদর্শিতা—
আজ কেন পাঁজর কাটে স’মিলের অনুষঙ্গ,
অমিলের সরল মশ্করা?
আজ কেন ঝলসানো মুখে কিন্তু কিন্তু করা?
তিনমাথা বুড়োটা
‘ “এত শীতে বাইরে বেরোবে তবু, এত টান কার?
বাইরেই তো থাকলে পারো, খবরদার ঘেঁষবে না কাছে
ত্রিসীমানা মাড়াবে না এই বিছানার।
আমি কি উত্তাপ শুধু, চুলা নাকি? রান্নাঘর?—
বেশ ক’রে কসানো হ’লে শ্রীমান খাবেন!
মানুষে কী বলে, বলো, এত শীতে মাঝরাত্তিরে
দরজা-খোলা, শোয়া...”
—বকতে-বকতে ভাল্লুকের লম্বা বউ রাত্রে খোলে জামা...’
‘তার পর—?’
‘তারপর জানিস্ না গাধা, শোন্ কানে কানে...’
রাস্তার ধারের ঝাপসা চায়ের দোকানে
তিনমাথা বুড়োটা গল্প ফাঁদে, আর ফোকলা-মুখে হাসে;
হাসতে হাসতে হঠাৎ তাকায় বুড়ো ‘তোদের কিন্তু
সংসার হবে না। ’
হাসির দমকে কাশি, কাশতে কাশতে কাস্তে-মার্কা
শিরদাঁড়ার ওঠা-নামা, থামা...
বুড়োকে তো চিনতে পারি, আক্ষেপের গলাটা অচেনা।
ধুলা হ’তে
একদিন তোমাকে দেখতে যাব।
পাহাড়ের পাদদেশে খুলে রাখব পৃথিবীর ঘ্রাণ—
পাহাড় কম্পিত হ’লে আমিও সেখানে কম্পমান
গাছ হ’য়ে,পাতা হ’য়ে... গড়ানো পাথর হ’য়ে
নিরাকার অঙ্গুলির নির্দেশে গড়াব;
গড়াতে গড়াতে ধুলা—সহসা উড্ডীন!
ঠিকই দেখতে যাব, দেখো, তোমাকে একদিন,
উড়ে উড়ে চোখে পড়ব, অবিরল ঝ’রে পড়ব
নাম না-জানা চোখের অসুখ;
ঝাপসা চোখে, আমাকে দেখবে না তুমি,
আমি দেখতে পাব:
ধারা জলে ধুয়ে-যাওয়া মুখ,
অশ্রুধারাজলে ধোয়া কাঁটার বাগান...
একদিন তোমাকে দেখতে যাব ব’লে, ধুলা হ’তে
হ’য়ে আছি সতত উন্মুখ।
বিনাস্পর্শে, বিনাবাক্যব্যয়ে
ঝরাপাতা জ্যান্ত হ’য়ে ওঠে ইশারায়।
দেখো তো কেমন জাদু বাতাসের আয়ত্ত হয়েছে!
বিনাস্পর্শে, বিনাবাক্যব্যয়ে
এত ঘূর্ণি ওঠে, এত ঝড়—সামান্য কাগজও
আকাশের অমন নিকটে উঠে যায়।
তোমার ওঠে না ঝড়, জাগে না ঘূর্ণির ধূলিস্তম্ভ;
শুধু ভয়ে ভয়ে শিমুল-পলাশ দেখো জানালায়,
দেখো দেয়ালের গাত্র বেয়ে
নেমে আসা পতঙ্গের দম্ভ।
আছো তো সকলে
মস্তকে কীটের প্রাপ্তি, পুস্তকে কীটের কর্মফল।
যারা যারা ছিলে, আজও আছো তো সকলে?
খোলা মাঠে খালি গলা, লোহার ঘোরানো সিঁড়ি,
আগুনের শয্যাশায়ী প্রাণিত দমকল...
আছো তো সকলে?—আজ ভয়ে ভয়ে ভাবি,
এই হিংস্র পিকনিকের দলে।
বুঝেছো? এবার বুঝবে
এত ফাঁদ, এত তীর, আকুতির এত গান—সবই তো তোমাকে লক্ষ্য ক’রে,
তবু কেন উপলক্ষ্য হ’য়ে গেলে, পাখি?
এখন তোমাকে দেখতে দলে দলে স্টার্ট দিচ্ছে সেয়ানা সমাজ;
লক্ষ-লক্ষ বন্দুকের সফল আওয়াজ
সঙ্গিনীর হাসি এনে দিলে,
সে বীরত্ব, ও-কে কিছু শিক্ষা-দীক্ষা বলে!
বুঝেছো? এবার বুঝবে, ওই দেখো মেঘের মন্থরচালে
ভেসে যাচ্ছে ওপর-চালাকি...
শামুকও শিক্ষিত হবে,অতি শীঘ্র,প্রযুক্তি পৌঁছেছে মফঃস্বলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফ্রেব্রুয়ারি ০১, ২০১৫