১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
২৫তম কিস্তির লিংক
___________________________________
প্রকাণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে দিবাস্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরলো সে। পাশের টেবিলের মেয়েটি ইষৎ ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে। এ সেই কালোকেশী। একপাশ থেকে দৃষ্টি ফেলে রেখেছে উইনস্টনের দিকে, গভীর কৌতুহলভরা সে চাহুনি। চোখাচোখি হতেই দ্রুত দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো।
উইনস্টনের মেরুদণ্ড বেয়ে ঘাম নেমে গেলো। ভীষণ এক ভীতি বয়ে গেলো তার শরীরের ভেতর দিয়ে। খুব দ্রুতই তা চলেও গেলো তবে এক ধরনের অস্বস্তির অনুভূতি রেখে গেলো। মেয়েটি কেনো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো তাকে? কেনো সে সারাক্ষণই তাকে অনুসরণ করছে? দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে সে যখন পৌঁছায় তখন মেয়েটি এই টেবিলে বসেছিলো, না কি পরে এসে বসেছে তা উইনস্টন বুঝতে পারছে না। কিন্তু গতকাল দুই মিনিটের ঘৃণা কর্মসূচির সময়ও মেয়েটি তার ঠিক পেছনে বসে, এমন নয় যে উপায় না পেয়েই বসেছে। বোঝাই যায় তার আসল উদ্দেশ্য ওর কথা শোনা এবং পর্যাপ্ত জোরে ঘৃণার চিৎকার দিচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া।
পুরোনো চিন্তা আবার ফিরে আসে উইনস্টনের মন জুড়ে: মেয়েটি থট পুলিশের সদস্য হবে বলে তার মনে হয় না, হতে পারে সে শখের গুপ্তচর, তা হলে সবার জন্যই যে বড় বিপদের। তার জানা নেই, কতক্ষণ ধরে মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে ছিলো, হতে পারে পাঁচ মিনিট ধরেই, আর এও সম্ভব পুরো সময়ই নিজের সকল অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলো উইস্টন। জনসমক্ষে কিংবা টেলিস্ক্রিনের আওতার মধ্যে থেকে চিন্তাজগতকে উদ্দেশ্যহীন পথে হাঁটতে দেওয়ার বিপদ ভয়ঙ্কর। ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কোনও বিষয়ই আপনাকে বিপদে ফেলে দেবে। একটা সামান্য স্নায়ুবিক খিচুনি, একটি অবচেতন উদ্বেগের দৃষ্টি, স্বগোতোক্তিÑ যে কোনোটা অস্বাভাবিক কিছু একটা নির্দেশ করে, ধরেই নেওয়া হবে, আপনি কিছু লুকোতে চাইছেন। একটি বেঠিক মুখোভঙ্গির (যেমন ধরুন কোনও যুদ্ধ জয়ের ঘোষণার সময় আপনাকে নিস্পৃহ দেখাচ্ছে) প্রকাশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এনিয়ে নিউস্পিকে একটি শব্দও রয়েছে, যাকে বলে ফেসক্রাইম।
মেয়েটি তার দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসলো। হতে পারে মেয়েটি আদতে তাকে অনুসরণ করছেই না। হতে পারে পরপর দুই দিন তার কাছাকাছি মেয়েটির বসা স্রেফ ঘটনাক্রমেই ঘটে যাওয়া। উইনস্টনের সিগারেট নিভে গেছে আর সে অতি সতর্কতায় সেটি টেবিলের এক কোনায় রাখলো। ভেতরের তামাকগুলো ধরে রাখতে পারলে কাজের শেষে ওটি আবার ফুঁকবে। হতেই পারে পাশের টেবিলের মেয়েটি থট পুলিশের চর, আর এও হতে পারে তিন দিনের মধ্যেই তার স্থান হবে ভালোবাসা মন্ত্রণালয়ের গরাদের ভেতর। কিন্তু তাই বলে একটি সিগারেটের গোড়া নষ্ট করার কোনও কারণ থাকতে পারে না। সাইম তার হাতের কাগজটি ভাজ করে পকেটে ঢোকালো। পারসন্স ফের বকবক শুরু করেছে।
‘আমি কি কভু তোমায় বলেছিলাম, বুড়ো বালক’, পাইপের গোড়া চেপে ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো সে, ‘আমার পাজি দুটো পুরান বাজারের এক মহিলার স্কার্টে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তারা দেখলো মহিলাটি বি.বি’র একটি পোস্টার ছিঁড়ে সসেস পেঁচিয়ে নিচ্ছে। আর যায় কোথায়। চুপি চুপি ওর ঠিক পেছনে গিয়ে দেয়াশলাই ঢুকে দিলো আগুন ধরিয়ে। আমার ধারনা, ভালোই পুড়েছে। ছোট দুই পাঁজি! তবে বেশ চটপটে। স্পাইজে আজকাল ওরা প্রথম পর্যায়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেÑ ভালোই আমাদের সময় এমন প্রশিক্ষণ পাইনি। তুমি কি জানো, ওরা সবশেষ কি পেয়েছে ওদের কাছ থেকে? দরজায় চাবির ছিদ্রপথে কথা শুনার এক ধরনের যন্ত্র। এক রাতে আমার কন্যা ওগুলোর একটি বাড়িতেও নিয়ে এসেছিলো- আমাদের বসার ঘরের দরজা থেকে পরীক্ষা করে দেখেছে, বললো খালি কানে যতটুকু শুনতে পায় এই যন্ত্রে সে শব্দ তার দ্বিগুন। অবশ্যই এটি খেলনা বই কিছু নয়, কিন্তু তার পরেও ওরা ঠিক ঠিক ধরে ফেলছে।
ঠিক এসময়ে টেলিস্ক্রিনে কানফাটা সিটি বেজে উঠলো। কাজে ফিরে যাওয়ার সংকেত। টেবিলের তিনজনই চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো, লিফটের কাছে পৌঁছানোর লড়াইয়ে সামিল হতে। আর উইনস্টনের সিগারেটের শেষাংশ তামাকসমেত নিচে পড়ে গেলো।
২৭তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময় ১৯১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৫