১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
২৮তম কিস্তির লিংক
___________________________________
বাতির মৃদু আলোয় দাঁড়িয়ে দেখছে, নাকে লাগছে ছারপোকার গন্ধ, সস্তা সুগন্ধী। আর হৃদয়খানি বিদীর্ণ হচ্ছে পরাজয়ের গ্লানি ও অপরাধবোধে। এরই মাঝে ভাবনা জগতে এসে মিশলো ক্যাথরিনের ফর্সা তনুখানি, পার্টির সংবেশন ক্ষমতায় যা চিরতরেই বরফহীম হয়ে গেছে। সবকিছুই এমন কেনো হবে? কেনো তার জন্য নিজের একজন নারী থাকবে না। কেনো তাকে বছরের বিরতিতে এমন ঘৃণ্য নোংরা নারী সান্নিধ্যে আসতে হবে? একটি সত্যিকারের ভালোবাসার সম্পর্ক মোটামুটি অচিন্তনীয় বিষয়। পার্টির নারীগুলো সবই একই রকম। পার্টির প্রতি আনুগত্যের মতোই কৌমার্য্যরে শুদ্ধতার বিষয়টি তাদের মনের গভীরে গাঁথা। সতর্ক বাল্যশিক্ষায়, খেলায়, ঠাণ্ডা পানিতে, স্কুলের পাঠে, স্পাইজে, ইউথ লিগে, বক্তৃতায়, মিছিলে, গানে, স্লোগানে, সঙ্গীতে সবকিছুর মধ্য দিয়েই বিষয়টি তাদের মধ্যে চালিত। এতে তাদের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক অনুভূতিগুলোই গেছে মরে। তার যুক্তিগুলো বলছে কিছু ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু হৃদয় মোটেই তা বিশ্বাসে রাজি নয়। এরা সব অজেয়, ঠিক যেমনটি দল চায় তেমনভাবেই অলঙ্ঘণীয়। আর সে কি চায়! সে ভালোবাসা চায় না, বরং জীবনে একটি বার হলেও সে এই শুদ্ধতার দেয়ালটি ভেঙ্গে দিতে চায়। যৌনতা, সাফল্য দুইই এখানে বিদ্রোহের নামান্তর। এখানে ইচ্ছা বা প্রত্যাশার নাম চিন্তাঅপরাধ। এমনকি একবারও যদি শয্যায় সঙ্গমে সে যৌনাবেদনে জাগরুক এক ক্যাথরিনকে পেতো তা হয়ে যেতো শ্লীলতাহানি, অথচ সেতো তার স্ত্রীই ছিলো।
গল্পের পরের অংশও লেখা হলো ডায়রিতে। সে লিখলো:
আমি বাতির সলতেটা বাড়িয়ে দিলাম। আর তখন আমি মেয়েটিকে আরো আলোয় দেখতে পেলাম-
অন্ধকার কেটে গেলে হারিকেনের দুর্বল আলোও বেশ উজ্জ্বল মনে হলো। এই প্রথম সে মেয়েটিকে ঠিক মতো দেখতে পেলো। একপা মেয়েটির দিকে এগিয়ে ফের থমকে দাঁড়ালো, তার মধ্যে তখন কামলিপ্সার সহিংস রূপ। ঠিক যে কাজটি সে করতে যাচ্ছে তা নিয়ে বেদনার্তভাবেই আবার সচেতনও সে। খুবই সম্ভব, বের হওয়ার পথেই টহলদাররা তাকে ধরে ফেলবে; হতে পারে এ জন্য তারা এরই মধ্যে বাইরে অপেক্ষমান। এখানে যে কাজে সে এসেছে তা না করেও যদি এখুনি বের হয়ে যায় তাহলেও-!
একটু দ্রুতই লিখে চলেছে সে, সেই একই অবিন্যস্ত হাতের লেখায়:
আমি বাতির আলোতে দেখতে পেলাম স্রেফ একটা বুড়ি, নিদেন পক্ষে পঞ্চাশ বছরতো হবেই। কিন্তু আমি এগিয়ে গেলাম। এবং যা করার ঠিক তাই করলাম।
আবারও চোখের ওপর আঙুলগুলো চেপে ধরলো সে। অবশেষে কথাগুলো লিখে ফেলেছে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। সেই যে নোংরা ভাষায় চিৎকার করে বলার তীব্র বাসনা, তা তীব্রতর হলো।
সপ্তম অধ্যায়
‘আশা যদি কিছু থেকে থাকে,’ লিখলো উইনস্টন ‘তা ওই প্রোলদের মধ্যেই প্রোথিত। ’
আশা যদি কিছু থেকে থাকে, অবশ্যই তা প্রোলদের মধ্যে প্রোথিত, কারণ একমাত্র মৌচাকের মৌমাছির মতো ঠেসে থাকা, ওশেনিয়ার মোট জনসংখ্যার ৮৫ ভাগের ভাগীদার, এই জনগোষ্ঠীই একদিন মহীরুহের মতো গড়ে ওঠা পার্টিকে ধ্বংস করে দেওয়ার শক্তি হয়ে উঠতে পারে। ভেতর থেকে পার্টির পতন সম্ভব হবে না। এর শত্রুরা, যদি আদৌ এর কোনো শত্রু থেকে থাকে, তারাও কোনোভাবেই একজোট হতে পারবে না, এমনকি একে অপরকেই চিনবে না তারা। এমনকি কিংবদন্তির ব্রাদারহুডও যদি টিকে থাকে, তেমন একটা সম্ভাবনা যেহেতু রয়েছে, এটা ভাবা অসম্ভব যে এর সদস্যরা দুইজন বা তিনজন করেই সমবেত হতে পারবে। বিদ্রোহ মানেই হচ্ছে চোখে চোখ রেখে, কণ্ঠস্বর উচিয়ে প্রতিরোধের উচ্চারণ। প্রোলরা পারবে, কিন্তু তাও যদি তারা কভু তাদের এই শক্তি সম্মন্ধে সচেতন হয়ে ওঠে তবেই। এ জন্য তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বেছাতে হবে না। কেবল জেগে উঠতে হবে। অশ্বশক্তির ঝাঁকুনি দিয়ে মৌমাছির মতো ছুটতে হবে। কাল সকালেই যদি তারা পার্টিকে খান খান করে দিতে চায়, পারবে। নিঃসন্দেহে খুব কাছাকাছি সময়ে, নয়তো অনেক দেরীতে হলেও তারাই এটা করবে। আর এখনো--!
৩০তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময় ১৬৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২৯) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।