ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩০) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩০) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

২৯তম কিস্তির লিংক
___________________________________

উইনস্টনের মনে পড়ে একদিন এক ভিড়ের সড়কে হাঁটছিলো সে। এসময়  শত শত নারী কণ্ঠের আওয়াজ কানে আসে। একটু সামনেই গলি সড়কের ভেতর থেকে ফেটে পড়া বিক্ষোভের শব্দ। সে ছিলো ক্রোধ আর ঘৃণার ভীষণ ভয়াল চিৎকার, তীব্র তারস্বরের উচ্চারণ ‘উহ-উ-উ-উ-উহ!’ ঘণ্টারধ্বনি যেমন অনুরুণন তুলে ইথারে ছড়ায়, ঠিক তেমনি। তার হৃদয় লাফিয়ে উঠেছিলো। মনে হয়েছিলো, শুরু তাহলে হয়েই গেলো! দাঙ্গা! প্রোলরা অবশেষে বাঁধ ভাঙছে! অকুস্থলে পৌঁছে সে দেখতে পেলো শ’ তিনেক নারী সমবেত হয়েছে সড়কপাশের মার্কেটের দোকানগুলো ঘিরে। তাদের চেহারায় বিয়োগান্তের ছাপ। যেনো তারা গভীর সমুদ্রে ডুবন্ত কোনো জাহাজের যাত্রী। সে যখন ওখানে, তখন সমবেত ক্ষোভ ব্যক্তিগত ঝগড়াঝাটিতে রূপ নিয়েছে। জানা গেলো স্টলগুলোর একটিতে টিনের সসপ্যান বিক্রি হয়। ঠুনকো ও ফালতু মানের সসপ্যান। রান্নার পাত্রের আক্রা লেগেই থাকে। আর ওই সময়টিতে সরবরাহ ছিলো অপ্রত্যাশিত ভাবেই কম। যারা পেয়ে গেছে তাদের ওপর হামলে পড়ছে অন্যরা। যারা পেয়েছে তারা ছুটতে পারলে বাঁচে, কিন্তু অন্যরা তাদের ছাড়তে চাইছে না। দোকানির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে হৈচৈ বাঁধিয়ে দিচ্ছে। বলছে অন্য কোথাও মজুদ করে রাখা হয়েছে সসপ্যানগুলো।

নতুন করে আবারও চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলো। অতিপ্রকা- বপুর দুই  নারীর একজন খোলা এলোমেলো চুলে ছুটে গিয়ে আরেকজনের হাতে ধরা সসপ্যানটিতে ছোঁ মারলো। এরপর শুরু হলো টানা-হ্যাঁচরা আর চ্যাঁচামেচি। কিছুক্ষণের টানাটানিতেই হাতলটি ছুটে চলে গেলো এক হাতে অন্য জনের হাতে সসপ্যান। মহাবিরক্তি নিয়ে উইনস্টন এদের কা--কারখানা দেখছিলো। মাত্র কয়েকশ’ কণ্ঠের চিৎকারে একটু আগেই যে শক্তি সে দেখেছিলো তা নিমেষে উবে গেলো। তার মনে হলো- ঠিক এই কারণেই এরা কখনো এমন শোর তুলতে পারবে না যা গুরুত্ব রাখে।

সে লিখলো:

ওরা যতদিনে সচেতন হয়ে না উঠবে ততদিনে বিদ্রোহী হতে পারবে না, আর যতদিনে বিদ্রোহী হয়ে না উঠবে ততদিনে ওরা সচেতন হবে না।

এমনটাই, তার মনে হলো পার্টির পাঠ্যবইগুলোতে ঠিক এমন একটি কথাই লেখা রয়েছে। পার্টির দাবি, অবশ্যই সকল বন্ধন থেকে প্রোলদের মুক্ত করতে হবে। বিপ্লবের আগে ওরা পুঁজিবাদীদের চরম নিষ্পেষণের শিকার হয়েছে, ওরা ভুখা থেকেছে, মার খেয়েছে, কয়লার খনিতে নারীরা জবরদস্তি শ্রম খেটেছে (বাস্তবতা হচ্ছে নারীরা এখনো কয়লার খনিতে কাজ করে), শিশুরা ছয় বছরেই বিক্রি হয়েছে কারখানাগুলোর কাছে। অথচ পাশাপাশি দ্বৈতচিন্তার নীতি বাস্তবতায়, পার্টি মনে করে প্রোলরা প্রাকৃতিকভাবেই অধস্তন, গুটিকয় সাধারণ বিধির প্রয়োগে ওদের পশুর মতো অসহায়ত্বে ফেলে রাখাই বিধান। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রোলদের সম্পর্কে খুব কমই সবার জানা। জানার প্রয়োজনও খুব বেশি নয়। ওরা কাজ করবে, সন্তান জন্ম দেবে, এর বাইরে ওদের কোনোও কাজেরই কোনো গুরুত্ব নেই। আর্জেন্টিনার বিশাল সমতল ভূমিতে ছাড়া গরু-বাছুরের মতোই ওরা ছাড়াই থাকে কিন্তু ওরা এমনই এক জীবনে অভ্যস্ত যা ওরা প্রকৃতির বিধান বলেই মেনে নিয়েছে, এর সঙ্গেই ওরা সইয়ে নিয়েছে নিজেদের।

নর্দমায় ওদের জন্ম, নর্দমায়ই বেড়ে ওঠা। বারো বছরেই ওরা শ্রমিক, আর কাজের মাঝেই কখন পার হয়ে যায় ওদের জীবনের সুন্দর হয়ে ওঠার সময়, যৌনতার অনুভ’তিকে বুঝে ওঠার বয়স। বিশে ওরা বিয়ে করে, ত্রিশেই মধ্যবয়ষ্ক হয়ে ওঠে আর এদের অধিকাংশই ষাটের মধ্যেই বরণ করে নেয় মৃত্যুকে। গতর খাটা কাজ, বাচ্চাপালন, প্রতিবেশির সঙ্গে ঝগড়া, সিনেমা, ফুটবল, বিয়ার আর সর্বোপরি জুয়ায় জড়িত ওদের জীবন। আর এর মধ্যেই ঘুরপাক খায় ওদের মন ও মননশীলতা। ওদের নিয়ন্ত্রণ এতটুকু কঠিন কিছু নয়। থট পুলিশের গুটি কয় চর ওদের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়, কথায় কথায় মিথ্যা গুজব ছড়ায় আর ভয়ঙ্কর কিংবা ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে এমনদের চিহ্নিত করে গুম করে দেয়।

ওদের মধ্যে দলের আদর্শ ঢুকিয়ে দেওয়ার কোনও প্রচেষ্টাই নেই। প্রত্যাশাও নেই যে প্রোলরা রাজনৈতিক অনুভূতিতে চাঙা হবে। তাদের কাছে একটাই চাওয়া তা হচ্ছে আদিম দেশপ্রেম যা আসলে ওদের দীর্ঘ কর্মঘণ্টা আর আরও কম রেশনেও গদগদ করে রাখবে। আর এমনকি অখুশি বা অসন্তুষ্ট হয়ে উঠলেও, যা ওরা মাঝে মধ্যে হয়ও, তাদের সে অসন্তুষ্টির অনুভব কোনও পরিণতি পায় না, কারণ এই অসন্তোষ সাধারণে ছড়িয়ে দেওয়া ওদের পক্ষে সম্ভব নয়, বরং ওরা কোনো একটি ক্ষোভের মাঝেই ঘুরপাক খায়, আর তারই নিরসন চায়। অপেক্ষাকৃত বড় ক্ষতিকর দিকগুলো ওদের চোখ এড়িয়ে থাকে।

৩১তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময় ১৬০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।