ঠিক মুগ্ধ হয়েছি। কবিতা আর কতটুকুই বুঝি! তবে যেটুকু বুঝি তার ওপর ভর করেই এই মুগ্ধতা।
তবে দশ বছর কবিতা লিখেই যে ভালো কবিতা লেখক হবেন এমন যৌক্তিক সমীকরণও তো নেই। তাই মিছিলের কবিতা পড়লাম। মলাট উল্টে প্রথমেই চোখে পড়ে চারটি স্তবক। তাতে দেখি— বাবা-মাকে কবির মনে হয়েছে একটা নৌকা। মা যার ছই-আবৃত পাটাতন ও গলুই, বাবা যার পাল এবং বৈঠা। উৎসর্গে অনেক কাব্যচর্চা দেখি, ইদানীং ফ্যাশনও বটে, তবে মিছিল খন্দকার তা নিয়ে গেছেন সত্যিকারের উচ্চতায়। ‘উৎসর্গ’ শিরোনামে এই চারটি স্তবকও হতে পারত একটি আস্ত কবিতা।
পাতা উল্টে এলোমেলো করে পড়া। লাইনে চোখ আটকায়, মন থমকায়, পড়ে ফেললে ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। বলা চলে, দৈবচয়নে যে ক’টি কবিতা হাতে পড়ে, তার সব ক’টিই পড়ে ভালো লেগেছে। কবির কবিতায় ছন্দ আছে। অথচ সবই গদ্য কবিতা। ৭০টি কবিতা তার বছর দশেক ধরে লেখার ফসল। এক মলাটে জমা পড়েছে কবিতার গোলা। পাতা উল্টে উল্টে মিলবে ছন্দ-আনন্দ, ভাব-দর্শন, অনুভব, অনুভূতি, এমনটা দায়িত্ব নিয়ে বলা যায়।
খামে ভরে বন, নিভৃত গ্রাম
শহরের মেয়ে তোকে পাঠালাম... বলে কবি যে ‘চিঠি’ লিখেছেন তা চিঠিরই অভিব্যক্তি। সাপুড়ের বীণ মুখে অধরা মণির লোভ আর শখের কুড়োনো ঝিনুকে পেয়ে যাওয়া মুক্তার খোঁজ দারুণভাবেই ব্যক্ত করে জীবনের কঠিন ও সহজ দুটি দিক। এভাবেই কবিতার শিরোনাম হয়ে এসেছে ব্যক্তি ও সমাজের কত বিষয়।
রাজনীতি আসেনি সরাসরি, মোটাদাগে। দারুণ যোগ্যতায় কবি নিজেকে সেখান থেকে মুক্ত রেখেছেন। কবিতায় গাঁ এসেছে, বাড়ি এসেছে, এসেছে শৈশব। উপলব্ধি নিয়েও উপলব্ধি ব্যক্ত হয়েছে। কাব্যে উঠে এসেছে সময়, জীবন, ভঙিমা এমনকি কবিতার কথাও। জীবনের পরত থেকে যেমন লিখেছেন, লিখেছেন কল্পনাবিলাসি মনের কথাও। বাতাসকে মেঘের রাখাল করে, মেঘকে গাঁয়ে উড়িয়ে এনে মনের রাধিকাকে ভিজিয়েছেন বর্ষায়।
বইয়ের নাম ‘মেঘ সামান্য হাসো’। কবিতা ধরে ধরে খুঁজে সে পঙ্ক্তির দেখা নেই। কবি বললেন, কবিতাগুলো নিয়ে এটাই তার অনূভব। আর সে কারণেই এই নাম।
মিছিল খন্দকার বাংলানিউজের নিউজরুম এডিটর হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি কবি। এই কবিকে যেতে হবে বহুদূর। কবিতায় সাধনার ছাপ আছে। টিকে থাক সেটাই প্রত্যাশা। বইমেলার কাটতি অকাটতিতে ভাবনার কিছু নেই।
বাংলাদেশ সময় ১৫১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫