ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

পাণ্ডুলিপি থেকে

কামরুজ্জামান কামুর একগুচ্ছ কবিতা

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫
কামরুজ্জামান কামুর একগুচ্ছ কবিতা

হসন্ত

একটা স্বপ্ন দেখলাম।
বরিশাল যাইতেছি।


কুয়াশা নাকি মেঘের ভিতর দিয়া
লঞ্চ আগাইতেছে।
বুকে বরফ জমতেছে।
দেখি জীবনানন্দ দাশ।
লাফ দিয়া দিয়া মেঘ ধরতেছে।
আর খাইতেছে!
আমি তাকে বলি, অই মিয়া,
আপ্নে ট্রামে যাইতে পারেন না!
খালি লঞ্চে আইসা ভীড় করেন কেন?
সে বেটা কিছুই শোনে না।
খালি হা করে করে মেঘ খায়!
আমি আবার বলি,
আপ্নের কানে কি হসন্ত হইছে নাকি!
শোনেন না কিছু?
এই যে দুলাভাই!
বউয়ের সাথে আপনার এত সমস্যা কেন?

১৯-৯-১৩


প্রেম

চলো তো আমরার কথা আমরাই
বলতে বলতে চলে যাই তো ধামরাই ...

দু’টি প্রাণে কদমপাতা কামড়াই
বাঁশি থামাও! লোকে বলবে, শ্যাম-রাই

৩১-১০-১৩


চেয়ে আছো

যে-তরী ভাসায়ে রাখি
সুদূরের তীর থেকে
তুমি তার অর্ধভাষ বাসনার মত
ক্ষীণ কিন্তু চিরন্তন
পরম রেখার মত
স্মারকের বেদনার মত

চেয়ে আছো...

২৪-৬-২০১৩


হেহে

চেলা ও চামুণ্ডা লইয়া বসে আছেন মহাকবি আমড়াগাছের তলে।
কে বল্ল যে গাছের আমড়া পড়ে যাবে না দিঘিটির জলে?
আমি তো না আমি তো না কে বল্ল কে বল্ল বলো ভাই?
গিয়া দেখি আমড়াতলে আছেন চেলা চামুণ্ডারা মহাকবি নাই।

ফেরার পথে কী আর করি হাতের ঘড়ি হাত দিয়ে ফের খুলে
ফেলে দিয়ে হাঁটতে থাকি কবি্র মতোই নিজের কথা ভুলে।

১৮-৯-২০১৪


জিজ্ঞাসা

তীরে নৌকা বেন্ধে রেখে
মাঝি গেছেন দূরে
তুমি আমি বসে আছি নৌকার উপরে
নদে কিন্তু পানি কম
এত কম জলে আবার কেলি করে নাকি?

উপরে আকাশ বড় নীল
তাইত এই ছাতা মেলে ধরা
এখন এই ছাতার তলে বসে
কোনকিছু যাবে নাকি করা?

১-১০-১৪


একটি ফুল একটি কুঁড়ি

ওগো সামনের গোলাপ ফুল,
মাঝের কুঁড়িটি দেখ
তোমারে ইগ্নোর ক’রে

আগে ফুটতে চায় !

২-১০-১৪


ভুলে-যাওয়া

ছোট্ট একটা গানের কলি
মনে আসে আসে নাকো আর—
তবু
ভুলে যাওয়া লাগে বলে
দিন ছিল মনে রাখিবার!

৩-১০-১৪


তা তা ধিন

যত আন্দাজে গোল দেওয়া ধান্দাবাজের
যত ফন্দী ও ফ্যাকরামি নিন্দিত হয়
তা তা বল বেটা বল তা তা ধিন তা তা ধিন
তাতে ফল পেকে উঠবে রে আম গাছে তোর
বেটা বল বেটা বল বেটা বল বেটা মোর
যদি তাল কাটে তাল কাটা ভাল্লাগে ভাল
কাটি চল তবে সঙ্গে নে ঢাল-তরোয়াল
দাদা দিন দাদা ধিন তা তা ধিন তা তা ধিন

৩-১০-১৪


ওগো নিমপাতা

সবগুলা ব্যাঙ একটানা
অনেকক্ষণ ডাকে।
তারপর একটু বিরতি দিয়ে
আবার ডাকে।
গ্যা গোঁ ঘাৎ ঘোৎ...
গ্যা গোঁ ঘাৎ ঘোৎ...
আর বিরতির সময়ে
চিঁচিঁ চিঁ কুকরু কুকরু কুকরু...
বিছানায় শুয়ে শুয়ে এই
একঘেয়ে ধ্বনিতে কান পেতে রাখা ছাড়া
আর কোনও অন্যতর বিবাহের সম্ভাবনা নাই।
জানালার পাশের নিমগাছের ফাঁক দিয়ে যে
চিরকালীন চাঁদ উঁকি মারতেছে,
তারও কোনও অন্যতর মোচড়ের উন্মাদনা নাই।
পাশে বউবাচ্চার মুখ।
আমি ভাবি, মানুষ এত নীরবে ঘুমায়!
গুড়ুম গুড়ুম করে মেঘ ডেকে ওঠে।
হঠাৎ বৃষ্টির ছন্দে
টিনের চাল যেন
নাচতে লাগে অন্ধকারে।


জীবনের পিছনে যতগুলা বছর ফেলে আসছি,
সামনে কি ততদিন আছে আর, ওগো নিমপাতা!

১৫-৭-২০১৩



বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।