ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

৩২তম কিস্তির লিংক
___________________________________

শেষ যারা টিকে ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন তিনজন—জোন্স, অ্যারোনসন আর রাদারফোর্ড। ১৯৬৫ সাল নাগাদ এই তিনজনকে গ্রেফতার করা হলো। যেমনটা প্রায়শই ঘটে, এদের তিনজনকেই বছর খানেক বা তারও বেশি সময় ধরে লাপাত্তা করে দেওয়া হলো, যাতে কেউ বুঝতে না পারে ওরা বেঁচে আছেন, নাকি মৃত। এরপর স্বাভাবিক নিয়মে হঠাৎই একদিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে আবারও সামনে আনা হলো তাদের। তিন জনই স্বীকার করলেন, তারা শক্রপক্ষের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করেছেন (সে সময়ও ইউরেশিয়াই ছিলো শত্রুপক্ষ), সরকারের তহবিল তসরুপ করেছেন, দলের কয়েকজন আস্থাভাজন সদস্য হত্যা করেছেন, বিগ ব্রাদারের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছেন আর তা শুরু হয় বিপ্লব শুরুরও অনেক আগে, এছাড়াও তারা জড়িত ছিলেন এমন এক নাশকতায় যার ফলে মৃত্যু হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের। এতসব কিছু স্বীকার করে নেওয়ার পরেও তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হলো, দলে ফিরিয়ে নেওয়া হলো, পদে বসানো হলো, যেসব পদ মূলত সম্মানজনক কিন্তু শুনতে দায়িত্বশীল। তিন জনই ‘দ্য টাইমস’এ লম্বা ফিরিস্তিমূলক ফালতু নিবন্ধ লিখলেন যাতে বর্ণিত হলো তাদের পদস্খলনের কারণ আর সংশোধিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি।

ওদের ছেড়ে দেওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যেই একদিন এই তিনজনকে চেস্টনাট ট্রি ক্যাফেতে দেখতে পায় উইনস্টন। তার মনে পড়ে, চোখের কৌনিক দৃষ্টি ফেলে কি ভয়ানক আগ্রহ নিয়ে সে তাদের দেখেছিলো। ওরা তার চেয়ে অনেক বয়ষ্ক, যেন প্রাচীন বিশ্বের ভগ্নাবশেষ, দলের সেই গৌরবময় সাহসী দিনগুলোর টিকে থাকা শেষ ক’টি মানুষ। গোপণ সংগ্রাম আর গৃহযুদ্ধের জ্বলজ্বলে স্মৃতি এখনও তাদের চোখেমুখে হালকা হয়ে মেখে আছে। তার মনে হচ্ছিলো, যদিও ততদিনে তারিখ আর ঘটনাগুলো আবছা হয়ে এসেছে, বিগ ব্রাদারের নাম জানার অনেক আগেই সে জেনেছিলো এই মানুষগুলোর নাম। কিন্তু মাত্র একটি কিংবা দুটি বছরের মধ্যেই এরা হয়ে গেলো নিষিদ্ধঘোষিত, শক্রপক্ষ, অচ্ছ্যুত, দ-প্রাপ্ত, নিশ্চিত মৃত্যুপথযাত্রী। থট পুলিশের হাতে পড়ে শেষ পর্যন্ত রেহাই পেয়েছে এমন একজনও পাওয়া যাবে না। এরা আসলেই কয়েকটি মৃতদেহ যাদের ভাগাড়ে পাঠানোর অপেক্ষা মাত্র।  

ওদের কাছাকাছি টেবিলগুলোতে কেউ বসেনি। এ ধরনের মানুষের আশেপাশেও ঘেঁষাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। লবঙ্গের সুঘ্রাণ মিশ্রিত জিন এই ক্যাফের বিশেষত্ব, তারই ঘ্রাণ ছড়ানো গ্লাস সামনে নিয়ে নিঃশব্দে বসেছিলেন তারা। তিন জনের মধ্যে রাদারফোর্ডের চেহারা বেশি আকৃষ্ট করে উইনস্টনকে। একসময়ের বিখ্যাত ব্যাঙ্গচিত্র আঁকিয়ে, যার নৃশংস কার্টুনগুলো বিপ্লবপূর্ব ও বিপ্লবকালীন বিষ্ফোরিত জনমত গঠনে বড় ভ’মিকা রেখেছিলো। এখনও দীর্ঘ বিরতিতে তার কার্টুন দ্য টাইমসে আসে। তবে সেগুলো পুরোই ফাঁকিবাজি, স্পন্দন নেই, নেই প্রভাবিত হওয়ার মতো কিছু। পুরোনো বিষয়গুলোরই চর্বিত চর্বণ—বস্তিবাসী, ক্ষুধার্ত শিশু, সড়ক সংঘর্ষ, আর চোঙা হ্যাটের পুঁজিপতি—বাধার মধ্যে থেকেই পুঁজিপতিরা এখনো তাদের চোঙা হ্যাটে পেছনের দিনে ফিরে যাওয়ার অবিরাম, অবুঝ  চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দৈত্যাকায় বপু, তেলজবজবে ধুসর কোকঁড়ানো চুল, বলিরেখা ভরা ঝুলে-পড়া চামড়ার মুখ, নিগ্রোগের মতো মোটা ঠোঁট। একসময় তার শরীর যে ভীষণ শক্তি ধরতো তা বোঝা যায়, কিন্তু এখন তার সেই বড় বপুখানা ঝুঁকে-নুয়ে পড়েছে, ভেঙ্গে-ভেঙ্গে পড়ছে সবদিকে। পাহাড় যেমন ধসে যায় তেমনি মানুষের চোখে ধসে পড়েছেন তিনি।

বেলা তিনটা, একাকীত্বের সময় উইনস্টনের। এখন ঠিক মনে আসছে না, অমন একটি সময়ে কিভাবেই সে ক্যাফেতে পৌঁছেছিলো। গোটা ক্যাফেই বলতে গেলে ফাঁকা। হালকা একটা সুর-সঙ্গীত টেলিস্ক্রিন থেকে ভেসে আসছিলো । তিন ব্যক্তি এক কোনায় অনেকটা মূর্তির ন্যায় বসে, মুখে রা শব্দটিও নেই। কিছু বলার আগেই আরেক প্রস্থ জিন দিয়ে গেলো ওয়েটার। টেবিলের একপাশে একটা দাবার বোর্ড, গুটি সাজানো আছে,   খেলা শুরুর অপেক্ষা। টেলিস্ক্রিনের সঙ্গীত পাল্টে গেলো। শুরু হলো নতুন বাজনা- অদ্ভুত, ভাঙ্গা, কর্কশ এলোমেলো স্বর। উইনস্টন মনে মনে এর নাম দিয়েছে হলুদ স্বর। টেলিস্ক্রিন থেকে ভেসে আসা কণ্ঠ গাইছে:

ছড়িয়ে পড়া চেস্টনাট গাছের ছায়ায়
আমি তোমাকে বেচলাম, তুমি বেচলে আমায়
হেথায় শুয়ে তারা, আর আমরা এখানে
ছড়িয়ে পড়া চেস্টনাট গাছের ছায়ায়...
                   
তিন জনের মধ্যে নড়াচড়া টুকুও নেই। উইনস্টন আরেকবার যখন রাদারফোর্ডের বিপর্যস্ত চেহারায় চোখ ফেললো, দেখতে পেলো চোখ দুটি পানিতে ভরে উঠেছে। আর প্রথমবারের মতোই তার নজরে এলো অ্যারনসন ও রাদারফোর্ড দুজনেরই নাক ভাঙা। চোখে পড়তেই মনের ভেতরটা গুমড়ে উঠলো। অবশ্য আজও সে জানেনা কেনোই তার মনের ভেতরটা গুমড়ে উঠেছিলো।

৩৪তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময় ১৭২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।