ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘নারী নির্যাতনবিরোধী গল্প কবিতা পাঠ্য হতে পারে’

নারী দিবস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
‘নারী নির্যাতনবিরোধী গল্প কবিতা পাঠ্য হতে পারে’

কথাসাহিত্যে রাশিদা সুলতানার আত্মপ্রকাশ এই শতাব্দির শুরুর দিকে। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনে গল্প প্রকাশিত হবার পর সমকালীন বোদ্ধা পাঠকদের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসেন।

এখন পর্যন্ত প্রকাশিত চারটি গল্পগ্রন্থ: ‘অপণা মাঁসে হরিণা বৈরী’ (২০০৪), ‘আঁধি’ (২০০৭), ‘পরালালনীল’ (২০০৯) ও ‘পাখসাট’ (২০১২)। আর, সবশেষ ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সাদা বিড়ালেরা’। বর্তমানে সুদানের দার্ফুরে জাতিসংঘ শান্তি মিশন ইউনামিডের (UNAMID) কেন্দ্রীয় সেক্টর প্রশাসনের দায়িত্বে নিয়োজিত রাশিদা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার। বাংলানিউজের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন তানিম কবির

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার দু’তিনটি গল্প পড়লাম সম্প্রতি, দুটোই বীরাঙ্গনা ভাষ্যে আর রাহুর আরোহী নামে অন্য গল্পটিতেও মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধপরবর্তীকালে নারীর ত্যাগ এবং সংগ্রামের কথা বলেছেন। এটা কি নিজেও আপনি একজন নারী—এ কারণে?

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে জয়েন করি। বাংলাদেশে যেটাকে একদম লোভনীয় চাকরি জীবন বলে চিহ্নিত করা হয়, এইরকম উঁচু পদমর্যাদা সম্পন্ন চাকরিতেও, এই সর্বোচ্চ পরিবেশেও আমি যখন নারীর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্ট্রাগল দেখি—২০১৫ সালেও নারীদের অশেষ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে দেখি, সেখানে এত বড় মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে, আরও আগের একটা সমাজে, যখন মানুষের ওপেননেস একদমই ছিল না, সেই সমাজে বীরাঙ্গনাদের অপমান, ত্যাগ, মৃত্যুভয়, আতঙ্ক, ৭১-এ এবং তৎপরবর্তী কালের জীবনসংগ্রাম লেখক হিসেবে আমাকে আকর্ষণ করে। আমার মনে হয়েছে ওদের অভিজ্ঞতাটা আমি আমার সংবেদনশীলতা দিয়ে অনুভব করতে পারি। হতে পারে সে কারণেই বিষয় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ আমার গল্পে বীরাঙ্গনাদের মাধ্যমে উৎসারিত হয়েছে। সেটা অন্য কোনওভাবেও হতে পারত, হবে হয়ত আগামীতে, আমি জানি না।

আপনার ‘বীরাঙ্গনা’ গল্পের বীরাঙ্গনা আর ‘রেণুর মুক্তিযুদ্ধ’ গল্পের বীরাঙ্গনা—সমাজের দুইটা শ্রেণীর দুই ধরনের নারীচরিত্র।

বীরাঙ্গনা গল্পের বীরাঙ্গনা হচ্ছে খুবই আত্মবিশ্বাসী ও আত্মমর্যাদাশীল। আসলে এ-দুই গল্পের দুই বীরাঙ্গনার পরিস্থিতি সম্পূর্ণই আলাদা। রেণুর মুক্তিযুদ্ধ গল্পের মেয়েটা একটা ঘরে আশ্রিত, সেখানে সে কাজ করে। যুদ্ধের পরে, যেহেতু সে ধর্ষিত হয়েছে, এখন কোনও রকমে তাকে একটা বিয়ে দিয়ে দেওয়া। কারণ ধর্ষিতরা আমাদের সমাজে একটি প্রশ্নচিহ্ন হয়ে যায়। যে করেই হোক, সেই চিহ্নটিকে মুছে দিতে, একটা সমাধানে পৌঁছে যেতে চায় সবাই।

‘রেণুর মুক্তিযুদ্ধ’
গল্পে মেয়েটা যাদের বাড়িতে আশ্রিত, তারা ধর্ষিত হবার পর তাকে তার তুলনায় একেবারেই অযোগ্য একটা লোকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়। তারপর যেটা হলো, কখনওই ওই লোকটার প্রতি, এক মুহূর্তের জন্যও কোনও শ্রদ্ধা আসে না, ভালোবাসাটা তৈরি হয় না, কেবল সমাজের চাপেই যেহেতু বিয়েটা হয়!
 
আবার এমনও না যে সব বীরাঙ্গনারই বা আজকেও সব ধর্ষিতারই একই পরিণতি হয়। অবশ্যই ব্যতিক্রমও আছে। যেমন বীরাঙ্গনা গল্পে দেখাচ্ছি, তিনি সুশিক্ষিত, আত্মমর্যাদাশীল, ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সেইসময়ে, বিভিন্ন মুভমেন্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তো এক্ষেত্রে দেখা যায় তার ব্যক্তিত্ব এতই শার্প, এতই দৃঢ় যে মুক্তিযুদ্ধের পরে তাকে কেউ কোনওদিন সামনে এসে এই বিষয়ে একটা কথা বলার সাহস পায় নাই। এরকম বাঙালি মেয়েও কিন্তু ছিল, আছে, সবসময়ই ছিল। এমনকি সমাজের সব স্তরেই এধরনের শক্তিশালী, সাহসী ও ব্যক্তিত্বশীল নারীরা আছে।

‘রাহুর আরোহী’ গল্পের ঝর্না সম্পর্কে বলুন। তিনি এক দুর্দান্ত প্রতিবাদী নারীচরিত্র হিসেবে আপনার গল্পে হাজির হয়েছেন।

আমার এক নারী সহকর্মীর কাছে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নানা অভিজ্ঞতার কথা শুনেছিলাম। তিনি জানালেন ১৯৭১-এ একজন বাঙালি নারীকে পাকিস্তানি মিলিটারি অফিসার জিপের পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে জিপ চালিয়ে পুরো শহরে ঘুরে বেরিয়েছে। জিপের পেছনে বাঁধা ওই নারীর মৃত্যুযন্ত্রণা তাদের শহরের বহু মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সহকর্মীর কাছে এই গল্প শুনে আমার মনে হলো ওই নারীর অপমান যেন আমাকে করা হয়েছে, এই ভয়ঙ্কর মৃত্যুযন্ত্রণা যেন আমারই যন্ত্রণা হয়ে ওঠে তখন। ২০০৮ সালে ৭১-এ শহীদ হওয়া ওই নারীর মৃত্যুযন্ত্রণা, অপমান সব আমি আমার শরীরে, আত্মায় অনুভব করতে পারি। তখন সিদ্ধান্ত নিই এই নারীর কথা আমি লিখব কোনও গল্প বা উপন্যাসে। ঝর্না হচ্ছে আজন্ম বিদ্রোহী এক বাঙালি নারী, যে কিনা বিনা প্রতিবাদে, বিনা প্রতিরোধে কোনও অন্যায় মেনে নেয় না। পাকিস্তানি ক্যাম্পে যতবার
পাকিস্তানিরা তাকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয় ততবার সে তাদের মুখে থুথু ছিটিয়ে প্রতিবাদ জানায় মৃত্যুভয়ের একবিন্দু তোয়াক্কা না করে।

এই গল্প প্রকাশিত হবার বহুদিন পর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরের ট্রাস্টি এবং বিশিষ্ট লেখক মফিদুল হকের কাছে জানতে পারি, ১৯৭১-এর কমিউনিস্ট পার্টি কর্মী হেলেন নামের একজন বাঙালি নারীকে মাগুরায় পাকিস্তানি কমান্ডার ঠিক ঝর্নার মত করে হত্যা করে, তার জিপের পেছনে বেঁধে শহরময় ঘুরে বেড়ায়।

অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনার গল্পের নারীচরিত্রেরা এত অবসেস্‌ড কেন? সেটা কি আপনার ব্যক্তিপ্রভাব, যেটা চরিত্রদের ওপর প্রতিফলিত হয়?

ক্রিয়েটিভ মানুষ মাত্রই কিছু পরিমাণে মানে, বরং উল্টা করে বলা যায়, অবসেস্‌ড মানুষরা অনেকেই  ক্রিয়েটিভ হয়, বা ভালো  রাইটার হয়, ভালো পেইন্টার হয়. আমি নিজেও মনে করি ক্রিয়েটিভ হওয়ার ক্ষেত্রে অবসেস্‌ড হওয়াটা ভালো। যেকোনও জিনিস খুব ভালো করতে গেলে... এমনকি একটা মাস্টার্স থিসিসও যদি করেন—যখন অবসেস্‌ড হয়ে, গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করবেন, একদম নেশাগ্রস্ত হয়ে জিনিসটা করবেন পূর্ণ ভালোবাসায়, তখন কাজটা ভালো হয়... অবসেশন বলতে তো এখানে আপনার ভালোবাসা, মনোযোগ সমস্ত কিছু ওই জায়গায় কেন্দ্রীভূত। আপনার পৃথিবীতে এটাই তখন ঈশ্বর হয়ে ওঠে। আপনি যখনই যেটা করতেছেন, ওইটাই তখন আপনার গড, ওই গডই আপনারে চালায়। সেটা আপনার প্রেমিক বলেন, পিস অব পোয়েট্রি বলেন—তো এই ঈশ্বরের থাকাটা আমি মনে করি ক্রিয়েটিভ মানুষের জন্য ভালো। এরকম আমার লেখাটা যখন ঈশ্বর হয়ে ওঠে, আমার সমস্ত নিবেদন তখন এইটাকে কেন্দ্র করেই। আপনি জানতে চাইছেন, নিজে আমি অবসেস্‌ড কিনা, হ্যাঁ আমি আমার কাজ নিয়ে অবসেস্‌ড হই। আমার প্রিয় কাজ প্রার্থনার মত করে অনেক ভালোবাসা দিয়ে করি।
 
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীদের অবস্থান সম্পর্কে আপনার ভাবনাগুলো যদি শেয়ার করেন। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের প্রতিষ্ঠিত হবার, এদেশে নারীদের মুক্তির ব্যাপারে আপনার আশাবাদ কতখানি?

আমি বলব বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। দেশে সরকারি, বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা কাজ করছেন। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য, উন্নয়নের জন্য নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে। এটা আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি। কিন্তু সরকারি, বেসরকারি সব অফিস, অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে নারীর ৩০% অংশগ্রহণ যদি আমরা নিশ্চিৎ করতে না পারি, নারীর ক্ষমতায়ন প্রতীকী ক্ষমতায়ন হিসেবেই থেকে যাবে, প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না। বর্তমানে পুলিশে নারীর অংশগ্রহণ ৫.৮%, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ১০%।

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অন্তত ৩০%-এ পৌঁছলে নারী উন্নয়নে আমাদের অর্জন নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারব। নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ হচ্ছে তার অর্থনৈতিক মুক্তি, যা দিয়ে অন্তত  পরিবারে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কিছু ক্ষমতা তৈরি হয়। বাংলাদেশে সমাজের সব স্তরে নারীকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যেতে হয়। ঘরে, বাইরে সবখানে।

নারীর পক্ষে শক্তিশালী আইন থাকা সত্ত্বেও এদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, শারীরিক, মানসিক নির্যাতন খুব একটা কমেছে বলে আমি মনে করি না। সামাজিক চাপের কারণে বহু নারী তাদের প্রতি নির্যাতন মুখ বুঁজে সহ্য করে যায়। এজন্য আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। যৌতুকবিরোধী, নারী নির্যাতন বিরোধী গল্প-কবিতা
মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। স্কুল, কলেজে নারী নির্যাতন বিরোধী, যৌতুকবিরোধী রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে।

এ সময়ের কাদের লেখা ভালো লাগে আপনার? লেখায় কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন?

কাকে আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করব, সেখানে সমসাময়িক কেউই যে আসবে, ওইরকম না। সেখানে তারাশঙ্কর, মানিক, সন্দীপন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শহীদুল জহির... মানে যারা গুরুত্বপূর্ণ গদ্যলেখক, যারা আমার প্রিয় লেখক সেটা বঙ্কিমও হতে পারেন, এবং অন্য ভাষার আমার কোনও প্রিয় সাহিত্যিক হতে পারেন। মানে সেটা আজকের বা এক শ বছর আগেরই হোক বিষয় না। তারা গদ্যে আলাদা যা করছেন, যা করে তারা গুরুত্বপূর্ণ, আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলে ওই উচ্চতার সাথে। আমার সময়ে কারা গল্প লিখছে, কবিতা লিখছে সেটা কখনওই আলাদাভাবে কোনও লেখক বা কবির বিবেচ্য হওয়া উচিত না।

পাঠক হিসেবে কোন ধরনের গল্প উপন্যাস আপনি বেশি পড়তে চান?

ম্যাজিক রিয়েলিজম ছাড়াও গার্সিয়া মার্কেসের উপন্যাস যেমন আখ্যানে ঠাসা থাকে, উপন্যাসের এই ঘরানার প্রতি আমার মুগ্ধতা আছে। তবে স্যুররিয়েলিস্ট গল্প, উপন্যাসের প্রতিও আমার দুর্বলতার শেষ নাই। আবার একেবারে সামাজিক বাস্তবতার পাটাতনে রচিত বহু গল্প-উপন্যাস আমার অসামান্য মনে হয়েছে। আমার ভীষণ প্রিয়... শহীদুল জহির, মার্কেস, বোর্হেস, কাফকা, সিঙ্গার, মুরাকামি, অরুন্ধতী রায়, অক্তাবিও পাস, হার্টা মুলার, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তলস্তয়, হেমিংওয়ে, চেখভ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশ গুপ্ত, ইতালো কালভিনো এবং আরও অনেকে।
 
পুলিশের একজন অফিসার হিসেবে লেখালেখির ক্ষেত্রে কোনও বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয় কি?

শিল্প সাহিত্যের ব্যাপারে সরকারি অফিসারদের তেমন কোনও বিধি নিষেধ বা সীমাবদ্ধতা নাই। শহীদুল জহির সরকারি অফিসার ছিলেন। বঙ্কিম চন্দ্র, সঞ্চীবচন্দ্র, অন্নদাশঙ্কর রায়, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে ছিলেন... উনারা যখন সাহিত্য করছেন... বা ব্রিটিশরাও যারা আইসিএস ছিলেন, লেখালেখি করতেন, উনারা যেকোনোভাবেই হোক শিল্প-সাহিত্য করার জন্য স্বাধীনতা—ওই স্পেসটা  রেখে গেছেন। আজ পর্যন্ত শিল্প-সাহিত্যের জন্য সরকারি কর্মচারীদের এই স্বাধীনতার ধারাবাহিকতায় কোনও বাধা আসে নাই। সরকারের কোনও পলিসি নিয়ে যদি প্রত্যক্ষ কোনও বিরোধিতা না করেন, সেক্ষেত্রে লেখালেখিতে কোনও সমস্যা নেই। তবে একধরনের ব্যাপার তো থাকেই যে, লেখার সময় একটু সতর্কতা, ওইটাও স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উপস্থিত থাকে সরকারি অফিসারদের।

অর্থাৎ সরকারি অফিসার হিসেবে চাকরিরত, এই তথ্যটা একটু মনে রাখা?

হ্যাঁ। তবে সরকারি চাকরি করলেও লেখকমাত্রই পলিটিক্যাল বিয়িং। রাজনীতির প্রতিঘাত তো লেখায় থাকেই। কিন্তু একদম স্ট্রেইট সরকারকে সমালোচনা না করেই তো আপনি দারুণ সাহিত্য করতে পারেন, তাই না?  রূপক, উপমার মোড়কে, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা,  সমালোচনা, স্যাটায়ার থাকতে পারে...

আপনার নারী পরিচয়টি কোনওভাবে আপনার লেখক পরিচয়কে ডিস্টার্ব করে কি?

সাহিত্যিক সমাজে নারী হিসেবে অবমূল্যায়িত হবার ঘটনা ঘটে নাই, বা কোনও ঘটনাকে আমি ওইরকম আলাদাভাবে চিহ্নিত করতেও যাই নাই। কোনও কোনও লেখকের ঈর্ষা এবং ঈর্ষাপ্রসূত প্রতিরোধের মুখোমুখি যে হই নাই তা না, কিন্তু সেটা তো নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই ঘটে। নারী হিসেবে এই সমাজে বেড়ে উঠতে গিয়ে অপবাদ, অবমাননার মুখোমুখি হতে হয়েছে বহুবার। তবে কখনওই হতোদ্যম হয়ে পড়িনি। উত্তম পুরুষে লেখা প্রায় সব গল্পের ক্ষেত্রেই ওটা আমার আত্মজীবনী কিনা, এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কল্পনার সীমাবদ্ধতা থেকে এসব প্রশ্ন পাঠকের মাথায় তৈরি হয়। লেখক হিসেবে আমি আত্মবিশ্বাসী। এখন তো বয়স চল্লিশোর্ধ্ব, আরও কম বয়েসেও—আটাশ-উনত্রিশেও আমি কারও ভ্রুকুটিকে, কোনও প্রতিরোধকে পাত্তা দেই নাই। পাত্তা দিলে, নিজের ভেতর কুঁকড়ে গেলে লেখক হিসাবে, বা আমার পেশাগত জীবনে বহু আগেই থেমে যেতে হতো।



বাংলাদেশ সময়: ১২৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।