ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের দশম কিস্তি
___________________________________

দ্রততার সঙ্গে, জঙ্গল সরিয়ে সরিয়ে, সেই ফাঁকা স্থানে ছুটল তারা। আর সেই চারা গাছের চক্রের মধ্যে ঢুকে পড়তেই মেয়েটি ঘুরে তার মুখোমুখি দাঁড়াল। দু’জনেরই ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে, মেয়েটির মুখের কোণে সেই চেনা হাসিটি ফিরে এসেছে। তার চোখে চোখ রেখে সে দাঁড়িয়ে, তা এক লহমার জন্য। এরপর তার হাত আলখেল্লার জিপারে। আর হ্যাঁ! ঠিক এমনটাই ছিল সেই স্বপ্নে। এইক্ষণে দ্রুত যতটুকু স্মরণ করে নেওয়া যায়, মেয়েটি তার শরীর থেকে পরিধান ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলছে, আর যখন সেগুলো দুই দিকে তাচ্ছিল্যভরে ছুঁড়ে ফেলছিল তাতে গোটা সভ্যতাই যেন বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছিল। মেয়েটির নগ্ন শরীর সূর্যের আলোতে উজ্জ্বল রঙ ধরেছে। কিন্তু সেই মুহূর্তে তার চোখ শরীরে নয়; আটকে আছে মেয়েটির মুখের কোণায় লেগে থাকা হাসিতে। মেয়েটির সামনে হাঁটু গেড়ে বসল সে। ওর হাত দুটো তুলে নিল হাতে।

‘তুমি আগে কখনও করেছো?’
‘অবশ্যই। শতশত বার করেছি—না মানে, অনেকবার করেছি। ’
‘পার্টির সদস্যদের সঙ্গে?’
‘হ্যাঁ, সবসময়ই কোনও না না কোনও পার্টি-সদস্যই ছিল। ’
‘ইনার পার্টির সদস্যদের সঙ্গে?’
‘না এই শুয়োরদের সঙ্গে নয়। তবে সুযোগ দিলে এদের হিড়িক পড়ে যেত। যতটা ভাব করে ততটা পবিত্র আসলে ওরা নয়। ’



তার হৃদযন্ত্র ধক করে উঠল। অনেক অনেকবার সেও এই কাজ করেছে। তারও ইচ্ছা—শত শত কিংবা হাজার হাজারবারই হোক। দুর্নীতির আভাস মেলে এমন কিছু হলেই তার মধ্যে এই এক হিংস্র প্রত্যাশা জাগ্রত হয়। কে জানে, পার্টি হয়ত আসলে তলে তলে পচেই গেছে, এর কষ্টার্জিত প্রথা আর আত্ম অপহ্নব স্রেফ দুর্বলতা আর বদমায়েশি ঢেকে রাখার প্রতারণা মাত্র। সে যদি এদের সবাইকে বা অনেককেই কুষ্ঠ কিংবা যৌনব্যাধিতে সংক্রমণ করে দিতে পারত, তাহলে কতই না খুশি হতো। যা কিছুকে পচিয়ে দেয়া যায়, দুর্বল করে দেয়া যায়, খাটো করা যায়, করে দাও।

জুলিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নামালো; এখন তারা দুজনই হাঁটুভেঙ্গে মুখোমুখি।

‘শোনো যত পুরুষের সঙ্গে তুমি শুয়েছো, ততই বেশি আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমি কি বুঝতে পারছো?’
‘হ্যাঁ, পুরোই বুঝে নিয়েছি। ’
‘আমি পবিত্রতায় ঘৃণা করি, আমি ভালোত্বে ঘৃণা করি! আমি চাই না কোন সদ্গুণ কোথাও টিকে থাক। আমি চাই সবাই হাড়ে হাড়ে বজ্জাত হয়ে উঠুক। ’
‘বেশ, তাহলে তোমার সঙ্গেই আমার মিল, প্রিয়তম। আমি এক হাড়ে হাড়ে বজ্জাত। ’
‘তুমি কি কাজটা করতে পছন্দ করো? আমি ঠিক স্রেফ আমার সঙ্গের কথা বলছি না, সার্বিকভাবে কাজটির কথা বলছি। ’
‘আগ্রহ আর ভক্তিভরেই কাজটি করি আমি। ’
ঠিক এমনটাই শুনতে চেয়েছিল সে। কারও সঙ্গে ভালোবাসার টানে নয়, পাশবিক তাড়নায়, স্রেফ অভিন্ন লালসায় কাজটি করবে, আর সেই শক্তিই পার্টিকে খান খান করে দেবে।

মেয়েটিকে চেপে ধরে ঘাসের ওপর শুইয়ে দিল সে, চারিদিকে ছড়িয়ে আছে নীলঘণ্টি ফুল। এবার আর কোনও বাধা নেই। এ পর্যায়ে তাদের বুকের ওঠানামা স্বাভাবিক গতি পেল আর দুজন আলাদা হয়ে শুয়ে পড়ল। সূর্যটা আরও তেজি হয়ে উঠেছে বলেই বোধ হচ্ছিল। ওদের দুজনেরই ঘুম ঘুম লাগছে। ছুঁড়ে ফেলা আলখেল্লাটি তুলে নিয়ে তার কিছু অংশ মেয়েটির গায়ের ওপর মেলে দিল। অনেকটা তখনই দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ল। আর প্রায় আধাঘণ্টা ধরে ঘুমোলো।

প্রথম ঘুম ভাঙল উইনস্টনের। উঠে বসল আর মেছতা পড়া মুখটির দিকে চোখ পড়ল, হাতের তালুতে বালিশ বানিয়ে তখনও শান্তির ঘুম তার। মুখের গড়নটি ছাড়া আর কোনও কিছুতেই তাকে আপনি সুন্দরী বলতে পারবেন না। একটু কাছে থেকে দেখলে চোখে পড়বে তার চোখের চারিদিকে দাগ পড়ে আছে। ছোট কালো চুলগুলো অস্বাভাবিকরকমই মোটা আর নরম। এবার মনে এলো, এখনও ওর ডাকনামটি জানা হয়নি, জানা হয়নি কোথায় থাকে সে।

ঘুমের মাঝে অসহায় যৌবনভরা এই শক্তসামর্থ শরীরখানা তার মধ্যে এক ধরনের করুণা জাগ্রত করল, যেন ওর সুরক্ষার দায়িত্ব তার। কিন্তু ঝোপের পেছনে দোয়েলের গান শুনতে শুনতে যে ভালোলাগাটুকু ছিল তা যেন আর পুরোপুরি ফিরে আসছে না।

পুরোনো দিনগুলোর কথা ভাবল সে, কোনও একটি পুরুষ একটি নারীর শরীরকে কামনার দৃষ্টি থেকেই দেখত, আর একেকটি কাহিনী কামনার তৃপ্তিতেই শেষ হতো। কিন্তু আজকাল আপনি আর নির্ভেজাল ভালোবাসা যেমন পাবেন না, নির্ভেজাল লালসাও তেমনি পাবেন না। এখন আবেগটাই খাঁটি, কারণ সবকিছুই আজ ভয় আর ঘৃণায় একাকার হয়ে গেছে। তাদের আলিঙ্গন ছিল এক যুদ্ধ, সঙ্গম ছিল সে যুদ্ধের জয়। এ ছিল পার্টির মুখে এক চরম আঘাত। আর নিঃসন্দেহে এ এক রাজনৈতিক কাজও বটে।

দ্বিতীয় খণ্ডের ১২তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময় ১৬৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।