ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৫২তম কিস্তি
___________________________________

এ এক ইচ্ছানীতি যেখানে অনুগ্রহভাজনদেরও অভাবগ্রস্ততার কিনারায় লটকে রাখা হয় যাতে আকালের দিনে ছোট্ট একটি সুবিধাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা দেয়, আর এভাবেই অনুগ্রহ আর বিরাগভাজনদের মাঝে তফাৎটা বহুগুনে বিবর্ধিত হয়। বিশ শতকের গোড়ার দিকের জীবন-মান বিবেচনায় নিলে বলা যায়, তখন কিন্তু ইনার পার্টির একজন সদস্যেরও একটু বেশিই খাটুনির জীবন ছিল। তবে, গুটিকয় বিলাসিতাও তারা উপভোগ করত, সুসজ্জিত ফ্ল্যাট, মিহি কাপড়ের পোশাক, ভালো মানের খাবার, পানীয় আর তামাক মিলত। জনা দুই কিংবা তিনেক চাকর-বাকর রাখা যেত, ব্যক্তিগত মোটর কার কিংবা হেলিকপ্টার পর্যন্ত ছিল যাতে তাকে আউটার পার্টির একজন সদস্য থেকে খুব সহজেই আলাদা করা যেত। আর আউটার পার্টির সদস্যেরা আবার সাধারণ নিগৃহীত জনগোষ্ঠী, যাদের আমরা ‘প্রোল’ বলছি, তাদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি সুবিধা ভোগ করত। এ এক অবরুদ্ধ নগর সমাজ, যেখানে এক টুকরো ঘোড়ার মাংস থাকা আর না থাকা দিয়ে বিবেচিত হয় ধনী আর গরীবের ফারাক। একইভাবে যুদ্ধাবস্থা বা বিপদগ্রস্ততায় একটি ছোট্ট গোষ্ঠীর হাতে সর্বময় ক্ষমতা তুলে দেওয়াকেই টিকে থাকার স্বাভাবিক, অপরিহার্য শর্ত বলে ভাবতে শেখায়।



যুদ্ধ, যেমনটা দেখা যায়, প্রয়োজনীয় ধ্বংস সাধন করে চলে, আর তা করে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য এক প্রক্রিয়ায়। নীতিগতভাবে বিশ্বের অতিরিক্ত শ্রম ধ্বংস করার সহজ পথ হচ্ছে, মঠ-পিরামিড তৈরি করা, গর্ত খুঁড়ে আবার সেই গর্তই ভরাট করা কিংবা বিপুল পণ্য উৎপাদন করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। কিন্তু এতে আধিপত্যবাদী সমাজের অর্থনৈতিক ভিত দৃঢ় হয়, মনোবলের ভিত নয়। এখানে যে মনোবলের কথা বলা হচ্ছে তা কিন্তু মোটেই সাধারণের মনোবল নয়, সাধারণের ভাবাবেগ গুরুত্বহীন কারণ তাদের কাজই হচ্ছে কাজ করে যাওয়া, এই মনোবল হচ্ছে পার্টির নিজের। এমনকি অতি বিনয়ী পার্টি সদস্যটিকেও হতে হবে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় যোগ্য, পরিশ্রমী আর বুদ্ধিমান, কিন্তু এও প্রয়োজন যে এই সদস্যটি হবেন বিশ্বাসপ্রবণ, অজ্ঞ আর গোঁড়া প্রকৃতির যার মজ্জাগত হয়ে থাকবে ভীতি, ঘৃণা, তোষামোদিতা আর মাত্রাহীন বিজয়োল্লাস। অন্য কথায় তার এমন এক মানসিক গড়ন থাকতে হবে যা যুদ্ধাবদ্ধার সঙ্গে খাপ খায়। যুদ্ধ আদতে হচ্ছে কি হচ্ছে না, তাতে কিছু যায় আসে না, আর, যেহেতু সুনির্দিষ্ট যুদ্ধ জয় অসম্ভব, সেহেতু যুদ্ধ ভালো চলছে নাকি মন্দ সেটাও ধর্তব্যের নয়। যা জরুরি তা হচ্ছে, একটি যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, এটাই নিশ্চিত করা।

গোটা বিশ্বেই পার্টি তার সদস্যদের কাছে গোয়েন্দাগিরি প্রত্যাশা করে, আর যুদ্ধাবস্থায় তা করা অপেক্ষাকৃত সহজও, কিন্তু কোনো সদস্য দলের যত বেশি উচ্চপদে যাবে ততই বেশি চিহ্নিত হয়ে পড়বে। সুনির্দিষ্ট করেই বলা চলে ইনার পার্টির যুদ্ধ-মত্ততা আর শত্রুপক্ষের প্রতি ঘৃণা সবচেয়ে প্রবল। প্রশাসকের যোগ্যতা নিয়ে ইনার পার্টির একজন সদস্যকে প্রায়শই জানতে হবে, যুদ্ধের এই এই খবরগুলো অসত্য, অথবা তাকে কখনো কখনো এও জেনে রাখতে হবে যে গোটা যুদ্ধটিই মেকি, আর হয় তা মোটেই ঘটছে না অথবা কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই এই যুদ্ধের উস্কানি কিংবা হম্বিতম্বি। তবে এই জ্ঞান বা ধারণাকে দ্বৈতচিন্তার এক সহজ পদ্ধতিতে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে হবে। এদিকে, ইনার পার্টির কোনো সদস্য কিন্তু যুদ্ধ নিয়ে এতটুকুও দ্বিধান্বিত নন, এক রহস্যময় বদ্ধমূল বিশ্বাসে তারা মনে করেন এই যুদ্ধ সত্য, জয় দিয়েই তার অবসান ঘটবে, আর ওশেনিয়া একদিন হয়ে উঠবে গোটা বিশ্বের একচ্ছত্র প্রভু।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৪তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।