ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বৃষ্টির জন্মভূমি | ধ্রুব এষ (কিস্তি ৮)

ধারাবাহিক উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫
বৃষ্টির জন্মভূমি | ধ্রুব এষ (কিস্তি ৮) অলংকরণ : মাহবুবুল হক

সপ্তম কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন

৮.
ঘুম ধরেছে রশিদুন্নবীর।
এতক্ষণ টহল দিয়েছে তারা তিনজন।


রশিদুন্নবী এবং তার দুই সাগরেদ।
মো. সাদেক তালুকদার এবং শ্রীযুক্ত দেবল তালুকদার।
মো. সাদেক তালুকদার বলল, ‘উস্তাদ। ’
রশিদুন্নবী ঘুমগলায় বলল, ‘বল। ’
‘দেখেন। ’
‘কী?’
‘পার্কিঙে দেখেন। ’
দেখল রশিদুন্নবী। কিন্তু এত ঘুম চোখে, দেখে কিছু বুঝতে পারল না। আবার বলল, ‘কী? কী দ্যাখতে বললি?’
‘ইয়ামিন স্যারে, ওস্তাদ। ’
অল্প সতর্ক হলো রশিদুন্নবী, ‘ইয়ামিন স্যার? কই দেখলি?’
‘গাড়িতে উঠছে। লগে ছয়তলার ম্যাডাম। ’
‘কী?’
আবু ইয়ামিনের গাড়ির হেডলাইট জ্বলল।
পার্কিং থেকে বের হয়ে এলো গাড়ি।
রশিদুন্নবী ইশারা করল।
গেট খুলে দিল শ্রীযুক্ত দেবল তালুকদার।
ডার্কগ্লাস পরা আবু ইয়ামিন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল।
ছাদ থেকে দেখল গাবরু সরদার। এখনও ইউনিফর্ম পরে আছে সে। কাউকে কল দিয়ে বলল, ‘ক্রেইনস আর ফ্লায়িং। ওভার। ’ সেলফোন না, ওয়াকিটকিতে বলল।
ঠিকই দেখেছে মো. সাদেক তালুকদার।
ছয়তলার ই-ফোর ফ্ল্যাটের ম্যাডামও গাড়িতে।
মায়া হলো রশিদুন্নবীর।
ভালো মানুষের কপাল এ রকমই হয়।
ভালোমানুষ বউ পায় খারাপ।
ই-ফোরের স্যার মানুষটা ভালো। নামডাক আছে। বলতে কী সারাদেশের মানুষজন চেনে। তার এমন কপাল! এমন বউ!
রশিদুন্নবীর এত হায়-আফসোসের পরেও কথা বলল আবু ইয়ামিনের টাকা। রশিদুন্নবী বলল, ‘কিছু বুঝলি? এত রাইতে কই গেল তারা?’
শ্রীযুক্ত দেবল তালুকদার বলল, ‘আমার মনে হয় নাইটকেলাবে, উস্তাদ। ’
‘তুই একটা ভুন্দা। চুপ কর। সাদেক, তুই বল। ’
‘গেছে উস্তাদ মাটি কোপাইতে। ’
বলে মো. সাদেক তালুকদার হে হে করে হাসল।
বেজায় আনন্দিত হয়ে রশিদুন্নবীও হে হে করে হাসল। কল দিল আরো দশ মিনিট পর।
‘স্যার?’
‘রশিদুন্নবী। ’
‘সেলামালিকুম, স্যার। আপনে ঘুমান নাই?’
‘না, রশিদুন্নবী। কেন?’
‘স্যার... ইয়া... আপনে কই?’
‘বাইরে আছি একটু। সকালে ফিরব। কেন, বলো তো?’
‘স্যার, আপনের গাড়ি তো পার্কিংয়ে। ’
‘গাড়ি নিয়ে বেরোইনি আজ। তুমি এখন ফোন করেছো কেন বলো?’
রশিদুন্নবী ঘটনা বলল।
প্রতিক্রিয়া?
‘অ। ’
শুধুই অ!



৯.
‘অ-এর গল্প’ বলে একটা সিরিয়াল দেখায় টেলিভিশনে।
অ-এর গল্প কী?
অপরাধীর গল্প?
অপরাধের গল্প?
অপরাধ। অপরাধ কী?
ক্রিয়েটিভভাবে একটা কাজ যদি করা যায়, সেটা কি আর অপরাধের পর্যায়ে থাকে?
ক্রিয়েটিভিটি ইজ ক্রিয়েটিভিটি। অপরাধ না। কেন হবে?
আকাশ মেঘলা।
আধখানা চাঁদ দেখা যাচ্ছে না আর।
বৃষ্টি আবার নামবে।
রাস্তা ভেজা এবং সুনসান।
গাড়ি ছুটছে।
দুই একজন মানুষ রাস্তায়।

নিশিকন্যা বহনকারী একটা রিকশা। তিন কন্যা। চোখ ধাঁধানো রঙের ড্রেস পরে আছে। পিংক, হলুদ এবং টিয়ারং সবুজ। ইলা একদিন জ্ঞান দিয়েছিল, ‘টিয়ারং সবুজকে মেয়েরা বলে আফলাতুন কালার। ’
‘আফলাতুন কালার বলবে কেন? আফলাতুন মানে কি সবুজ?’
‘না। আফলাতুন মানে প্লেটো। গ্রিসের দার্শনিক প্লেটো। তাকে আরবরা বলে আফলাতুন। ’
‘গুড গার্ল। প্লেটো কি সবুজ রঙের ছিলেন?’
‘ছিলেন হয়ত। কত বড় দার্শনিক। ’
‘অ। সক্রেটিস তাহলে কী রঙের ছিলেন?’
‘উম্ম্ম্মম্, কমলা!’
‘এত থাকতে কমলা! আচ্ছা। ’

বিদ্যুৎ চমকাল। মেঘ ডাকল।
মেঘকে তারা বলে ‘দেব্তা। ’ দেবতা। তিনশ আটষট্টি কিলোমিটার দূরের সেই শহরের মানুষজন।
ক্লান্ত অমিয়াংশু, মাতাল সহিদুল, এতক্ষণে নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে।
বিন্দুবাসিনী?
ঘুম আসে না বিন্দুবাসিনীর?
একটা মেসেজ লিখে সেন্ড করল।
ki koro,
bindubasini?

সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই দিল বিন্দুবাসিনী।
Apni ki
koren?
ghuman na?
: na. ghum
dhorcena
: keno?
: Tomar kotha
Vabi
: Hi! Hi! Hi!

রিপ্লাই দিল না আর। কল দিল আরেকটা নাম্বারে।

কল ধরেই মেয়েটা বলল, ‘আমি যদি বৃষ্টির জন্মভূমি হই? আপনি কি এখনও ঘুমাননি? নাকি একটা ঘুম দিয়ে উঠেছেন? বৃষ্টি দেখেছেন? বৃষ্টিতে ভিজেছেন? রেইনকোট পরে ভিজেছেন? বৃষ্টি আপনার, কী জানি... শরীর মেপেজুকে দেখেছে? হি! হি! হি!’
‘তুমি এখন কোথায়? আমি যদি এখন তোমার কাছে আসি?’
‘আসেন। আমার ঘরে বৃষ্টির পর কিছু জোনাকি ঢুকে পড়েছে। অন্ধকারে তারা জ্বলছে-নিভছে। ’
‘সত্যি সত্যি আসব। একটা স্যাড নিউজ আছে। ’
‘স্যাড নিউজ? কী?’
‘আমার বউ পালিয়ে গেছে। ’
‘আবু ইয়ামিনের সঙ্গেই তো, নাকি?’
‘হ্যাঁ। ’
‘কবে? কখন?’
‘ঘণ্টাখানেক আগে। ’
‘কিভাবে পালিয়েছে? গাড়ি করে?’
‘হুঁ। ’
‘আপনি কি তাদের চেজ করছেন?’
‘না। ঘরে বসে আছি। ’
‘গুড বয়। সেলিব্রেট করার মতো একটা স্যাড নিউজ। ’
‘আমি আসছি। ’
‘ভ্যান ভ্যানুতি। ’
‘কী?’
‘ইতালিয়ান। বাংলা ওয়েলকাম। ’
‘বাংলা ওয়েলকাম?’
‘স্যরি! স্যরি! হি! হি! হি!’
লাইন কেটে দিল।

পুলিশের চেক পোস্ট।
গাড়ি আটকাল।
পুলিশের এসআই এই রাতেও ডার্কগ্লাস পরে আছে।
তার মতো।
‘রুটিন চেক, স্যার। ’
‘ঠিক আছে। অফিসার, আমি মীর আফসার আলী। মীর গ্রুপ অব...। ’
‘জি, স্যার। জি স্যার। মীর গ্রুপ! স্লামালিকুম, স্যার! আমার শালার এক সম্বন্ধী স্যার আপনার একটা কারখানায় কাজ করে। মানিকনগরের মিল্টন অ্যাপারেলসে। কিউ সি, স্যার। আফাজ উদ্দিন মৃধা। ’
‘আপনার নাম?’
‘আমার নাম স্যার হুমায়ন কবীর। ’
‘হুমায়ন?’
‘জি স্যার, জি স্যার। উনি স্যার... ভাবি?’
‘হ্যাঁ। ’
‘ভাবি তো মনে হয় ঘুমাইতে আছেন, স্যার?’
কাফতানের ওপর ওড়না পরানো। বুক থেকে ওড়না সরে গেছে বউয়ের। শঙ্খসাদা বুক আভাসিত। বউ কি ঘুমাচ্ছে?
হা! হা! হা!
‘হ্যাঁ, অফিসার। ’
‘ঠিক আছে, স্যার। ঠিক আছে, স্যার। ’
কথাবার্তায় ঘুম ভেঙে গেল বউয়ের!
তাকাল বউ।
‘কী হয়েছে?’
‘কিছু না ভাবি, রুটিন চেক আপ। স্যরি, আপনে ঘুমান?’
‘অ। ’
এটা কী হলো!

পুলিশের এসআইও স্কিৎসোফ্রেনিক? কিংবা ক্রিয়েটিভ? উল্টাপাল্টা দেখে? উল্টাপাল্টা শোনে? বউকে তাকাতে দেখেছে। বউ কী বলেছে শুনেছে। উত্তর দিয়েছে। কিভাবে?

‘আচ্ছা স্যার, যান। আমার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন, স্যার। আপনেরা না দেখলে বোঝেন তো, স্যার...? এই যে, স্যার, এই কার্ডে আমার পার্সোনাল দুইটা সেল নম্বরই আছে। যে কোনো সময় কল দিবেন, স্যার। রাত তিনটা হলে রাত তিনটা। বাসায় এখনও ল্যান্ডফোন নেই নাই। নিলে সেই নম্বরও আপনেরে জানাব, স্যার। ’
‘অফিসিয়াল নাম্বার?’
‘আছে স্যার। কার্ডেই আছে। নিচেরটা স্যার। ’
‘থ্যাংক ইউ। ’

ছেড়ে দিল পুলিশ।
ওয়াকিটকি অন করা। পুলিশের এসআই ওয়াকিটকিতে গাবরু মিয়ার কথা রিপিট করল, ‘ক্রেইনস আর ফ্লায়িং। ওভার। ’

আকাশ অন্ধকার। বিদ্যুৎ চমকাল।
দেবতা ডাকলেন।
তিনশ আটষট্টি কিলোমিটার দূরেও কী?
Brishti hochche?
মেসেজ পাঠাল।
বিন্দুবাসিনী রিপ্লাই দিল, Na.
এসি অফ করে জানালা খুলে দিল গাড়ির।
ঠাণ্ডা হাওয়া।
সা সা সা সা।
জানলা খোলা হাওয়ায় চুল উড়ছে বউয়ের।
বউ যদি উড়ে যায়?
কিছু করার আছে?
একটা ফ্লাইওভার দেখা যাচ্ছে।
অন্ধকার ফ্লাইওভার।
মনে হচ্ছে ফ্লাইওভারে নেমে এসেছে অন্ধকার আকাশ।
‘বৃষ্টি! জানালা লক কর। ’
বউ বলল।
ঠিক আছে! এখন যত খুশি কথা বলুক বউ! চোখের মনির সবুজ রং দেখাক। সমস্যা নেই। কোনো সমস্যা নেই। হ্যালুসিনেশন? হোক। স্কিৎসোফ্রেনিকদের হ্যালুসিনেশন হয়। স্কিৎসোফ্রেনিক, ক্রিয়েটিভদের...।
কিন্তু বউ আর কিছু বলল না।
বৃষ্টি। বৃষ্টির ছাঁট।
গাড়ির জানালা লক করে দিল।
এসি অন করল।
গাড়ির কাচ ঝাপসা হয়ে গেল নিমেষে। এত বৃষ্টি। ওয়াইপার চালু করল। এ রকম বৃষ্টির দৃশ্য আছে মেরিলিন মনরোর একটা মুভিতে। সেভেন ইয়ারস ইচ? বাসস্টপে?

৯ম ও শেষ কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।