ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

হাসান আজিজুল হকের আত্মজীবনী | বসন্তের বাতাসের মতো

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ঈদের বিশেষ আয়োজন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
হাসান আজিজুল হকের আত্মজীবনী | বসন্তের বাতাসের মতো

ইউরোপের উত্তর পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ের এই ছোট্ট দেশটা সারা পৃথিবী শাসন করেছে এক সময়ে। আমাদের এই এত বড়ো উপমহাদেশ ভারতবর্ষও শাসন করেছে প্রায় একশ নব্বই বছর।

‘ইংল্যান্ডের ইতিহাস’ পড়লে একরকম সারা পৃথিবীর ইতিহাসই পড়া হয়ে যায়। এই বইটা থেকেই আমি ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, হল্যান্ড এইসব দেশ সম্বন্ধে কিছু কিছু জানতে পেরেছিলাম। তারপর থেকেই ইতিহাসের প্রতি আমার আকর্ষণ বেড়ে গেল। পৃথিবীর ইতিহাস পড়া শিক্ষিত মানুষের জন্যে খুব দরকারি মনে হলো আমার। প্রমথনাথ সেন নামে একজন লিখেছিলেন এই বই। আজও আছে আমার কাছে বইটা। তখনকার দিনের স্কুলের পাঠ্য বইগুলো বড়ো যত্ন করে রেখেছিলাম। বিখ্যাত মানুষরা লিখতেন এইসব বই। মনে হয় তাঁরা শিশু কিশোরদের খুব ভালোবাসতেন।

ইংল্যান্ডের ইতিহাস পড়াতেন গোপী মাস্টারমশাই। তেমন গুছিয়ে পড়াতে পারতেন না কিন্তু অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল তাঁর। তাঁর ইংরেজি বিদ্যের কথা আগেই বলেছি। তিনি আগে থেকেই ধরে নিতেন যে ছাত্ররা সবই জানে। কাজেই বেশি বুঝিয়ে বলার কী দরকার! কতো কাঠখড় পুড়িয়ে, কতো নির্যাতন অত্যাচার সয়ে, কতো রক্ত দিয়ে এইমাত্র কিছুদিন হলো ইংরেজকে এদেশ থেকে বিদায় করতে হয়েছে, মাস্টারমশাই ধরেই নিতেন যে এর সবই ছাত্রদের জানা। তাদের চোখের সামনেই তো ঘটে গেল। কাজেই ইংল্যান্ডের ইতিহাস পড়াচ্ছেন, তাদের রাজা রানীদের কথাই বলবেন—ঐ আর কি, বুঝলি না? বলে তিনি হাতের স্টেটস্ম্যান কাগজটা চোখের সামনে মেলে ধরতেন। তেমন রাগ না হলেও হাতের কঞ্চি দিয়ে দু-এক ঘা বসিয়ে দিতেন ছাত্রদের হাতে পিঠে। আমরা বলতাম গোপী মাস্টারের জ্ঞানগম্যি নেই—মারবি তো মার না, একটু বিবেচনাও কি নেই মাস্টারমশাইয়ের? বাঁশ থেকে কঞ্চিটা কেটে এনেই সেটা তাঁকে দেওয়া হয়েছে। ভয়ংকর সব ধারালো গিঁটগুলো চাঁছাই হয়নি। মাথায় কপালে মারলেই তো ফুটো হয়ে যাবে। কোথায় মারছেন তা পর্যন্ত খেয়াল নেই। হেডমাস্টার অজিতবাবু যে ইংরেজি পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন সে আমাদের ভাগ্যই বলতে হবে। তবে ইংরেজি পড়াতে পড়াতে একবার রবীন্দ্রনাথের কথা উঠে পড়লেই ব্যস্, মাথায় উঠল ইংরেজি, ক্লাশ কাঁপতে লাগল রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তিতে।

টেস্ট পরীক্ষা এসে গেল। এই পরীক্ষাতেই ঠিক হবে ক’জন এলাউ হবে না হবে। কঠিন পরীক্ষা, যারা ‘এলাউ’ হবে তারাই কাটোয়ায় স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষা দিতে পারবে। এবছর পরীক্ষার নাম আর ম্যাট্রিকুলেশন নয়, নাম হবে স্কুল ফাইন্যাল একজামিনেশন। ‘এলাউ’ হলে ছাত্রদের কাটোয়ায় গিয়ে মেস করে থাকতে হবে পরীক্ষার ক’দিন। তারপর লম্বা ছুটি! তবে ‘এলাউ’ হবার পরে তিনমাস কঠিন পড়া—সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত। সকালে বিকেলে হেডমাস্টারমশাই নিজে পড়াবেন—সেখানে একদিনের জন্যেও ফাঁকি চলবে না। মাস্টারমশাইরা বলতেন, পড়ে পড়ে একেবারে দুরস্ত করে ফ্যাল্। স্কুলের সুনাম দুর্নাম সব এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর।

যথারীতি আমিই টেস্টে ফার্স্ট হলাম যদিও নামটা সকলের নিচে। অঙ্কে ফেল! আমি জানতাম স্কুল ফাইন্যাল-পাশ করা আমার জীবনে হবে না। চোদ্দবার পরীক্ষা দিলে চোদ্দবারই ফেল করব অঙ্কে। এতে কোনো ভুল নেই। কিন্তু ফেল করি আর যাই করি, পরীক্ষা তো দিতেই হবে। এখন স্কুলের ক্লাশে আর যাই না—বেলা এগারোটা পর্যন্ত হেডমাস্টারমশাইয়ের ঘরের সামনে কাঁকরওয়ালা ঢিঁবিটায় বসি। ইংরেজির ওপর খুব জোর। ছেলেরা ইংরেজিতেই ফেল করত বেশি। গ্রামারে একটু দুর্বল ছিলাম। খুব কাঁচা ইংরেজি হলেও ভুল খুব একটা লিখতাম না। নোট মুখস্থ না করে ব্যাখ্যা-ট্যাখ্যা, সারাংশ ইত্যাদি নিজেই বেশ লিখতাম। সংস্কৃত গ্রামারটাও একটু সড়োগড়ো হতো। আর ইতিহাসে আমি তো মহাপণ্ডিত। ভূগোলেও আমি মন্দ নই—শুধু ফিজিক্যাল জিওগ্রাফিটায় একটু মুশকিল হতো...

পুরোটা পড়ুন বিশেষ আয়োজনে। অপেক্ষায় থাকুন!



বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।