ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

রবীন্দ্রনাথের ৭৫তম প্রয়াণ দিবস

‘তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৫
‘তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি’

ঢাকা: ২২শে শ্রাবণ। বাঙালির ক্যালেন্ডারে একটি পরিচিত দিন।

১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে পৃথিবী থেকে চির প্রস্থান করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর বহুকাল অতিক্রান্ত হয়েছে। বিলীন হয়েছে অনেক কিছু। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুঞ্জয়ী। বাঙালির প্রতিটি আবেগ আর সূক্ষ্ম অনুভূতিকে স্পর্শ করে আছেন বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ এ কবি।
 
বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে তার সাহিত্য।
বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সঙ্গীতের ভুবনকে বহুমাত্রিক অবদানে সমৃদ্ধ করা মহামানবের ৭৫তম প্রয়াণ দিবস আজ বাইশে শ্রাবণ।

রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) তাকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে বাঙালি জাতি।
 
১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। তার এ প্রাপ্তি বাংলা সাহিত্যকে বিরল গৌরব এনে দেয়।

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ জন্মগ্রহণ করা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজ কর্মের মাধ্যমে সূচনা করে গেছেন একটি কালের। একটি সংস্কৃতির। কৈশোর পেরোনোর আগেই বাংলা সাহিত্যের দিগন্ত বদলে দিতে শুরু করেন তিনি। তার পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হয়েছে বাঙালির শিল্প-সাহিত্য।
বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্য সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে।
 
তার সর্বমোট ৯৫টি ছোট গল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সঙ্কলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের কাব্য সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য- ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোমান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যও কাব্যিক।
 
ভারতের ধ্রুপদ ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে কালোত্তীর্ণ মতামত প্রকাশ করেন।

সাহিত্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গান বাংলা সঙ্গীত ভাণ্ডারকে দারুণভাবে সমৃদ্ধ করেছে। আজকের বদলে যাওয়া সময়েও বিপুল ঐশ্বর্য নিয়ে টিকে আছে রবীন্দ্র সঙ্গীত। এর আবেদন যেন কোনোদিন ফুরোবার নয়। বরং যতো দিন যাচ্ছে ততোই রবীন্দ্র সঙ্গীতের বাণী ও সুরের ইন্দ্রজালে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে বাঙালি। তাদের আবেগ-অনুভূতি কবিগুরুর গানের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। ভারত-শ্রীলঙ্কারও জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা তিনি।

একজন গীতিকারের একসঙ্গে তিনটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনার উদাহরণ পৃথিবীতে আর একটিও নেই।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় সত্তর বছর বয়সে নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে অঙ্কিত তার স্কেচ ও ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উৎসাহে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে। এরপর সমগ্র ইউরোপেই কবির একাধিক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তার আঁকা ছবিতে আধুনিক বিমূর্তধর্মিতাই বেশি প্রস্ফূটিত হয়েছে।

মানবতাবাদী রবীন্দ্রনাথ মানুষের ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল ছিলেন। তার মতে, মানুষই পারে অসুরের উন্মত্ততাকে ধ্বংস করে পৃথিবীতে সুরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। তাই ‘সভ্যতার সঙ্কট’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন- ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। ’

১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সেই উপাধি বর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ।

সমাজের কল্যাণেও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
 
বিভিন্ন প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের মুত্যুর বর্ণনা পাওয়া গেছে এভাবে- আগস্টের প্রথম দিন দুপুরবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের হেঁচকি শুরু হয়। কবি কাতর স্বরে তখন উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, ‘একটা কিছু করো, দেখতে পাচ্ছো না কী রকম কষ্ট পাচ্ছি। ’ পরের দিন হেঁচকি থামানোর জন্য ময়ূরের পালক পুড়িয়ে খাওয়ানো হলেও তাতে কিছুমাত্র লাঘব হল না। আগস্টের ৩ তারিখ থেকে কিডনিও নিঃসাড় হয়ে পড়ে। ৬ আগস্ট রাখি পূর্ণিমার দিন কবিকে পূবদিকে মাথা করে শোয়ানো হল। পরদিন ২২শে শ্রাবণ, ৭ আগস্ট রবীন্দ্রনাথের কানের কাছে মন্ত্র জপ করা হচ্ছে ব্রাহ্ম মন্ত্র ‘শান্তম, শিবম, অদ্বৈতম....’ ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়.....’।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন মৃত্যু পথযাত্রী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন ২২শে শ্রাবণের বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট। কবি চলে গেলেন অমৃত আলোকের নতুন দেশে।
 
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ‘যুদ্ধ এবং বিশ্ব শান্তি’ প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক ড. বেগম আখতার জামান।

বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৫
এডিএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।