ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৭৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৭৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৭২তম কিস্তি
___________________________________


ভয়ে আর কাঁপছে না উইনস্টন। তার চোখও নড়ছে না। একটিই কাজ, সোজা হয়ে থাকা, সোজা হয়ে থাকো, যাতে আঘাত করার জন্য একটি অজুহাতও ওরা না পেয়ে যায়, নিজেকে নিজে বলছে সে। লড়াকু চোয়ালের একজন, চেহারায় মুখখানি ছাড়া সবই যেন লেপ্টে আছে, ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে হাতের মুঠোয় লাঠির গোড়াটি শক্ত করে ধরে নিচ্ছিল। উইনস্টন চোখের দিকে তাকাল তার। মস্তিষ্ক, মুখমণ্ডল আর শরীরের চেয়ে হাতের নগ্ন চেহারাটিই অসহনীয় ঠেকল তার কাছে। লোকটি তার সাদা জিভের মাথাটি ঠিক যেখানে দুটি ঠোঁট থাকার কথা সেখান থেকে বের করে ওর সামনে দিয়ে এগিয়ে গেল। ঠিক তখনই আরেকটি ঝনঝন শব্দ। কেউ একজন কাচের পেপারওয়েটটি টেবিল থেকে তুলে নিয়ে আগুনে চুল্লির ওপর সজোরে মেরেছে। এতে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল ওটি।



একটা থাবা তার পেছনে প্রস্তুত ছিল, আর ঠিক তখনই ভয়াবহ একটি লাথি এসে পড়ল তার গোঁড়ালির ওপর, এতে অনেকটাই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল। একজন এসে ঘুষি বসাল জুলিয়ার নাভীমূলে, কাঠপেন্সিলের মতো ছিটকে মেঝেতে পড়ে গিয়ে নিঃশ্বাস ফিরে পাওয়ার যুদ্ধে রত সে। উইনস্টন তার মাথাটি এক মিলিমিটারও ঘোরানোর সাহস করল না, তবে কৌণিকভাবে জুলিয়ার নীল-ধূসর ভয়ার্ত মুখখানি ঠেরে ঠেরে নজরে আসছে তার।



কোরালের একটি খণ্ড, কেকের ওপর চিনির গোলাপী অঙ্কুরটি ঠিক যেমন হয়, তেমনি গোলাপী রঙের সামান্য একটি টুকরো ছিটকে এসে বিছানার ওপর পড়ল। কী ছোট! ভাবল উইনস্টন, কত ছোট ছিল এটি! অথচ কাচের ওপর থেকে কত বড় দেখাত! একটা থাবা তার পেছনে প্রস্তুত ছিল, আর ঠিক তখনই ভয়াবহ একটি লাথি এসে পড়ল তার গোঁড়ালির ওপর, এতে অনেকটাই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল। একজন এসে ঘুষি বসাল জুলিয়ার নাভীমূলে, কাঠপেন্সিলের মতো ছিটকে মেঝেতে পড়ে গিয়ে নিঃশ্বাস ফিরে পাওয়ার যুদ্ধে রত সে। উইনস্টন তার মাথাটি এক মিলিমিটারও ঘোরানোর সাহস করল না, তবে কৌণিকভাবে জুলিয়ার নীল-ধূসর ভয়ার্ত মুখখানি ঠেরে ঠেরে নজরে আসছে তার। এত ভয়ের মাঝেও নিজের শরীরের ব্যথা ছাপিয়ে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জুলিয়ার নিঃশ্বাস ফিরে পাওয়ার বিষয়টি। নিজের ক্ষেত্রে না হলেও সে বুঝতে পারে কী ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এই আঘাত। কিন্তু এ সব ভাবনার চেয়ে জুলিয়ার শ্বাস নিতে পারাটাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এরপর দুজন মিলে জুলিয়ার হাঁটু আর কাঁধের কাছে ধরে চ্যাংদোলা করে তুলল আর বস্তার মতো ঝুলিয়ে বাইরে নিয়ে গেল। তার নিচের দিকে ঝুলে থাকা হলদেটে দুমড়ে যাওয়া মুখখানি এক নজর দেখতে পেল উইনস্টন। নির্মিলিত চোখ, গালের গোলাপী রুজের আভা তখনও জ্বলজ্বলে। আর সেটাই ছিল তাকে তার শেষ দেখা।

তখনও সটান দাঁড়িয়ে সে। ততক্ষণেও কেউ তার ওপর চড়াও হয়নি। বরং চিন্তাগুলোই নিজে নিজে এসে চড়াও হচ্ছে আর অনিচ্ছাতেও তা মনের মাঝে বিচরণ করে চলেছে। কৌতূহল হলো, ওরা কি মি. চ্যারিংটনকেও ধরে ফেলেছে। তার জানতে ইচ্ছা হলো আঙিনার ওই নারীটিরে তারা কী করেছে। বুঝতে পারছে ভীষণ প্রস্রাবের বেগ চেপেছে, এক ধরনের বিস্ময়বোধও হচ্ছিল, কারণ মোটেই ঘণ্টা দুই কিংবা তিনেক আগে সে কাজটি করেছে। দেখল চুল্লির ওপর রাখা ঘড়িটিতে নয়টা বাজে, মানে একুশ ঘণ্টা। কিন্তু তখনও দিনের আলো রয়েছে। আগস্টের সন্ধ্যাগুলোতে একুশ ঘণ্টায়ও আলো নিভে আসে না? প্রশ্ন জাগল তার মনে। তার মনে হলো সে আর জুলিয়া কি এতদিন সময় গণনায় ভুল করেছে—তারা যে সময়টিকে বিশ ঘণ্টা ত্রিশ মিনিট বলে জেনেছে সেটি আসলে ছিল পরের দিনে সকাল সাড়ে আটটা। ভাবনাটিকে আর সামনে এগুতে দিল না সে। কারণ এই ভাবনায় মজার কিছু নেই।

আরেকটা অপেক্ষাকৃত হালকা পদশব্দ পাওয়া যাচ্ছে সিঁড়িতে। মি. চ্যারিংটনের কক্ষে প্রবেশ। কালো উর্দিধারীদের আচরণে কিছুটা নমনীয়তা লক্ষ্য করা গেল। মি. চ্যারিংটনের চেহারায়ও কিছু একটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত। তার চোখ পড়ে আছে কাচের ভাঙা টুকরোগুলোর ওপর।

‘টুকরোগুলো ওঠাও’—কড়া গলায় উচ্চারণ তার।

একজন ঝুকে পড়ে তার কথা মতো কাজ শুরু করল। খাস লন্ডনি ভাষার ধরণটি আর নেই; উইনস্টন তখনই বুঝে ফেলল কিছুক্ষণ আগে টেলিস্ক্রিনে সে ঠিক কার কণ্ঠটি শুনেছিল। পুরোনো মখমলের জ্যাকেটটি তখনো পরে আছেন মি. চ্যারিংটন, কিন্তু তার চুল যা অনেকটা সাদাই ছিল তা এখন কালো। চোখে চশমাও নেই। উইনস্টনের দিকে এক ঝলক কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি, যেন সে-ই কিনা তা দেখে নিলেন, এরপর আর তার দিকে ফিরেও তাকালেন না। এখনো তাকে মি. চ্যারিংটন বলেই মনে হয়, কিন্তু তিনি আর সেই একই ব্যক্তিটি নন। তার টানটান শরীর, আর মনে হচ্ছে আরো বেশি লম্বা-চওড়া। মুখে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল তাতেই তাকে পুরোপুরি ভিন্ন মানুষ মনে হয়েছিল। কালো ভুরু যুগল এখন কম ঘন আর মুখের দাগগুলো নেই, মুখের সবগুলো দাগই বদলে দেওয়া হয়েছে, নাকটাও অপেক্ষাকৃত ছোট মনে হচ্ছে। এখন তাকে পয়ত্রিশের এক শীতল চেহারার মানুষই মনে হয়। উইনস্টনের মনে হলো, জীবনে এই প্রথম থট পুলিশের একজন সদস্যকে সে দেখল, যে মূলত জ্ঞানী।

তৃতীয় খণ্ডের ১ম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।