পোকা
মাথার ভেতর বাড়ছে তোমার পোকা
তাল মিলিয়ে বাড়ছে বয়স তাদের
তোমার পেটে বাড়বে আমার খোকা
সেও তো পোকা তোমার দুধের স্বাদের।
তোমার পোকা বাড়ছে মাথায়, এরোসলে
কাজ হবে না, কে না জানে এসব কথা এ তল্লাটে
প্রেমে পড়া মানেই জীবন ভাসবে জলে,
ডাঙ্গায় এলেও থাকে না সে, না মাঠে না খাটে!
মাথার ভেতর তোমার নামের, তোমার কামের
পোকারা সব সারি বেঁধে মিলিটারি, যাচ্ছে
এদিক ওদিক যেন পাগল, তোমার নামের
দিব্যি দিয়েই মগজ আমার কেটেকুটে খাচ্ছে।
মাথার ভেতর তুমিই একটা পোকা, দাঁতে
খুব সহজে কাটছো মগজ, বুচ্ছি যন্ত্রণাতে।
এই ঘটনা ভাসিয়ে দিব ভিন্নখাতে, তাতে
যন্ত্রনাটা জায়গা পাবে তোমার দুটো হাতে।
তোমার চূড়ান্ত শারীরিক ছবি
আমি তো সর্বদা আছি রাজপথে জ্বালাই, পোড়াই আন্দোলনে
তোমার আরেকটা নাম ছিল সর্বাগ্রে। আজ সেটা গেছি ভুলে;
অথচ বুঝি নিবৃত হতে চেয়ে আদিগন্ত, এই ঘন জঙ্গল বনে
আজ তোমার মুখচ্ছবিটাই সম্বল করে,
দেড় ক্রোশ হাঁটি, দেড়শ’ যুগ ধরে। এই দীর্ঘ পরিভ্রমণে
যা যা এই থলেতে জমেছে, তৃষিত আমি আজ সায়াহ্নে তার সাথে
কামনার আগুন মিশিয়ে খাচ্ছি এক গ্লাস শীতল জলে গুলে।
তখন মনে পড়ল তোমার আরেকটা নাম ছিল পিতৃপ্রদত্ত আঁতাতে;
সর্বাগ্রে। প্রথমে সেটাই বলেছিলে আমাকে, আজ গেছি ভুলে।
কাতর মাছ ধরতে চেয়ে বা মাছের কাছে ধরা পড়তে চেয়ে কৌশলে;
তুমিও কি পুলিশের এনলিস্টেড দুর্ধর্ষ পলাতক রাজপথসেবী?
কিংবা সেক্সি কোনো সেবিকার বেশে, আজ বর্শি ফেলেছো অন্য মহাজলে?
শরীর ধরে আমি তার সব বুঝি, মন বুঝি না, মন অপাঠ্য, মন গায়েবি।
তুমি নেই তাও তোমার চূড়ান্ত শারীরিক ছবিখানা স্পষ্ট, তুমি নেই তাও।
আজও বিদেহী শহীদের মতো সসম্মানে লেপ্টে আছো আমার দেহে
বৃদ্ধ অন্ধ মানুষের মতো আমি তাই টের পাই, নিশ্চিত, নিঃসন্দেহে
শরীরকে বলেছি আর পাবে না, ভেবে ভেবে যতটা পারো বের করে নাও।
তাই লিখে রাখছি এই শেষ লাইনদ্বয়ে, এই কথাই যে—
“বুকে ভর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে একটা ক্ষুধার্ত, কামুক দুইমুখা সাপ
খুঁজে নিয়ে তাকে কিছু খেতে দাও অথবা দিতে পারো মরে যাবার অভিশাপ।
কামুক তিতির
যেভাবে চলছে জীবন তাকে চলতে দাও
আমি যে পাই না আদর, আমি খাই না দুধ
ভাত। তবু এই বুকে আক্রোশ উগ্র বারুদ;
তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে জ্বলতে দাও।
নিভু নিভু বাতি জ্বলে ক্লান্ত স্মৃতির
মগজে ডাকতে থাকে কামুক তিতির
এঁকে দিতে কামজ্বরে বৃত্ত ইতির;
তাকে তার কথাগুলো সব বলতে দাও।
করুণা পর্দা ওড়ে অন্ধ জানালার
দুচোখ পাহারা দেয়া এ দক্ষ তালার
চাবি হারানোর শোক শেষে হলে উদ্ধার;
তার বুকেতে বারুদ মুখে সলতে দাও।
জেনেছি তো প্রেম-কাম-ঘাম অবিনশ্বর
আজও অসমাধিত প্রান্তিক রহস্য’র
দ্বার খুলে পথ করে দিয়ে দাও অশ্বর;
খুড়ে তাল তুলে তাকেও চলতে দাও।
তুমিও দ্বার খোলো আমি ঢুকতে চাই
বিয়োজনে নয় শুধু সংযুক্তে চাই
আমি বেড়ে চলা দূরত্ব রুখতে চাই;
খেলা শেষে মাতালের মতো টলতে দাও।
বড় হয়ে বুড়ো হব একা একা
জানি আমাকে রাখবে মনে এরকম লোকের অভাব খুব
নতুবা খুব নিঃসঙ্গতা নিয়ে যখন বসে থাকি, দেই ডুব
না কেউ তো আসে না ভাঙ্গাতে ঘুম, কিংবা নিঃসঙ্গতার
তপস্যা ভেঙ্গে দিতে পারে না কেউ। বড় হয় গাছ অপারগতার
আমাদের কি আর হবে না কোনোদিন জানালা, গৃহে, চৌকাঠে দেখা?
রাত থেকে দিন আমরা দুজন কি বড় হয়ে বুড়ো হব একা একা?
জাহাজি ভুলেছে পথ জানি, লাইট হাউজ ভুলে গেছে নাম
হারতে হারতে নিজেকেই ফেলেছি শেষে হারিয়ে,
নতুবা উদ্বায়ু হয়ে শূন্যে মিলিয়েছি আমি ও আমার ঘাম।
জরাগ্রস্ত হয়ে পথেই নেমেছি ফের, ডাকো একবার শুধু একবার যদি তুমি
লিখনিতে নড়ে উঠবে সকল পাতা, জঞ্জাল সমেত এই মনের ব্যাপ্ত বনভূমি।
সদা উদগ্রীব
তুমি চেয়েছিলে খুব পরিত্রাণ
আমি এনেছি বৈপরীত্য ছাপ
তাতে ধুলিস্মাৎ ফুলের বাগান
ধুলোর পাপড়ি, ছাইচাপা তাপ
তুমি চেয়েছিলে এদিক ভীষণ
আমার দুচোখ ছিল সদা ওদিকে
তোমার পায়ের ছাপ মৃত্তিকা মন
আমি হাত দিয়ে ছুঁই শুধু নদীকে
তুমি চেয়েছিলে নিশ্চুপ থাক
আমি শান দেই যত শব্দ করাত
কার দ্বারে বাজে কার স্বরে ডাক
কার আকাশ জুড়ে নামে ভুল রাত
তুমি চেয়েছিলে আমি হই মাটি
তুমি চেয়েছিলে হব ম্লান অণুজীব
তাই তো এখানে শুয়ে পরিপাটি
হৃদয়ে পঁচন রেখে সদা উদগ্রীব
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৫