১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
তৃতীয় খণ্ডের ১৫ম কিস্তি
___________________________________
ও’ব্রায়েন তার বাম হাতটা তুললেন। হাতের পেছনের দিকটা উইনস্টনের দিকে। বুড়ো আঙুলটা গোটানো বাকি চারটি আঙুল সোজা হয়ে আছে।
‘এখানে আমার কয়টি আঙুল তুলেছি, উইনস্টন?’
‘চারটি। ’
‘এখন পার্টি যদি বলে এখানে চারটি নয় পাঁচটি—তাহলে কয়টি?’
‘চারটি। ’
ভয়াবহ একটি ব্যথা শুরুর মধ্য দিয়ে শব্দের উচ্চারণটি শেষ হলো তার। ডায়ালের কাঁটা তখন পঞ্চান্নর ঘরে। উইনস্টনের সারা শরীর থেকে ঘাম যেন ছিটকে বেরিয়ে এলো। বাতাস তার ফুঁসফুঁস বিদীর্ণ করে দিল আর গভীর গোঙানি শুরু হলো, দাঁতগুলো চেপে রেখেও উইনস্টন তা ঠেকাতে পারল না। ও’ব্রায়েন তাকে দেখছেন। চারটি আঙুল তখনও মেলে ধরা। হাতলটি ঘুরিয়ে নিলেন তিনি। এবার ব্যথার সামান্য উপশম হলো মাত্র।
শরীরের যেসব জায়গায় বেঁধে রাখা ছিল সেগুলো এখন ঢিলা। খুব শীত লাগছে। থরথর করে কাঁপছে, কোনোভাবেই থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। দাঁতগুলোও ঠকঠক করছে। চোখের পানি নেমে এসেছে দুই গাল বেয়ে। হঠাৎ একটু সময়ের জন্য ছোট্ট শিশুর মতো ও’ব্রায়েনকে জড়িয়ে ধরল সে। ওর ভারী হাতদুটি দুই কাঁধ জড়িয়ে থাকায় আরাম পেয়েই বুঝি এমনটা করল। আর মন বলছে, ও’ব্রায়েনই তার রক্ষাকর্তা, যে ব্যথা তাকে দেওয়া হচ্ছে ওটা বাইরের চাপ, অন্যের প্ররোচনা। আর ও’ব্রায়েনই সেই ব্যক্তি যিনি তাকে এসব কিছু থেকে বাঁচাবেন।
‘কয়টি আঙুল, উইনস্টন?’
‘চারটি। ’
ডায়ালে কাঁটা ষাটের ঘর ছুঁলো।
‘কয়টি আঙুল, উইনস্টন?’
‘চারটি! চারটি! আর কী বলব আমি? চারটি!’
কাঁটা আবারও বেড়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু এবার সে আর ওদিকে তাকিয়ে নয়। ভারী কঠোর মুখখানি আর চারটি আঙুল তার দৃষ্টি ঢেকে রেখেছে। তার চোখের সামনে আঙুলগুলো বড়, ভারী পিলারের মতো দাঁড়িয়ে, অস্পষ্ট কিছুটা কম্পমানও মনে হচ্ছে। কিন্তু ভ্রান্তিহীনভাবেই সেখানে চারটি আঙুল সে দেখতে পাচ্ছে।
‘কয়টি আঙুল, উইনস্টন?’
‘চারটি, বন্ধ করুন, বন্ধ করুন এসব। যেভাবেই যা কিছুই আপনি করুন না কেনো ওখানে চারটিই আঙুল। চারটি!’
‘কয়টি আঙুল, উইনস্টন?’
‘পাঁচটি! পাঁচটি! পাঁচটি!’
‘না, উইনস্টন, ওই বলে ফায়দা নেই। তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি এখনো ভাবছো ওখানে চারটি। দয়া করে আবার বলবে, কয়টি আঙুল?’
‘চারটি! পাঁচটি! চারটি! আপনার যেটা মনে হয়। আপনি শুধু ওটা বন্ধ করুন, ব্যথা থামান!’
এপর্যায়ে সে বসে আছে। কাঁধ দুটি জড়িয়ে ও’ব্রায়েনের একটি বাহু। কয়েকদণ্ডের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল বুঝি। শরীরের যেসব জায়গায় বেঁধে রাখা ছিল সেগুলো এখন ঢিলা। খুব শীত লাগছে। থরথর করে কাঁপছে, কোনোভাবেই থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। দাঁতগুলোও ঠকঠক করছে। চোখের পানি নেমে এসেছে দুই গাল বেয়ে। হঠাৎ একটু সময়ের জন্য ছোট্ট শিশুর মতো ও’ব্রায়েনকে জড়িয়ে ধরল সে। ওর ভারী হাতদুটি দুই কাঁধ জড়িয়ে থাকায় আরাম পেয়েই বুঝি এমনটা করল। আর মন বলছে, ও’ব্রায়েনই তার রক্ষাকর্তা, যে ব্যথা তাকে দেওয়া হচ্ছে ওটা বাইরের চাপ, অন্যের প্ররোচনা। আর ও’ব্রায়েনই সেই ব্যক্তি যিনি তাকে এসব কিছু থেকে বাঁচাবেন।
‘তুমি ভীষণ ধীর শিখিয়ে, উইনস্টন’—শান্তস্বরে বললেন ও’ব্রায়েন।
‘কিন্তু আমি কী করতে পারি?’ আদুরে গলা তার। ‘চোখের সামনে যা দেখছি তাই তো বলব? দুই আর দুইয়ে চারই হয়। ’
‘কখনো কখনো, উইনস্টন, কখনো কখনো তাতে পাঁচ হয়। কখনো তাতে তিন হয়। আবার কখনো ওগুলো সব মিলে এক হয়ে যায়। তোমাকে আরো কঠোর চেষ্টা করতে হবে। পুরোপুরি পরিশুদ্ধ হয়ে ওঠা সহজ কাজ নয়। ’
উইনস্টনকে বিছানায় শুইয়ে দিলেন তিনি। তার শরীরের বিভিন্ন অংশ আবার শক্ত হয়ে বাঁধা পড়ল। তবে ব্যথা উবে গেছে, আর কাঁপুনিও থেমেছে। এখন তার কেবল একটু দুর্বল লাগছে আর শীত শীত করছে। ও’ব্রায়েন মাথাটি সাদা কোটধারীর দিকে ঘোরালেন, পুরো সময়টি জুড়েই যিনি স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সাদা কোটধারী এবার ঝুঁকে পড়লেন আর উইনস্টনের চোখের দিকে তাকালেন, তার নাড়ি পরীক্ষা করলেন, একটি কান বুকের ওপর চেপে ধরে থাকলেন কিছুটা সময় আর শরীরের এখানে সেখানে টিপে টিপে দেখলেন আর ও’ব্রায়েনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে ইঙ্গিত করলেন।
‘আবার’—বললেন ও’ব্রায়েন।
তৃতীয় খণ্ডের ১৭ম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ১৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।