ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ঈদ-উল-আযহায়—

সিদ্ধার্থ হকের তিনটি কবিতা

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
সিদ্ধার্থ হকের তিনটি কবিতা অলঙ্করণ : খেয়া মেজবা

গ্রাম

ফলক-বিহীন কোনো কবরের অবহেলা আমাকে দিয়েছো।
তাই বহুদিন হয়ে গেল পুষ্প ফুটবার প্রায় জাগি নাই।


হয়ত গভীর গ্রাম ফুটে আছে, পুষ্প ফুটে আছে সাথে।
তার এক মুখে পৃথিবীর সমস্ত পীড়ার ছাপ দেখা যায়।
যদি তাকে সাথে নিয়ে গ্রামে যেতে পারতাম,
তাহলে বিরোধ শেষ হয়ে যেত, হয়ত বা, কালই।
গভীর মৃত্যুর যোগাযোগহীনতার শান্তিও পেতাম মনে হয়।

শহরে আমার শান্তি নাই, শুনেছি তোমার আছে।
গ্রামে কি সবার শান্তি শালিকের মতো? সে মসাংএ গ্রাম-পাখি
আসে আজো, অকাতর ঘুম পায় পুকুর পাড়ের ছায়াদের।
নিজের অজান্তে আমি ঐ অব্যাহত গ্রামে চলে যাই, আর থাকি।
প্রশমিত হয়ে যায় এতকাল নাগরিক না হওয়ার ব্যথা।

ফলে যাতায়াত করে সেও গ্রামাঞ্চলের প্রতি, ধীরে।
ফলক-বিহীন কবরের আচরণে আমার ও বাতাসের
সিএনজি আসে যায়, ছাপ দেয়া হাত ধরে, দেখা না
হওয়ার বাস্তবতা-হারা ভোরে, শিশিরের প্রায়।
সিএনজি চালকের মেয়ে ময়নার ঘুম ভাঙ্গে
ধ্বনি প্রতিধ্বনির মতো গ্রামে, গ্রামে;
তার আর পৃথিবীর ঐকান্তিক মুখ আমি দেখি
ফলক-বিহীন হৃদে কবরের অবহেলা অনুভব করে।

 
ভিক্ষা ২

শহর ঘুমিয়ে গেলে ভিক্ষা করতে বের হই আমি।
রাত্রি-পথে উড়তে থাকা সমুদ্রের বুকশপ, কালো
গাংচিল আমি দেখি। ওষুধ খেয়েছে যারা
তাদেরকে ভাবি। বিষণ্ণতার মুখ তৈরি হয়;
শেষ রাতে সুদূরপ্রসারী ডানা খোলে। টের পাই
নিমগ্ন ভিক্ষুক বলে, আমার মর্যাদা-বোধ নাই।

কতেক অস্থির হই, কাজ ভালো লাগে না আমার।
কোথায় যে তাকে পাব, কোন স্রোতে, রুদ্ধতায়?
আমার দুহাত আমি রাত্রিদিন কোথায় পাতব?
বাতাসে ভাসতে থাকে দিগন্তের শীর্ণ বাঁকা হাত।
সারাদিন ধরে আরো শীর্ণ হয়, বাঁকা হতে থাকে,
সন্ধ্যায় বিষণ্ণ লাগে সারাদিন ভিক্ষা না পেয়ে।
ওষুধে আস্তীর্ণ বন্ধ জানালার সামনে বসে থাকি।

জীবন যৌনতাময়, কিন্তু প্রেমহীন। প্রাণ স্পর্শ
করে প্রেম, যৌনতা করে না। সব প্রাণ সেই সত্য
চুপি চুপি জানে। প্রেম চেয়ে ব্যথা পেতে হয়,
ব্যথা পেলে, প্রেম হীনতার ব্যথা যৌনতা
মীমাংসা করে না। তখন ভিক্ষার গান জগতের
জিগাতলা বাসস্টান্ডে শোনা যায়। আমিও ভিখারি হই—
শূন্যের বন্দরে বসে ক্ষয় করি মন।

মানুষ দাঁড়ায় তিমিরের দ্বারে এসে।
রাত্রির ছায়ায় গিয়ে অদৃশ্য কাঁটার ঘায়ে দুই চোখ তোলে।
তারপর তারাদের পথ পাশে কানা দুই হাত খুলে ধরে।
আমিও ওভাবে অন্ধ করেছি নিজেকে বহু আগে। অন্ধকার
ভোর থেকে শুরু হওয়া মহালয়া হয়ে গেছি আমি,
হয়ে আছি অন্ধকারে ঝুঁকে পরা পুকুরের ডাল,
তবু আমি আমার অসিতবর্ণ কানা হাত দিয়ে
পারি নাই ছুঁতে সেই প্রজ্জ্বলিত জল, কিম্বা হাত।


মৃত্যুর সামান্য গান

অন্য রূপ ভুলে গেছি। শুধু মনে আছে সারি বাঁধা
শব্দহীন গুচ্ছ পুকুরের জল। তাতে চাষ করছিল তার
মৃত্যুমগ্নতা। আমার সময় জ্ঞান, আমার মতোই নিরর্থক।
চাষে ভালো ফল পাই নাই আমি। মাটিকে চিনি নি জোছনায়।
জানি নাই সঠিক রোপণ। কত জন উঠে চলে গেল দূর
চরাচরে। আমার ভিতরে তবু সকল পুকুর,
পারের উদ্ভিদ হাতে ক্রমে ধ্বসে যায়।

অন্যের হৃদয় নিয়ে নিথর বাতাসে বসে আছি।
এই ধীর মৃত্যু ভালো লাগছে না আমার। এই জন্মে
জন্মান্তরের মাথা ধোয়া শেষ হবে মনে হয়।
তার ঐ মৃত্যুমগ্ন যোগাযোগ, প্রেম, প্রতিভা ও
ডাল, গভীর শিকড়, স্থির বা অস্থির বনভূমি,
বেসিক মিলন-স্থান আর লোকবল
আমাকে পৌঁছে দেবে অন্য সেই ভুলে যাওয়া রূপে।

আমার এসব নেই, নেই কোনো সাতন্ত্র্য জঙ্গল,
জোনাকি আমার নষ্ট ঝোঁপঝাড়ে আসে না তো।
কিভাবে নিকটে যাব? তবে আর যাওয়া কি সম্ভব?
কিছুটা সময় তবু চাইব; ভিক্ষায় বিফলতা আছে জেনে।
যেভাবে চাতক চায় আকাশের দিকে, ব্যর্থ মনোরথ,
সেইভাবে, প্রেম নয়, নয় প্রাণ, মৃত্যুই চাইব তার কাছে।
সামান্য দ্রব্যের মতো চাইব মৃত্যুকে অকস্মাৎ
কোনো রাতে, অজানা নাম্বার থেকে টেলিফোন করে...



বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।