ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা | রাসেল রায়হান

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
একগুচ্ছ কবিতা | রাসেল রায়হান

যুবতীকে

একেকটি রাত মানে একেকজন হাস্নাহেনা—পেছনে চতুর প্রেমিকের মতো মুচড়ে মুচড়ে আসা সাপ। স্বভাবতই সরীসৃপ হৃদপিণ্ডের সাথে দ্বন্দ্ব হবার পূর্বমুহূর্তে আমিও ছেটাই ক্লোরোফর্ম—উদ্ধার করে আনি জটাময়ী বেদেনীর বিণ।


যুবতীকে হাস্নাহেনার ঝাড় দেখাতে এসে মনে পড়ে এইসব—ছুটির পর তাবিজ-কবচের অনবরত শব্দ, বিণ, ক্লোরোফর্মভর্তি শৈশবের শিশি—
বয়সের ঘ্রাণ নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে থাকি ক্রমে...


উৎসর্গ

আব্বা, আপনার চশমা ভেঙে গেছে—চশমার সামনে বাসি পত্রিকা নিয়ে চোখ কুঁচকে থাকেন—দু’বছরের একটা শিশুকে অক্ষর চেনান, রাসেল, এইটা ক; এই যে বামে এক দাগ, তারপর কোণাকুনি ডানে, আবার খাড়া উপরে, তারপর ছাতার বাঁটের মতো বাঁকা দাগ; পড় বাবা, কঅঅঅ...
দুই বছরের রাসেল বলে ওঠে আড়ষ্ট জিভে, টঅঅঅ...
আপনি আবার বলেন, আগে ট শিখবি? আচ্ছা, এই দেখ, বড় একটা ছাতার বাঁট নিচের দিকে, আর উপরে ভয়ঙ্কর অজগর। এইটা ট। পড়, টঅঅঅ...
রাসেল প্রথম বর্ণমালা শেখে, ট।

...হে আমার সহিস, অশ্বশালা থেকে চুরি করে আনা এই চামড়ার চাবুক তুলে নিন;—পাঠের নিয়ম ভুলে বসে আছি এই তরতাজা অশ্ব-বয়সে।


উপলব্ধি

এখনো সন্ধ্যে হলে খুব পাই টের
জিরাফের ভাষা শুধু একা জিরাফের


আয়ুর্বেদ

আমার সর্বকনিষ্ঠ কন্যাটির একেক ঝলক হাসিতে আমার আয়ু দুবছর করে বেড়ে যায়। আমিও আয়ু বাড়ানোর লোভে তাকে হাসানোর নানাবিধ কসরত করতে থাকি। নিজের বাড়িতেই বানানো এই যে সার্কাসপার্টি, যেখানে ক্লাউনের দায়িত্ব আমার; দায়িত্ব চতুর দর্শকের—সেও আমার আয়ু বাড়ানোর লোভেই। নিজের সমস্ত মৌলিক জ্ঞান, বই আর অন্তর্জাল-লব্ধ জ্ঞানসমূহ কাজে লাগাই তাকে হাসানোর জন্য।
সেদিন দেখলাম কোনো এক যুবকের হাত ধরে আমার সর্বকনিষ্ঠ কন্যাটি হাসছে। আর টের পাই, থার্মোমিটার বেয়ে সাতান্ন বছর নেমে যাচ্ছে আমার আয়ুর রেখা। মনে আছে, একদিন আমিও কারো আয়ু কমিয়ে দিয়েছিলাম এভাবেই—সাতান্ন বছর!


প্রবাদ

যুদ্ধের জন্য লাল উত্তম—উৎকৃষ্ট কিছু সাপের জিহ্বা কথাগুলি যাকে বলছিল তার সাথে আমারও সখ্য ছিল। একই লয় আমাদের নিয়ে এসেছে এত দূর! শিরা-উপশিরা নিয়ে যেরকম ঝুলে থাকে গর্ভবতী স্তন, সেইভাবে ঝোলার মধ্যে ছিলো বাক্স; বাক্সভর্তি পথ ও মানুষ

সবাই জানত, জীবন্ত একটি পথ প্রস্তুত করার জন্য কিছু ঘাসের মায়া পরিত্যাগ করতেই হয়। পদচারণায় প্রশস্ত হওয়া তেমন একটি পথ দেখে আমরা জেনেছি, মৃতদের মাংস থেকে তৈরি হয় জীবন্ত কীট

...যুদ্ধের ফলাফল যা-ই হোক—নিরীহ পরিখা বলে কিছু নেই এবং যেকোন যুদ্ধের জন্য লাল উত্তম



বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।