হেমন্তের পোষা ট্রাক্টর
এমন তো হতে পারে
হেমন্তে মরে গেছি নিজের মতো
যেন মৃত্যুর কোনো বাছাইকৃত;
ঋতুর আবহে আমি
আপন আনন্দের হাতে রেখে হাত
মরে গেছি—আমিহীন একটা প্রভাত
দেখব ব’লে
হতে পারে ধুলো
উড়িয়ে ছুটছে পোষা ট্রাক্টরগুলো;
বিকেলের আগে আগে
আমার বিলীন হাওয়া একবার
বয়ে গেছে ঠাণ্ডা করে।
সম্ভবত, হেমন্তে হতে পারে এপ্রকার কিছু;
তদ্রূপ, নাও হতে পারে
বেদনাহ
বেদনা তোমার, রগের ভিতরকার বুদ্বুদ শুনি
মৃদু কাতুকুতুসহ টের পাই ফেনায় তোমার
বিলীন হবার ক্ষণটুকু
বলক তোলা, পিচ্ছিল বাষ্প হয়ে—
অভ্যন্তরভাগে আসো।
লালায় ও চর্বিতে দ্রবীভূত হও
টের পাই ছিটকানো চলাচল তোমার
তোমাকে বুঝতে পারি, বুঝি যে
আমাকে বোঝো তুমি
এই বোঝাপড়া, বজ্রের পোড়া ঘ্রাণসহ
আত্মায় প্রবাহিত হয়
হৃদয়ে বেদনা হয়ে ঢুকে পড়া বেদনা তোমার
টের পাই ঢুকে পড়ে বেরুতে না পারার
গোঙানি
বেদনাহ-২
সুপ্রাচীন দিনের আলোর, হঠাৎ নতুন করে
ফুটবার নাটকীয়তায়, অনেক অনেককাল আগেকার
বেদনাগুলির, প্রাত্যহিকতাদের প্রসঙ্গ ফুলে ফেঁপে ওঠে
রৌদ্রকে সংখ্যায় যেকোন বেজোড় বলে
প্রতিভাত হয়; মনে হয় নিকটে কোথাও
কারো পেটে ফুলে ওঠা রুটির ঢেকুর বয়ে গেল
এরকম হতে পারে, এরকম হয়ে থেকে থাকে;
বিশিষ্ট বেদনারা এ জীবনে দৃশ্যত রেলওয়ের বাঁকে
প্রধান প্রধানতম জনপদ পার হয়ে
একা বসে থাকে
ষোল শতকের রোদে শরীর পোহায় তারা
বাসি ভিটামিন ডি-তে শীতের কার্যাবলী
গবেষণা করে
সুপ্রাচীন দিনের আলো, অভূতপূর্ব তব
নব নব সংলাপে, পৃথিবীর প্রভূত কিনার
যতিচিহ্নের অবলুপ্ত ব্যবহারের বেদনাকে জাগিয়ে রাখে
তোমার বিকেলে তুমি
তোমার বিকেলে তুমি কী করো এখন?
প্রতিটি বিকেলবেলা পৃথিবীর পুরাতন ফ্রেন্ড
তোমার কি ফ্রেন্ড আছে কোনো?
তাকে তুমি কী বলো এখন,—কী প্রকারে ডাকো।
শ্মশানের ছাদে আমি একটি বিকেল কাটিয়েছি।
পোড়া কলমির ডালে বুলিয়েছি সস্নেহ আঙুল।
তোমার বিকেলবেলা থমকানো বরইয়ের ডাল;
পুকুরে বরই পড়ার অপূর্ব বুদ্বুদে ঢেকুর।
অথচ বেকুবপ্রায়—থতমত বিষণ্ণতা
হঠাৎ পুকুর থেকে উঠে এসে তোমাকে ধরে।
কী করো তখন তুমি সাদা বিকেলের আলোতে?
মফস্বলে। উপজেলা শহরের টিনশেড নগরায়নে
প্রতিফলিত—বিপরীত দিকে ছোটা আরেকটি
সদ্যপ্রসূত—বিকল্প বিকেলের আলোয়?
প্রতিটি বিকেলবেলা পৃথিবীর সকল লোকের
বয়সের যোগফল হাতে নিয়ে পায়চারিরত।
কী করো যখন সেই পায়চারি শেষ হয়ে আসে।
অনাবিষ্কৃত। পৃথিবীর সুপ্রাচীন বাঁশঝাড়গুলোয়
শিরিশকাগজ নিয়ে এখনো কি হুটহাট
ছুটে যেতে চাও? কী করে কাটাও—
পারস্পরিক
হায় রে জীবন। মিছে ফুল ফুটে আছো সত্যিকারে;
দর্শন চর্চায় নিয়োজিত মনুষ্য-সমাজের ন্যায়
ফুটে আছো শ্বাসনালীতে। রগের ও শিরার যত
অলিগলিতে
পুনরায় বলা হয়ে ওঠে না সবই। কতিপয় বিশিষ্ট
পুনরুক্তির—পায়ের নিকটে আমি বহুকাল বসে
থাকা আছি। ভালো লাগে জীবনের ভালো না লাগা
বসে আছি থেকে থেকে উঠে পড়ারত—ভাঁজ হয়ে
দাঁড়াই। আয়নাতে সে দৃশ্য স্থির হয়ে পড়ে
উঠে পড়ারত তথা বসে পড়ারত এই বিম্বকে
নিদ্রিত করি। তারপর ছায়াহীন ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি
একা। কখনো উল্টোটিও ঘটে;
আমাকে বসিয়ে রেখে বিম্বটি বেরিয়ে পড়ে—
একা একা হেঁটে ফেরে, বিষণ্ণ, মূল-কপি-হীন
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫