নভেম্বরের শুরুতে হাড় কাঁপানো এক শীতের বিকেলে রাঙ্গু শেষতক মারা গেল। তার আগে ঘন ঘন আদুরে হাতে জাদুমাখা পরশ তার হারানো মায়ের কথাই মনে করাল।
নিঃসাড় তুলতুলে দেহটা দীপা তখনও ধরে ছিল। যেমন সত্যিকার মা তার গর্ভজাত শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পরপর আলতো করে ধরে—শরীরের সাথে—ঠিক সেইভাবে। বাচ্চাটি চিরদিনের মতো ডানা মেলে উড়ে গেল অদৃশ্য অন্ধকারে। দীপার চোখ ভিজে উঠল। ভাষাহীন, নীরব কাজল চোখে বাঁধ না মানা অশ্রুরা টপাটপ পড়েই মিলে গেল মৃতদেহের লোমে। দুই হাতে রাঙ্গুকে বুকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদল অনেকক্ষণ। আবাসিক হোটেল রুমের বাইরে তখন ভারী কুয়াশার কুণ্ডলি দ্রুতই নিকষ এক অন্ধকারের সন্ধ্যা নামিয়ে আনল। আমার চলে যাবার সময় হয়েছে। দীপাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই। ‘কাল দুপুরে আবার আসছি। ভালো থেকো’ বলে আমি হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
মধ্যরাতে নীল সাদা ফুল আঁকা হ্যাটটার ভেতর থেকে জেগে উঠল রাঙ্গু। হেঁটে বেড়াল ভারী কম্বলের ওপরে। যার তলায় দুটো উষ্ণ শরীর—পাশাপাশি—একে অন্যকে আবিষ্কারের নেশায় মত্ত। সে আবিষ্কারের নেশা ভেঙ্গে আমরাও খেলতে থাকলাম সেই ছোট্ট রাঙ্গুর সাথে। যে এসেছিল আমাদের প্রণয়ের প্রতীক হয়ে। দীপার একাকীত্বের সঙ্গী হিসেবে। সেদিন রাস্তায় আমিই তো ছানাটিকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে দীপার হাতে দিয়েছিলাম। একটা কাজে আমরা গিয়েছিলাম শেষ সাঁওতাল রাজার বংশধরের বাড়িতে। তার সাথে গল্প করতে। আর ছবি তুলতে। সেদিন আমি কিসের ঘোরে ছানাটাকে তুলে দিয়েছিলাম দীপার হাতে? কেন বলেছিলাম এ তোমার একা জীবনের অন্যতম সঙ্গী?
আমাকে ফিরতে হবে পঞ্চাশ মাইল দূরের আরেক শহরে। সেখানে আমার সন্তানেরা থাকে—পরম যত্নে, স্নেহমাখা আদর ভালোবাসায়। হোটেল থেকে বেরিয়ে মোটর বাইক স্টার্ট করলাম। হেড লাইট জ্বালিয়ে দিলাম মহাসড়কের পাসিং লাইন বরাবর। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে পাসিং লাইনগুলো আমায় সোজা নিয়ে এলো সে শহরে। এখানে আমরা বাস করি বহুকাল ধরে। আমার পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া ছোটবড় ঘরগুলোর সাথে মিলেমিশে—সেই একই বাড়িতে। যেখানে সকলের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সুখ-দুঃখ আর হাসি কান্না আমরা ভাগ করে নিতে শিখেছিলাম কোনো অদৃশ্য উপায়ে।
আমি বাড়ি ফিরলাম রাত বারোটায়। ছোটরা তখন ঘুমিয়েছে। পরিবারে অন্যদের সাথে নিয়মিত কথোপকথন আর গুরুত্বপূর্ণ সাংসারিক আলোচনা শেষ হলো—মনের ভেতর মৃত রাঙ্গুকে জাগিয়ে রেখেই। গত তিনদিন আর তিনরাত আমাদের সাথে থাকা রাঙ্গু—যাকে সাঁওতাল রাজার একমাত্র জীবিত বংশধরের গ্রাম থেকে তুলে এনেছিলাম। সে গ্রামের নাম রঙ্গন গাঁ। আর সে স্মৃতিকে জড়িয়ে দীপা বিড়াল ছানাটির নাম রেখেছিল রাঙ্গু।
আমার চোখে ঘুম নাই। পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বিছানায় আমি তখন আমার পুত্রের চুক চুক করে খাওয়ার শব্দ পাচ্ছি। আর গেল সন্ধ্যায় মরে যাওয়া ছানাটার কোটর ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা চোখদুটো তখন আমার বন্ধ চোখের পাতায়। ভিষণ নীল জ্বলজ্বলে সেই চোখ। আর এই ঘর? আমার গুমোট অস্থিরতায় তখন প্রকট সিদ্ধান্তহীনতা। কস্মিনকালেও আমি এ ঘর—এ বিছানা ছাড়তে পারব না। এ অসম্ভব! এই যে আমার পুত্র—যে মাত্র ক’দিন আগে এই পৃথিবীর আলো দেখেছে। সে তো আমারই আরেক অংশ। তাকে আমি ফেলে যাই কী করে? ও ঘরে আমার আরেক অংশ—যে আমার বড় কন্যা। দিদার সাথে পরম স্নেহ জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুম থেকে জাগলেই যে বাবার জন্য অনেকদিনের নিয়ম মতো অপেক্ষা করবে শুধু একটি মাত্র কথা শোনার জন্য—‘শুভ সকাল মাম্মা’। তাকে ফেলে যাই কী করে? অথচ আমার জন্য অপেক্ষায় আরো একটি ঘর। যে ঘরের স্বপ্নে নিঃসঙ্গ দীপা কয়েকশ’ মাইল দূর থেকে চলে এসেছে। শুধু একটা ঘরের জন্য! রাতটা কাটছিল এক অজানা অস্থিরতায়। বারবার ফিরে আসছে জ্বলজ্বলে নীল চোখ দুটো। মৃত্যুর আবছায়ায় যে চোখ কেবলই বলে যাচ্ছিল,—‘দরজার ওপাশে মা। আমি মায়ের কাছে যাই? আমি মায়ের কাছে যাই?’
“কী হয়েছে! কোনো সমস্যা?” জিজ্ঞেস করতেই টের পেলাম হ্যাপী জেগে আছে। হালকা নীল বাতির আলোয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সে আমাকে লক্ষ্য করে যাচ্ছিল। আমার অস্থিরতা যাতে কোনোভাবে টের না পায়—স্বাভাবিকভাবে বললাম, “না, এমনি। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। ” ঘুম জড়ানো গলায় সে আবারও তলিয়ে গেল। শুধু বলল, “ও। ” যার অর্থ হতে পারে দীর্ঘ গর্ভ ও প্রসবজনিত বিরতিতে অপেক্ষমাণ স্বামীর জন্য স্ত্রীর আপ্তবাক্য—‘ও। এই তো আর কয়েকটা মাত্র দিন। একটু ধৈর্য ধরো আমার প্রাণভোমরা। ’ অথচ হ্যাপী কোনোভাবেই জানলো না তার প্রাণভোমরাটি এখন অন্য কোনো ফুলে। সমস্ত অপেক্ষা আর ধৈর্য-শুঁড় যেখানে বিলীন হয়ে যায় নিষিদ্ধ ফুল আর গোলাপি পাপড়ির অজস্র আকর্ষণে। যার মধুরসে নীল বিষাক্ত হয়েছে প্রাণভোমরাটি। দীপাকে কেবল একটাই কথা বলতে পেরেছে, ‘ইটস আ সুইট নভেম্বর!’
আজ আমার সপ্তাহান্তিক ছুটি। নিয়মমাফিক সকালে আমার কন্যাকে বললাম ‘শুভ সকাল মাম্মা’। কম্বলের ভেতর গুটিয়ে থাকা মেয়ে আঁকিবুকি খাতাটা বালিশের তলা থেকে বের করে আমার দিকে তুলে ধরল। আমি দেখলাম সাদা ক্যানভাসে সে প্যাস্টেল দিয়ে এঁকেছে একটা নাম না জানা বড় পাপড়িওয়ালা ফুল। একেকটা পাপড়ি একেক রঙের। নীল হলুদ সবুজ আর নানা রঙিন। পাশে তারকাখচিত জাদুকাঠি হাতে ছোট্ট পাখায় উড়তে থাকা এক ঝাঁকড়াচুলের ঝলমলে পরী। পরীটি যেন তার নিয়মেই ফুল ফুটিয়ে যাচ্ছে, অবিরত, প্রতি ভোরে। আমার ছোট্ট সোনামনির মতোই ঘন কালো আর ঝাঁকড়া সে চুলগুলো। আমি অভিভূত হয়ে ছবিটা দেখলাম। আর কী আশ্চর্য! সেই পরীর দুটি চোখও নীল জ্বলজ্বলে!
সারাদিন পরিবারের সাথে সপ্তাহান্তিক ছুটি কাটিয়ে আমি কর্মস্থলে ফিরছি। কর্মস্থলে অফিস-ক্যাম্প হাউজের একটা গেস্টরুমে আমার অস্থায়ী রাত-বাস। সেখানে দীপাকে রাখা অসম্ভব বলে শহরের একটা আবাসিক হোটেলে উঠেছি—এই বলে—সে আমার স্ত্রী। আমরা অপেক্ষায় আছি একটা যুতসই বাসা পেয়ে গেলে উঠে যাব। দীপা বলেছিল, একটা ছোট্ট থাকার ঘর থাকলেই চলবে। বিয়েতে দীপার কোনো বিশ্বাস নেই। ওর কথা, আত্মা শুদ্ধ হলেই মানুষ পবিত্র হয়। অথচ আমার আত্মা যে শুদ্ধ নয়। তাই কথামতো দুপুরে ফিরিনি। দীপা আমার খুঁটিনাটি জানে। তবু কেন সে আমাকে বিশ্বাস করেছে? আর আমি সেই লোক যে শেষপর্যন্ত কোনো কথা রাখিনি। না রাঙ্গুর জ্বলজ্বলে নীল চোখের আকুতি। না নিঃসঙ্গ দূর শহর ছেড়ে চলে আসা দীপার চার দেয়ালের একটামাত্র ঘর। যে ঘরটা তার কোনো কালেই ছিল না।
রাস্তাজুড়ে সাদা আর ঘন কুয়াশার ভেতর দিয়ে আমি মোটরবাইকটা চালিয়ে যাচ্ছিলাম যতটা দ্রুত যাওয়া যায়। দীপা নিশ্চয়ই ভেবেছে আমার অপারগতা। আমার ভীরুতা। আমার শঠতা। সে কি জেনে গেছে আমার অপবিত্র আত্মার ভাষা? সে আমাকে ঘৃণা করেছে নিশ্চয়ই। আর বারবার মনে হলো অন্তত ফোন করে একবার বলতে তো পারতাম আমার অপারগতার কথা।
রাত আটটার কিছু পরে আমি হোটেলে এসে পৌঁছালাম। হোটেলের নিজস্ব গ্যারেজটায় মোটরবাইকটা রাখছি, তখন পরিচিত গেটম্যান জানাল, “ম্যাডাম তো সন্ধ্যায় বেরিয়ে গেল। বলল সকালে একটা বাসা খুঁজে পেয়েছে, সেখানে যাচ্ছে। ” আরো জানাল, “কিন্তু এখনো ফিরল না। ” এক অজানা আশঙ্কা আমার হৃদযন্ত্রকে নিস্তব্ধ করে দিতে চাইল। এক পাও সরাতে পারছিলাম না। গেটম্যানকে শুধু বললাম, “দাঁড়াও দেখছি। ”
মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে রেখে গেলাম হোটেলের দোতলায়, রিসেপশনে। আমার উদ্ভ্রান্ত চোখ রিসেপশন টেবিলের ওপারে থাকা চাবির বোর্ডটায়। বোর্ডে ৪০৪ নম্বরের চাবিটা তখনও দুলছিল। রিসেপশন থেকে চাবিটা হাতে নিয়ে দ্রুত হেঁটে উঠে গেলাম রুমে। রুমে তখনও দীপার উষ্ণ শরীরের গন্ধটা আটকে আছে। আর খুঁটিয়ে দেখলাম সাজিয়ে রাখা কামরাটা। না, দীপার ট্রাভেল ব্যাগটা তখনও কাঠের তাকের ভেতরে। দেখলাম টেবিলের ওপর উপুড় করে রাখা নীল সাদা ফুলের ছবি আঁকা হ্যাটটা। যে হ্যাটটা পার্শ্বেলে দীপার গত জন্মদিনে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলাম। এবার যেটা মাথায় পরেই দীপা এই শহরে এসে ঢুকেছিল। এই হ্যাটটাতে করে মুড়িয়ে আমরা রাঙ্গুকে তুলে এনেছিলাম সাঁওতাল রাজার রঙ্গন গাঁয়ের রাস্তা থেকে। হয়ত দুধের বাচ্চাটা ডেরা থেকে কৌতুহলবশতঃ একা তার মাকে খুঁজতে রাস্তায় এসে পড়েছিল। মা তখন তার একদল দুধের বাচ্চা ডেরায় রেখে কোথাও বেরিয়ে গিয়ে থাকবে। হয়ত পেটের দায়ে শিকার ধরছিল রাস্তার অন্যধারে ছোট্ট ঝোপের আড়ালে। সফল শিকারী মা ফিরে এসে কী দেখেছিল? দেখেছিল তার সবচাইতে সবল ছানাটি আর নেই। এপাশ ওপাশ কোনো পাশেই তাকে আর সে খুঁজে পায়নি। তারপর হয়ত সে ছটফট করেছিল। ভেবেছিল শিকারী কোনো জন্তুর হাতে পড়েছিল তার সবচাইতে সবল শিশুটা?
দু’দিন আগে অচেনা বিশ্বাসঘাতক এই শহরে আমরা রাঙ্গুকে নিয়ে এসেছিলাম খুব আদরে। আর স্নেহময় পরশে। প্রথম রাতে সেই সবল ছানাটি বেশ খেলা করতে থাকল দীপার সাথে, আমার সাথে। লেজ নাড়িয়ে ঘন ঘন মিঁউ মিঁউ করল। ছোট ছোট লাফে সে পেরিয়ে যেতে পারল এ কোল থেকে ও কোলে। মাঝে মাঝে ফোলা লোমশ শরীরটা দীপার গায়ে গা ঘেঁষে ওম নিতে থাকল। দীপাও ওকে নকল মা সেজে নানা রকম বুলিতে ভুলিয়ে রাখতে চাইল। দীপা ছড়া কাটল ‘গাঙ শালিকের মা—দিচ্ছে ডিমে তা...’
মধ্যরাতে নীল সাদা ফুল আঁকা হ্যাটটার ভেতর থেকে জেগে উঠল রাঙ্গু। হেঁটে বেড়াল ভারী কম্বলের ওপরে। যার তলায় দুটো উষ্ণ শরীর—পাশাপাশি—একে অন্যকে আবিষ্কারের নেশায় মত্ত। সে আবিষ্কারের নেশা ভেঙ্গে আমরাও খেলতে থাকলাম সেই ছোট্ট রাঙ্গুর সাথে। যে এসেছিল আমাদের প্রণয়ের প্রতীক হয়ে। দীপার একাকীত্বের সঙ্গী হিসেবে। সেদিন রাস্তায় আমিই তো ছানাটিকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে দীপার হাতে দিয়েছিলাম। একটা কাজে আমরা গিয়েছিলাম শেষ সাঁওতাল রাজার বংশধরের বাড়িতে। তার সাথে গল্প করতে। আর ছবি তুলতে। সেদিন আমি কিসের ঘোরে ছানাটাকে তুলে দিয়েছিলাম দীপার হাতে? কেন বলেছিলাম এ তোমার একা জীবনের অন্যতম সঙ্গী? ঠাট্টার হাসিতে দীপাও একটা অসম্ভবকে সম্ভব বানিয়ে বলতে পেরেছিল, “তুমি বলো। আমি বুঝি না বুঝি!”
আমরা দুধ পাউরুটি আর টোস্ট কিনে আনলাম ওকে খাওয়াব বলে। নকল বাবা মায়ের আদর দিতে চেষ্টা করলাম। আমাদের অনিশ্চিত প্রণয়ের এই গোপন কামরায় আমরা মিলিত হয়েছিলাম এক অসীম মুক্তির আনন্দে! নিশ্চিত সংসার ফেলে এসে অনিশ্চিত সংসার খেলায়। সে কি কেবল দেহ আবিষ্কারের নেশায়, নাকি অন্য কিছু?
টেবিলের ওপর নীল সাদা ফুলের ছবি আঁকা হ্যাটটা উপরে তুলতেই দেখলাম নিথর শুকনো আর গুটিয়ে থাকা দেহটা। এখন আর কোনোভাবে যে দেহে তুলতুলে ভাবটা নেই। তার বদলে লোমশ একটা উদভ্রান্ত শরীর। আর ছোট্ট হাঁ করা মুখের ওপর নেতিয়ে পড়া পশমের ফাঁকে খুব তীক্ষ্ণ ও সরু জোড়া দাঁতগুলোকে দেখাচ্ছে অসম্ভব রকমের হিংস্র। আর জ্বলজ্বলে নীল চোখদুটো ফিরে গেছে অক্ষিকোটরে। আমার নিজেকে খুনি মনে হতে লাগল। আর তখনই পেশাদার খুনির মতো আমি নিথর রাঙ্গুর শরীরটাকে লুকিয়ে ফেলতে চাইলাম। দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। হোটেলের জানালা শার্সি একটানে খুলে দিলাম। শীতের একটা সাদা কুণ্ডলি জোর করে ঢুকে পড়ল ঘরে। দ্রুত মৃতদেহটা হ্যাটটায় মুড়িয়ে পেঁচিয়ে ফেললাম। আর সেই খোলা জানালা দিয়ে ওটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম বাইরে। অন্ধকারে। শূন্যে। আমার জানা নাই সে শূন্যে কী ছিল। কোনো বাড়ির ছাদ, নাকি ডোবা জলাশয়, নাকি শহরের কোনো গলি, রাস্তা? নাকি কিছুই না? সেটা জানতেও চাই না।
দরজায় খুব জোরে জোরে ধাক্কা দেওয়ার শব্দ আসছে। আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম! নাকি জেগে ছিলাম? আমার আর কোনো স্মৃতি অবশিষ্ট নেই নাকি? হ্যাঁ, আমি তো হোটেলরুমে। দীপার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু সে কি আর ফিরে আসে নাই? এই এত রাত অবধি সে কোথায় আছে? আমি শুনতে পারছি দরজার ওপাশ থেকে একসাথে অনেকগুলো মানুষের আনাগোনা আর ফিসফাস শোনা যাচ্ছে। সবাই দরজার ওপারে। জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে, কারা ওরা? ওরা কি কোনো কর্তৃপক্ষ? অথবা দারোগা পুলিশ? দীপা কি আবার ফিরে এসেছে? নাকি চলে গিয়েছে অন্য কোনো ঘরের টানে? অন্য কোথাও—যেখানে পবিত্র আত্মার মানুষ থাকে!
আমি আর কিছুই জানতে চাই না। দরজা ভেঙ্গে ফেললে ফেলুক। তবু আমি দরজার ভেতরেই থাকতে চাই। দরজার এপাশে আবছায়ায়, জ্বলজ্বলে নীল দুটি চোখের সঙ্গী হয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫