ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আলাদীনের গ্রামে | আলতাফ শাহনেওয়াজ

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
আলাদীনের গ্রামে | আলতাফ শাহনেওয়াজ

১.
গোপন সুখের কথা বিভূতিরা জানে।
গ্রাম ঘুরে ছল জাগা কাতর শরীর
খুঁজে পায় দমকল।

পাশের পাহাড়ে
তার কলঙ্কটি থাকে। সে আমার বিভা
প্ররোচিত কলঘরে নারীর মুহূর্ত
করেছে ধারণ আর মেপেছে অবোধ্য
স্তন—আঙুরের পাশে জাগিল যে আলো
সূর্যাস্তে ডুবুরি তারা। ঢেউ আসে, এলো...

তোমাদের ঘরে গিয়ে এ কথা সে কথা—
এরপর সেই ঢেউ ভিজিয়েছে জল
শানের ঘাটলাগুলো। না-করো স্বীকার
আজ, ঘটিবাটি ভেসে তবু ফের আসো
আলাদীনদের গ্রামে। এ পথ চেনো না
কুটিলা, নেমেছো জন্মে—বিভূতি মুহূর্তে...

২.
তোমার উদ্ধার শেষ, দীনে দয়া দাও।
প্যারাসুট হাতে একা মাটিতে পড়েছো
লাফিয়ে নেমেছো চরে। পতনশীলা হে,
বেপথু বাজারে গিয়ে কয়টি কানন
ঘোরা হলো? পত্রসখা, প্রতিটি শয্যায়
খাপখোলা ছিল মোহ। গুঞ্জনে ভ্রমর
আসে নাই? ডেকে গেল বাসনারা, শিস
বাজিয়ে নায়ক দল বলে হুঁশিয়ার!

দেহে আরো গিরিখাদ। গভীর পর্বতে
ভেতরে হারালে পথ, ও ভাস্কো দা গামা
পর্তুগিজ এসেছিল। ম্যাপ হাতে তারা
দূরের মোকাম খোঁজে—সেই দেশ কোথা!
তোমামধ্যে সৌরবর্ষ। হেথা ঘোরে দীন,
আড়ালে ফুটিল দেহ...তরি ভেসে যায়...

৩.
আঙুল কেঁপেছে শুধু টুকরো বাতাসে
কানাকানি ওঠে তাই কানা কলসিতে,
ঘাট থেকে জলে নামে অচেনা পুরুষ
তাকে জাদুটোনা দাও সখি-প্রেতেনিরা।
আরো চলিয়াছে যারা এ পথে ঝঞ্ঝায়
তরঙ্গে বহিল জল সে আসিবে বলে...
সব দেখে রমণীর বুকে বাড়ে পলি
দুধ-ধানে হাওয়া লাগে, কুপি নিভে যায়

ফিরে আসে বাঁশঝাড়, বধুটি দাঁড়ানো
রাত ঘন হলো তাই কলসিটি খালি,
কড়িতে কুলটা হাওয়া...কথা উচাটন
ডুবে যায় অন্ধকূপে—জানে পলিমাটি।
এর বেশি বীজধান কিভাবে লিখিব,
প্রতিদানে চাও যদি ক্রুশের মোহর...

৪.
ভাষাহীন গ্রামে তুমি অন্ধ আলাদীন
আগেই তৃষিত ছিলে তিষ্ঠ তারপর
বক্ষজুড়ে ছাতি ফাঁটে—পানির চিৎকার,
জলে কোনো নদী নেই, তিরে বিঁধে আছো!
তোমার ভেতরে একা বসে নমরুদ
জ্বেলে দেয় অষ্টধাতু, মোমের রমণী,
আটঘাট বেঁধে সেই আলোপথ ধরে
এখনো অনেক ক্রোশ...চল গেঁয়োভূত...

ফিরে এসো খেলাচ্ছলে আপন আড়ালে
পিপাসা তোমার মধ্যে দুই চক্ষু মেলে
আমার কাহিনীকার—লেখে পানিফল।
ওই ফল খেতে গিয়ে সহসা আবার
মিতালি-দোসর তুমি এসো আলাদীন,
এই দেহ ফুলগাছ, কাঁটা হয়ে বসো।

৫.
গভীর যমুনা যদি শাস্ত্র-মতে দোলে
নদীতে বসিয়ে দিও বাক্য মুখোমুখি।
খেয়াপার হবে কারা, কাদের প্রস্থান?
তোমাকে জানাতে হবে ফিরতি চিঠিতে।
আবার আলোক বর্গি, চক্ষুসহ জ্বলে
ঘূর্ণিপথে বলে তারা, ‘কানাগলি ছেড়ে
দর্জির দোকানে বসো। থাকো চুপচাপ
নিয়তি ডালিমে একা, জেনানা মহলে। ’
 
তোমাকে বুঝতে হবে মঞ্জুরিত সব
কথার ভেতরে আছে বোবা নিঃসঙ্গতা
আড়েঠাড়ে আছে গাঢ় অনর্থের বন,
সেই বনে কাঠ কাটে অচেনা কাঠুরে।
দিন শেষে কাঠ নিয়ে গ্রামে সে পৌঁছায়;
তুমি পথে বাক্যহীন ফোয়ারা ছোটাও...



বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।